তুরস্কের ভূমিকম্পে পা হারানো মেহমেতের জীবনযুদ্ধ
৭৬ ঘণ্টা ধ্বংসস্তূপের নীচে ছিল সে৷ উদ্ধারকাজে আরেকটু সময় গেলে মা আর বড় ভাইয়ের মতো মেহমেতের জীবনও শেষ হয়ে যেতো ইট-সুড়কির নীচে৷ ছবিঘরে সেই তুর্কি কিশোরের জীবনযুদ্ধের কথা...
এক বছর আগের সেই দিন
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩৷ মেহমেত কচ তখন নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে৷ হঠাৎ ঘুম ভাঙে বিকট এক শব্দে৷ ১৩ বছরের কিশোর কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাতায় শহরের পাঁচ তলা ভবনটি লুটিয়ে পড়ে মাটিতে৷ ধসে পড়া ভবনের নীচেই শেষ হয়ে যায় তার মা দিদেম আর এক বছরের বড় ভাই এমরের জীবন৷
দুই বন্ধুর যৌথ লড়াই
ধ্বংসস্তূপের নীচের অন্ধকারে মেহমেত তখন জীবনের আলো জ্বালিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টায়৷ বাইরে থেকে ভেসে আসছে মানুষের কান্না আর চিৎকার৷ মেমেত আরো জোরে চিৎকার করে বলতে চাইছিল, ‘‘বাঁচাও! বাঁচাও!’’ কিন্তু প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়ায় কণ্ঠ থেকে মৃদু গোঙ্গানির মতো শব্দ বের হচ্ছিল৷ ওর পাশেই ছিল হারেত্তিন৷ সে বলল, ‘‘ আমি যখন বলবো তখন তুমিও যত জোরে পারো বলবে- বাঁচাও-ও-ও-ও!’’
মেহমেতের লন্ডন প্রবাসী বাবা
ভূমিকম্পের সময় মেহমেতের বাবা হাসান ছিলেন লন্ডনে৷নিজের এলাকায় এত বড় ভূমিকম্পের খবর শোনার পর তিনি আর স্থির থাকতে পারেননি৷ পরিবারের পাশে দাঁড়াতে নিকটতম সময়ের বিমানে চড়ে ছুটে যান তুরস্কে৷ পাঁচ তলা ভবনের ধ্বংসাবশেষের সামনে শুরু হয় তার অপেক্ষা৷ এক সময় কানে ভেসে আসে হারেত্তিমের কণ্ঠ৷প্রতিবেশীর ছেলেটি জানায়, মেহমেত এখনো জীবিত!
৭৬ ঘণ্টার অপেক্ষার অবসা
মেহমেত আর হারেত্তিমকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করতে প্রায় ৭৬ ঘণ্টা লেগে যায়৷ ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া দুই কিশোরের বেঁচে থাকার লড়াই ৯ ফেব্রুয়ারিতে সাফল্যের মুখ দেখলেও হাসান জানতে পারেন, তার সন্তানকে বাকি জীবন কাটাতে হবে পঙ্গুত্ব মেনে, কারণ, মেহমেতের একেবারে থেতলে যাওয়া পা দুটি ডাক্তাররা কেটে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন৷
ভয়াবহ সেই ভূমিকম্প
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হয়ে যাওয়া স্মরণকালের ভয়াবহতম ভূমিকম্পে তুরস্কে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায়, আহত হয় অসংখ্য মানুষ৷সেই ভূমিকম্পে সিরিয়াতেও মারা যায় পাঁচ হাজার ৯০০-র মতো মানুষ৷
প্রবাসে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার লড়াই
মা আর ভাই হারানো মেহমেত এখন লন্ডন প্রবাসী৷ তুর্কি স্কুলে লেখাপড়া, বাড়িতে ভিডিও গেম খেলা, টেলিভিশনে প্রিয় দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর প্রিয় ফুটবলার আর্লিং হালান্ডের খেলা দেখা, দাদীর সঙ্গে খুনসুটি এবং কৃত্রিম পায়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রতিদিনের কসরত- সব মিলিয়ে ব্যস্ততার মাঝেই দিন কাটছে তার৷ সকল ব্যস্ততার মূল উদ্দেশ্য একটাই – সুস্থ দেহ-মন নিয়ে যতটা সম্ভব আত্মনির্ভরশীল জীবন যাপন করা৷
এসিবি/ কেএম (রয়টার্স)