দীপাবলির বাজি এবং দূষণ
কালীপুজোর পর জমে উঠেছে কলকাতার সবুজ বাজির বাজার। আদৌ কি পরিবেশবান্ধব বাজি হয়?
দুইবছর পর বাজিবাজার
করোনা অতিমারিতে গত দুই বছরে বাজি-বাজার বসার অনুমতি দেওয়া হয়নি কলকাতায়। আতসবাজির আতুরঘর হিসেবে পরিচিত নুঙ্গি, চাম্পাহাটির মত জায়গাগুলোয় খোলা ছিল অল্প কিছু বাজির দোকান।
টলি থেকে টালা
তবে পরিস্থিতি বদলেছে এই বছর। প্রশাসনিক তত্বাবধানে কলকাতা শহরে আগে যে বাজির বাজার বসতো, এই বছর তা আবারও বসেছে। টালা, বেহালা এবং কালিকাপুরে চলছে ‘সরকারি’ বাজির বাজার। এছাড়াও তৃণমূল আতসবাজি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের উদ্যোগেও চলছে নানান বাজির বাজার।
শব্দদূষণ এবং মাত্রা
এ রাজ্যে শব্দবাজির নির্ধারিত মাত্রা ৯০ ডেসিবেল। তবে পরিবেশবিদদের মতে এমন কোনও শব্দবাজি হয় না, যার আওয়াজ ৯০ ডেসিবেলের কম। বাজি বিক্রেতাদের অভিযোগ, সারা ভারতবর্ষে যেখানে শব্দবাজির নির্ধারিত মাত্রা ১২৫ ডেসিবেল, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে ৯০ ডেসিবেল হওয়াটা অবিচার।
আওয়াজের গ্যারান্টি
বাজি বাজার ঘুরে পাওয়া গেল এমন বাজি, বিক্রেতা যার ‘আওয়াজের গ্যারান্টি’ দাবি করছেন। ছবির শব্দবাজিটির নাম নাইন এম এম চকলেট, এবং তার শব্দও বিকট। বিক্রেতার সাফাই, ''কালীপুজোর এই দুইটি দিন একটু আধটু শব্দ সহ্য করাই যায়, যেখানে গুটখার মতো নিষিদ্ধ জিনিস সারা বছর দেদার বিকোচ্ছে, মদের মতো খারাপ জিনিসের দোকানে লাইন, সেখানে বাজিরই যত দোষ?''
নুঙ্গির বাজি
পশ্চিবঙ্গের বৃহত্তম পাইকারি বাজির বাজার এই নুঙ্গি। দৌলতপুর রোডের প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে এই বাজির বাজার। কালীপুজোর আগে মাত্র একসপ্তাহের বাজি বিক্রির জন্য সাত-আটমাস ধরে বাজি তৈরি করা হয়। এই বছর সমিতির পক্ষ থেকে ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে মাইকে প্রচার করা হচ্ছে কেবলমাত্র নিরি (NEERI) অনুমোদনপ্রাপ্ত সবুজবাজিই ক্রয় করার জন্য, কিন্তু দেদার বিক্রি হচ্ছে শব্দবাজি এবং বেরিয়াম যুক্ত বাজি।
বাজির ক্রেতা
কয়েকজন বাজি-ক্রেতার শব্দবাজি কিনতে পাওয়া গেলেও তা নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না পুলিশ রাস্তায় ব্যাগ পরীক্ষা করছে।
শহরে খোলা বাজার
শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে দেখা গেল অবাধে বিকোচ্ছে সবরকম বাজি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রেতার কথায়, ''শিবকাশীর সবুজবাজির তুলনায় স্থানীয় সাধারণ বাজির দাম অনেকটাই কম, তাই ক্রেতাদের নজর সাধারণ বাজির দিকেই বেশি। অত দূষণ দেখলে চলে না।''
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য
চিকিৎসক থেকে পরিবেশকর্মী, সকলের মতে, বাজি মাত্রেই ক্ষতিকারক। শব্দবাজির বিকট আওয়াজ যেমন তাৎক্ষণিক এক ভয়াবহতার সৃষ্টি করে, আলোর বাজি থেকে নির্গত ধোঁয়ার ক্ষতিকারক উপাদান পরিবেশে অনেকদিন স্থায়ী হয়। তাই সকলের উচিত বাজির থেকে নজর সরিয়ে আলোর উৎসবকে আলো দিয়েই সাজানো।
সোনার পাথরবাটি
পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, সবুজবাজি হলো সোনার পাথরবাটি। যারা কিনছেন, তারাও জানেন না, যারা নিয়ন্ত্রণ করবেন তারাও জানেন না। আর যারা তৈরি করছেন, তারাও জানেন না যে সবুজবাজি বস্তুটি আসলে কী!