নুরেমবার্গের চিড়িয়াখানায় বেবুন-হত্যা, বিক্ষোভ
৩০ জুলাই ২০২৫চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চিড়িয়াখানায় ২৫টি বেবুন রাখার পরিসর রয়েছে, কিন্তু বেবুনের সংখ্যা বেড়ে ৪০টি হয়ে যায়৷ অন্য চিড়িয়াখানায় তাদের সরানোর উপায় ছিল না৷ নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে প্রাণীগুলি আহতও হচ্ছিল৷ বাধ্য হয়েই এমন নির্মম সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে দাবি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের৷
এই ঘটনার পরেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে জার্মানির বন্য প্রাণী রক্ষা সংগঠনগুলি৷ চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেছে তারা৷ পাশাপাশি, চিড়িয়াখানার প্রজনন নীতিগুলি পুনর্বিবেচনা করারও দাবি জানানো হয়েছে৷
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই পরিস্থিতির আগাম আভাস দিয়েছিলেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ৷ তখন জানানো হয়েছিল বেবুনদের এই বাসস্থান-সঙ্কটের কথাও৷ চিড়িয়াখানার কর্মকর্তা ডাগ এনকের দাবি, বেবুনদের থাকার জায়গা বাড়ানোর উপায় ছিল না৷ প্রাণীগুলোকে প্রকৃতিতে বা অরণ্যে ছেড়ে দেওয়াও বিপজ্জনক৷ অগত্যা মেরে ফেলার সিদ্ধান্তই নিতে হয়েছে৷
পশুপ্রেমীদের বিক্ষোভ, গ্রেফতার ৭
নুরেমবার্গ চিড়িয়াখানার এই পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রাণী রক্ষা সংগঠনগুলি৷ প্রশ্ন তুলেছে চিড়িয়াখানার পরিচালনা ও পরিবেশ নিয়েও৷ ‘প্রো ওয়াইল্ডলাইফ' নামের একটি সংগঠনের দাবি, ‘‘চিড়িয়াখানা কয়েক দশক ধরে দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রজননের নীতি বজায় রেখেছে৷ এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ায় নিরপরাধ বেবুনগুলোকে মরতে হলো৷ অথচ, নীতি ঠিক থাকলেই এই হত্যাকাণ্ড এড়ানো যেতো৷'' এই ঘটনায় চিড়িয়াখানার সামনে বিক্ষোভ দেখান পশুপ্রেমীরা৷ জড়ো হন বেবুনের এনক্লোজ়ারের সামনেও৷ সাত জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷
এদিকে ‘জার্মান লিগ্যাল অ্যাসোসিয়েশন ফর অ্যানিমাল প্রোটেকশন ল'-এর প্রধান ক্রিস্টোফ মাইস্যাকের কথায়, ‘‘যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকলে মেরুদণ্ডী প্রাণীদের হত্যার অনুমোদন রয়েছে আইনে৷'' চিড়িয়াখানার মূল কর্মকর্তা এনকেও প্রায় এক সুরে জানিয়েছেন, ‘ইউরোপীয় অ্যাসোসিয়েশন অব জ়ু অ্যান্ড অ্যাকোয়ারিয়া'-র ঠিক করে দেওয়া নীতি অনুসারেই পুরো বিষয়টি করা হয়েছে৷ যদিও পশুপ্রেমীদের প্রশ্ন, ‘যুক্তিসঙ্গত কারণ' আসলে কোনটা সেটা কে ঠিক করে দেবে? এই হত্যার পিছনে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের নীতির ব্যর্থতা কি আসল কারণ নয়?
যেভাবে মৃত্যু হলো ১২টি বেবুনের
চিড়িয়াখানায় পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ১২টি গিনি-বেবুনকে প্রথমে গুলি করে হত্যা করা হয়, তারপর ফেলে দেয়া হয় সিংহ এবং বাঘের খাঁচায়৷ জার্মান প্রাণী সুরক্ষা সংগঠন (ডয়চে টিয়ার্সশুটজবুন্ড) একটি বিবৃতিতে বলেছে, নুরেমবার্গ চিড়িয়াখানা এভাবে প্রাণীহত্যার ট্যাবু-বিষয়টি ভেঙে দিলো৷ পরবর্তীতে অন্য প্রাণীর ক্ষেত্রেও একই জিনিস ঘটতে পারে বলে মনে করে তারা৷ চিড়িয়াখানার মুখ্য জীববিজ্ঞানী ইয়র্গ বেকমান বলেছেন, অন্তঃসত্ত্বা বা গবেষণার জন্য পর্যবেক্ষণে রাখা প্রাণীকে তো মারা হয়নি৷ আর গুলিতে নিহত বেবুনগুলি মাংশাসী প্রাণীর খাদ্যে পরিণত হয়েছে৷
চিড়িয়াখানার পরিচালক এনকের পাল্টা প্রশ্ন, চিড়িয়াখানায় অনেক সময়েই কিছু প্রাণীকে বাঘের বা সিংহের খাঁচায় নামিয়ে দেওয়া হয়৷ কোনো কোনো প্রাণীর প্রজনন করানো হয় সেই কারণেও৷ বিষয়টি নিয়ে কখনো এত প্রতিবাদ হয়নি৷ মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণেই কি এত বিক্ষোভ?
জন শেলটন/এসটি