‘দুর্নীতিতে ভরে গেছে দেশ’
৩১ আগস্ট ২০১১সাতই মার্চ সরাসরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ভাষণ শুনতে পারেননি মোল্লা নবুয়ত আলী৷ রেডিওতে ঐতিহাসিক সেই ভাষণ সরাসরি প্রচার করা হয়নি৷ কিন্তু অন্যভাবে নবুয়তরা আন্দোলনের খবর শুনেছিলেন৷ মাগুরাতেও তাই চলেছে আন্দোলন, চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি৷
নিয়মিত বাহিনী
নবুয়ত তখন মাগুরার একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন৷ তিনি জানতেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম অনিবার্য৷ তাই, লড়াই'এ অংশ নেওয়ার জন্য গড়ে তুললেন একটি দল৷ যুদ্ধ শুরুর পর সেই দল নিয়ে তিনি অবস্থান করেছেন মাগুরাতেই৷ মাঝে মাঝে ভারতে গিয়েছেন যুদ্ধের কাজে৷ তবে আলাদাভাবে কোন গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেননি নবুয়ত৷ ডয়চে ভেলেকে এই বীর সেনা বলেন, আমরা নিজেদের এলাকায় প্রশিক্ষণ নিয়ে নিয়মিত বাহিনী হিসেবে তৈরি হয়েছিলাম৷ সব গেরিলারা আমাদের কাছে এসে আশ্রয় নেয়৷ আমরা এলকা মুক্ত রেখেছিলাম৷
শ্রীপুরের লড়াই
নবুয়ত এবং তাঁর দল একাধিকবার পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলা করেছেন৷ কখনো সফলতা, কখনো ক্ষনিকের জন্য পিছুহটা৷ নবুয়ত এখনো মনে করতে পারেন, শ্রীপুরের এক লড়াইয়ের কথা৷ মাত্র তিনজন মুক্তিসেনাকে সঙ্গে নিয়ে পাক বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি৷ নবুয়ত বলেন, শ্রীপুরের কুমারখালি নদীর কাছে আমি তিনজন ইপিআর সেনা নিয়ে পাকিস্তানিদের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করি৷ এরপর আমাদের দলের বাকিরা গোলাগুলির শব্দ শুনে যুদ্ধক্ষেত্রে হাজির হয়৷ দুই-তিনদিন ধরে চলেছিল সেই লড়াই৷
মাগুরা দখল
শুধু পাক বাহিনী নয়, নবুয়তরা লড়েছেন রাজাকারদের বিরুদ্ধেও৷ মুক্তিসেনাদের চেষ্টা ছিল, যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব মাগুরা দখল৷ ডিসেম্বরে মিত্র বাহিনী মুক্তিসেনাদের সেই চেষ্টাকে সহজ করে দেয়৷ একাত্তরের সাতই ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় মাগুরা৷ তিনি বলেন, আমরা প্রায়ই মাগুরা দখলের চেষ্টা করতাম৷ ডিসেম্বরে মিত্রবাহিনীর সহায়তায় আমরা মাগুরা শত্রুমুক্ত করি৷
দেশগড়ায় সহায়তা
স্বাধীনতার পর নবুয়ত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ নতুন করে গড়ায় মনোযোগী হন৷ তিনি সরকারি ত্রাণ কর্মকাণ্ডে অংশ নেন৷ কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মৃত্যুর পর সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায়৷ নবুয়ত ফিরে যান শিক্ষকতায়৷ এরপর সক্রিয় রাজনীতি করেছেন তিনি৷ বর্তমানে স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পর নবুয়ত জানালেন, দুর্নীতিতে ভরে গেছে দেশ৷ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশ্য ছিল সোনার বাংলা গড়ার৷ তিনি বেঁচে থাকলে সোনার বাংলাই হয়ত হতো৷ বর্তমানে ‘করাপশন'-এ ভরে গেছে দেশ৷
বর্তমানে মোল্লা নবুয়ত আলী'র বয়স ৭৮ বছর৷ এই বীর সেনা এবার দেশ গড়ার দায়িত্ব তরুণ প্রজন্মের কাঁধে তুলে দিতে চান৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক