নতুন প্রজন্ম দার্জিলিংয়ের চা বাগানে নেই
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বাড়িয়েছে সরকার। তাতেও পরবর্তী প্রজন্ম চা বাগানে যেতে চাইছে না।
পাহাড় থেকে ডুয়ার্স
দার্জিলিংয়ের পাহাড় থেকে তরাই এবং ডুয়ার্স-- উত্তরবঙ্গের দীর্ঘ এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে আছে চা বাগান। কয়েকশ ছোট-বড় চা বাগান আছে এখানে। মাঝে বহু চা বাগান বন্ধ হয়ে গেছিল। এখন হাতেগোনা কয়েকটি বাদ দিলে প্রায় সবক'টি খুলেছে। কিন্তু সমস্যার শেষ হয়নি।
ব্রিটিশ সময় থেকে
এই অঞ্চলে চা বাগান বসিয়েছিল ব্রিটিশরা। শ্রমিক নিয়ে এসেছিল ছোটনাগপুর, নেপাল থেকে। চা বস্তিতে এখনো ওই অঞ্চলের শ্রমিকেরাই বেশি। চা শ্রমিকদের নিজস্ব সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।
একসময় লাভ ছিল
দার্জিলিং চা এখনো ভুবনবিখ্যাত। কিন্তু প্রতিযোগিতা বেড়েছে। সেই তুলনায় চায়ের দাম বাড়েনি। আর তার কোপ গিয়ে পড়েছে শ্রমিকদের উপর। একসময় শ্রমিকদের জন্য বাড়ি, হাসপাতাল, রেশন, বাচ্চাদের স্কুল-- সব দায়িত্ব নিতেন চা মালিকেরা। এখন খাতায় কলমে দায়িত্ব নিলেও কাজের কাজ হয় না।
দৈনিক মজুরি
সুযোগ-সুবিধা কমছে। অথচ সেই তুলনায় দৈনিক মজুরি বাড়ছে না। এই নিয়ে চা শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি সরকার দৈনিক ২০২ টাকা থেকে দৈনিক মজুরি ২৩২ টাকা করেছে। কিন্তু তাতেও সংসার চলছে না শ্রমিকদের।
একাধিক আন্দোলন
বাম এবং কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনগুলি একসঙ্গে লড়াই করছে। তাদের বক্তব্য, একসময় বংশ পরম্পরায় চা বাগানের মালিকেরা বাগান চালাতেন। এখন তা ভুঁইফোড় ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাচ্ছে। সে কারণেই শ্রমিকদের কথা কেউ ভাবছে না।
পরবর্তী প্রজন্ম নেই
চা শ্রমিকদের বর্তমান প্রজন্ম বাগানে কাজ করতে উৎসাহী নয়। বাইরের রাজ্যে মজুরের কাজ নিয়ে চলে যাচ্ছেন তারা। কেউ গাড়ি চালাচ্ছেন। বহু মেয়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি চা বাগান নিয়ে কাজ করা একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের।
নেই পিএফ-গ্র্যাচুইটি
নতুন মালিকেরা এসে বাগান খুলছেন। কিন্তু পুরনো শ্রমিকদের বকেয়া প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি তারা দিচ্ছেন না। অবসর নেওয়ার পর মৃত্যু হচ্ছে শ্রমিকদের কিন্তু পাওনা টাকা পাচ্ছেন না তারা।
আলোর নীচে অন্ধকার
বাগান খুলছে। শ্রমিকেরা কাজ ফিরে পাচ্ছেন। কিন্তু তাদের মন ভেঙে গেছে। অপরিসীম পরিশ্রমের পর ন্যায্য টাকা নেই। প্রয়োজনীয় পরিষেবা নেই। তাই বাগান খুললেও হাসি ফোটেনি চা শ্রমিকদের মুখে।