দক্ষিণ কোরিয়ায় পদপিষ্ট হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫৩
৩০ অক্টোবর ২০২২মৃতদের বেশিরভাগের বয়স কুড়ি থেকে তিরিশের কোঠায় বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
পাবলিক ব্রডকাস্টার কেবিএস রোববার জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা ৮০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৩-এ। জরুরি পরিষেবা বিভাগ অনুসারে, নিহতদের মধ্যে ২২ জন বিদেশি নাগরিক রয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে বিদেশিদের সংখ্যা ২০। নিহতদের মধ্যে চীন, ইরান, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম, উজবেকিস্তান, নরওয়ে, কাজাখস্তান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার নাগরিকও রয়েছেন।
শনিবার গভীর রাতে দক্ষিণ কোরিয়ারইটায়েওন জেলায় একটি সরু রাস্তায় হ্যালোউইন উৎসবের ভিড় থেকে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাস্থলের আশপাশেসরু রাস্তায় এত ভিড় ছিল যে জরুরি পরিষেবাগুলির পক্ষে ক্ষতিগ্রস্তদেরসাহায্য করা কঠিন হয়ে পড়েছিল।
সরকার এই ঘটনায় জাতীয় শোকের ঘোষণা করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনের শি জিনপিং সহ বিশ্বনেতারা এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। পোপ ফ্রান্সিসও ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন। জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। কোরিয়া এবং সবার কাছেই এটি দুঃখের দিন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শোকে নির্বাক পরিবারের সদস্যরা
মেয়ের মৃতদেহ মর্গ থেকে নিতে আসতে হবে ভাবতে পারেননি বাবা। কান্নায় ভেঙে পড়া এক তরুণীর বাবা বলেন, মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে তার। আপৎকালীন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। হ্যালোউইন পার্টির পোশাক পরা মৃতদেহের অনেকগুলিই কিশোর-কিশোরীদের।
নাইটক্লাব, রেস্তোরাঁয় বেশিরভাগ সময়ে সামান্য ভিড় হলেও পরিস্থিতি হয়ে ওঠে মারাত্মক। হ্যালোউইনের সময় আদৌ কতটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
করোনা আবহে সব বন্ধ থাকায় তিন বছরের মধ্যে প্রথম হ্যালোউইন ইভেন্ট ছিল এটি। মৃতদের আত্মীয়দের অনেকেই ভিড় নিয়ন্ত্রণের সমস্যাকে দায়ী করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বর্ণনা করেছেন যে সন্ধ্যা হতেই ভিড় ক্রমশ বাড়ছিল, বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছিল। সরু গলিতে মারাত্মক ভিড়ের ফলে একটা সময় অনেকেই আর শ্বাস নিতে পারছিলেন না। ভিড় সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিল পুলিশ। শ্বাস আটকে অনেকেরই নাক মুখ দিয়ে রক্ত বেরোতে শুরু করে।
বছর একুশের মুন জু-ইয়ং বলেন, খারাপ কিছু একটা ঘটবে আগে থেকেই মনে হচ্ছিল। তিনি রয়টার্সকে জানান, স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ গুণের বেশি ভিড় ছিল। সোশ্যাল মিডিয়ার ফুটেজে দেখা গিয়েছে শত শত লোক সরু, ঢালু গলিতে পিষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছেন। আপৎকালীন কর্মকর্তা এবং পুলিশ তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
ইয়ংসান জেলা অগ্নিনির্বাপক প্রধান চোই বলেন, গলিতে পদপিষ্ট হয়েই সম্ভবত সবকটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলের পাশে একটি ভবনে একটি অস্থায়ী মর্গ তৈরি করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেখানকার দমকল আধিকারিক এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গলির ঢালের মধ্যে একের পর এক মানুষ পদপিষ্ট হন। এক নারী জানান, মানুষের স্রোতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তার মেয়ে আটকে ছিল, কিন্তু সে বেঁচে রয়েছে।
রয়টার্সের এক প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, প্রায় চার ডজন মৃতদেহ চাকাযুক্ত স্ট্রেচারে বের করা হয়েছিল। নিহতদের শনাক্ত করতে তাদের দেহ একটি সরকারি কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে রয়টার্সকে পার্ক জুন হুং নামে বছর একুশের তরুণী বলেছেন, "বড়দিনে কিংবা আতশবাজি দেখতেও প্রচুর ভিড় হয়। এটি তার চেয়ে দশগুণ বেশি ভিড় ছিল।"
রাষ্ট্রপতি ইউন একটি জরুরি বৈঠক আহতদের চিকিৎসার জন্য সম্পদ সুরক্ষিত করতে একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং বিপর্যয়ের কারণ সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত শুরু করেছেন। ২০১৪ সালের একটি ফেরি ডুবে যাওযার দুর্ঘটনার পর এই বিপর্যয়টি দেশের সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা। সেই দুর্ঘটনায় ৩০৪ জন মারা যান, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। হ্যালোউইনের এই দুর্ঘটনায় ৩৫৫ জনের এখনো পর্যন্ত কোনো খোঁজ মেলেনি বলে জানা গিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া জুড়ে এই দুর্ঘটনায় শোকের আবহ তৈরি হয়েছে। এত জন অল্পবয়সি তরুণ তরুণীর মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই।
ইটায়েওন জেলাটি তরুণ দক্ষিণ কোরীয় এবং প্রবাসীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। উৎসবের আগে সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আদৌ কেমন ছিল, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।
আরকেসি/এডিকে (ডিপিএ, রয়টার্স)