পথকুকুর নিয়ে কী বলছেন বিচারপতি, আইনজীবী, সেলিব্রিটিরা
১৪ আগস্ট ২০২৫পথকুকুর নিয়ে আবেদনের শুনানির জন্য বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি সন্দীপ মেহতা ও বিচারপতি এম ভি আঞ্জারিয়াকে নিয়ে তিন বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। গত সোমবার বিচারপতি পাদরিওয়ালা ও বিচারপতি মহাদেবনের বেঞ্চ আট সপ্তাহের মধ্যে দিল্লির সব পথকুকুরকে রাস্তা থেকে তুলে আশ্রয়স্থলে রাখার নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশ বিচার করে দেখবে এই বৃহত্তর বেঞ্চ। বৃহস্পতিবার সেই বেঞ্চে মামলার শুনানি হলো।
কী বললেন বিচারপতিরা?
বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ হলো, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। তারা কোনো নিয়ম রূপায়ণ করে না। তারা সমস্যাটা বাড়তে দেয়। তাই আজ এই সমস্যা হয়েছে। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে এবং পশুপ্রেমীরা কুকুরদের স্বার্থরক্ষা করতে চাইছেন।
বিচারপতি নাথ বলেছেন, ''যারা এখানে আবেদন নিয়ে এসেছেন, তাদের সকলের উচিত দায়িত্ব নেওয়া।''
তবে শুনানি হলেও বিচারপতিরা তাদের রায়দান স্থগিত রেখেছেন।
সরকারের তরফে যা বলা হলো
দিল্লি সরকারের পক্ষে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা বলেছেন, ''বাচ্চারা কুকুরের কামড়ে মারা যাচ্ছে। স্টেরিলাইজেশন করে সমস্যার সমাধান করা যাবে না। ভারতে প্রতিবছর ৩৭ লাখ মানুষকে কুকুর কামড়ায়। গড়ে ১০ হাজার মানুষ একদিনে কুকুরের কামড় খান। ৩০৫ জন জলাতঙ্কে মারা গেছেন। বিশ্বস্বাস্থ্য মতে, সংখ্যাটা আরো বেশি।''
তিনি বলেছেন, ''কুকুরদের মারা হবে না, তবে তাদের আলাদা করা হবে। বাবা-মারা বাচ্চাদের খেলতে যেতে দিতে পারছেন না। বাচ্চা মেয়েদের কামড়ে শেষ করে দিচ্ছে। তার মতে, পরিস্থিতি এখন এরকম যে, একটা ছোট গোষ্ঠীর প্রবলভাবে সোচ্চার বিরোধিতা করছে এবং অধিকাংশ মানুষের কষ্টের মধ্যে আছে। আদালতকে এখানে হস্তক্ষেপ করতে হবে।''
তার যুক্তি, ''কেউই পশুদের ঘৃণা করে না। কুকুরদের একশটি প্রজাতির মধ্যে চারটি বিষাক্ত। তাদের বাড়িতে রাখা হয় না।''
আবেদনকারীদের বক্তব্য
প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, ''কুকুরদের জন্য পুরসভার কোনো শেল্টার নেই। তাহলে কোথায় পথকুকুরদের রাখা হবে? দুই বিচারপতির বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছে, তা স্থগিত করা উচিত। লাখ লাখ কুকুরের ভালো থাকার জন্য এটা করা দরকার।''
সিবাল বলেন, ''স্টেরিলাইজ করার পর কুকুরগুলো যাবে কোথায়? এমনিতে কুকুর একটা অঞ্চলের মধ্যে থাকতে ভালোবাসে। তাদের সবাইকে এক জায়গায় রাখা উচিত নয়। রাখা হলে মানুষ ও কুকুরের সংঘাত আরো বাড়বে।''
আরেক প্রবীণ আইনজীবী অভিষেক মণু সিংভি বলেন, ''২০২২ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত দিল্লি, গোয়া ও রাজস্থানে জলাতঙ্কে কেউ মারা যায়নি। দুই সপ্তাহ আগে সংসদে সরকার এই তথ্য দিয়েছে। তার মতে, যদি আশ্রয়স্থল থাকতো, তাহলে দুই বিচারপতির বেঞ্চের নির্দেশ পালন করা যেতো।''
তারকারা যা বলছেন
বলিউড তারকা জাহ্নবী কাপুর ও বরুণ ধাওয়ান ইনস্টাগ্রামে পোস্ট শেয়ার করা বলেছেন, ''একটা সমস্যার মোকাবিলায় সবাইকে খাঁচাবন্দি করে দেওয়াটা কোনো সমাধান নয়। ওরা যাদের ভয় পাচ্ছে, আমরা তাদের বলি হৃদস্পন্দন। সুপ্রিম কোর্ট বলছে, সব পথকুকুরকে খাঁচাবন্দি করে রাখ। প্রতিদিন সকালে কোনো সূর্যালোক নয়, স্বাধীনতা নয়, পরিচিত মুখের অভিনন্দন নয়। ওরা শুধু পথকুকুর নয়, ওরা চায়ের দোকানে এক টুকরো বিস্কিটের জন্য অপেক্ষা করে, বাচ্চারা এলে ল্যাজ নাড়ে, ওরা শীতের উষ্ণতা, ওরা দোকানদের কাছে রাতের পাহারাদার।''
গায়িকা চিন্ময়ী শ্রীপদা এক্স-এ লিখেছেন, ''আমি সব কুকুরের ফাঁসির আদেশের কথা পড়লাম। আশ্রয়স্থল দরকার। কুকুর হলো কালভৈরবের বাহন। তিনিই হস্তক্ষেপ করুন।''
পরিচালক সিদ্ধার্থ আনন্দের মতে, ''তাদের প্রতি আর কোনো মমত্ববোধ রইলো না। তাদের কে খেতে দেবে? রাস্তায় তো কোনো না কোনো দয়ালু মানুষ তাদের খাবার দেয়। শেল্টারে তো তারা না খেয়ে থাকবে। আমাদের এই গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।''
অভিনেত্রী রবিনা ট্যান্ডন মনে করেন, ''পথকুকুরের সংখ্যা বেড়়ে যাওয়ার দায় কুকুরদের নয়। দায়টা পুর কর্তৃপক্ষের। তারা স্টেরিলাইজেশন ও ভ্যাকসিনাইজেশন করে না। এটাই এখন করা দরকার।''
অভিনেতা জন আব্রাহাম প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইকে চিঠি লিখে বলেছেন, ''এরা পথকুকুর নয়, বরং এদের কমিউনিটি ডগ বলা যেতে পারে। তাদের অনেকেই ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে।''
অভিনেতা সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ''রাস্তার কুকুর কোনো সমস্যা নয়। তারা ভিকটিম। একটা শহরের আত্মা কেবল মানুষ নয়, এই ভাষাহীমদের প্রতি আমরা কীরকম ব্যবহার করছি, সেটাও বড় ব্যাপার।''
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)