তুরস্কে ভূমিকম্প: গৃহহীনদের আশ্রয় ট্রেনে
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্য়া ছাড়িয়েছে ৫০ হাজার৷ যারা বেঁচে আছেন, তাদেরও অনেকেই সর্বস্ব হারিয়ে হয়েছেন নিঃস্ব৷ তুরস্কের ইস্কেন্দেরুনে বেশকিছু পরিবার থাকার জায়গা না পেয়ে আশ্রয় নিয়েছে ট্রেনে৷
ট্রেন যখন ঘরবাড়ি
তুরস্কের হাতায় প্রদেশের বন্দরনগরী ইস্কেন্দেরুনের প্রধান ট্রেন স্টেশন এটি৷ ট্রেনের বগিগুলোকে সাময়িক আশ্রয়কেন্দ্রে রূপ দেয়া হয়েছে৷ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পে দেশটিতে গৃহহীন হয়েছেন ১৫ লাখের বেশি মানুষ৷
সম্ভাব্য সবকিছুই আশ্রয়কেন্দ্র
এত বিশাল সংখ্যক মানুষকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সরকার৷ তাঁবু, জাহাজের কন্টেইনার, হোটেল, রিসোর্ট, স্কুল, সম্ভাব্য প্রতিটি স্থানেই আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ যেসব ট্রেনের বগি আপাতত ব্যবহার হচ্ছে না, সেগুলোই কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষও৷
বিয়েটা কি হবে?
ইউসুফ কুরমা এবং আয়সেল ওজসেলকের বাগদান সম্পন্ন হয়েছে ভূমিকম্পের আগেই৷ ভূমিকম্পের পর দুজনেই একে অপরকে জীবিত খুঁজে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন৷ কিন্তু এখন কি বিয়েটা হবে? সম্ভবত না৷ নিজেরা আশ্রয় নিয়েছেন ট্রেনে৷ অন্যদিকে, স্বজনসহ অনেকেই মারা গিয়েছেন৷ আপাতত বিয়েটা পিছিয়ে দেয়ার কথাই ভাবছেন তারা৷
স্মৃতিচারণ, ভবিষ্যত পরিকল্পনা
কদিন আগেই বিয়ে নিয়ে এত উৎফুল্ল ছিলেন এই ভবিষ্যত দম্পতি৷ কিভাবে আয়োজন করা হবে, সে নিয়ে স্বপ্নের জালও বুনছিলেন তারা৷ অথচ মুহূর্তেই সব ধূলিস্যাৎ হয়ে গেল৷ তবে এই দুঃখের সময়টাতেই নিজেদের সবচেয়ে বেশি একে অপরকে প্রয়োজন৷ আর সেটিই করার চেষ্টা করছেন তারা৷ বিয়ে না হয় আপাতত স্থগিত, ভালোবাসাটা জোরদার করতে ক্ষতি কী?
ট্রেনের ভেতরেই ১৮ ঘণ্টা
৫৭ বছরের সাবরিয়ে কারান এবং তার ১৩ বছরের মেয়ে নেহির কারান ট্রেন স্টেশনে হাঁটছেন৷ ট্রেনের বগি অনেক ছোট এবং প্রয়োজনীয় জিনিসের তেমন কিছুই নেই৷ তবে শীতের কবল থেকে বাঁচাতে তাঁবুর চেয়ে ট্রেনটি বেশি আরামদায়ক৷ এজন্য দিনের ১৮ ঘণ্টাই তারা ট্রেনের মধ্যে থাকেন৷
খাবারের জন্য ত্রাণই ভরসা
কেবল হাঁটাহাঁটি করার জন্য এবং ত্রাণের খাবার সংগ্রহের জন্য বাইরে বের হন ট্রেনে আশ্রিতরা৷ থাকার জায়গা, কাজ কিছুই নেই৷ এমনকি দোকানপাট, বাজারও ক্ষতিগ্রস্ত৷ ফলে খাবারের জন্যও বিভিন্ন সংস্থার দেয়া ত্রাণের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে কারানের মতো অন্য আশ্রিতদেরও৷
ভবিষ্যৎ অন্ধকার?
আরাফাত আতেসের বয়স ৬৩, তার স্ত্রী জেলিহা আতেসের বয়স ৫৩৷ তারাও আশ্রয় নিয়েছেন ট্রেনের বগিতে৷ নিজেদের সঙ্গে আনতে পেরেছেন কেবল কিছু কাপড়চোপড়৷ যারা আগে এসেছে, তারা ঘুমানোর ব্যবস্থাসহ স্লিপার কেবিন পেলেও আতেসরা পেয়েছেন ফার্স্ট ক্লাসের বগি৷ তাই ঘুমাতেও হয় সোজা বসেই৷ কবে আবার তারা নিজেদের একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবেন, কিছুই জানা নেই৷
হতাশা কাটবে কবে?
বুচে চেরমির বয়স ২০ বছর৷ তার বাবা একজন ট্রেনচালক৷ ফলে অন্য অনেকের আগেই ট্রেনটিকে আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত করার সংবাদ পেয়ে স্লিপার কেবিনে আশ্রয় নিতে পেরেছেন তিনি৷ ট্রেনের অন্যদের চেয়ে তিনি ভালো আছেন বটে, কিন্তু এর ফলে দুশ্চিন্তা কমছে না একটুও৷ বরং সব স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত কিভাবে কাটবে সময়, সেটিই এখন চিন্তার বিষয়৷
এডিকে/এসিবি (রয়টার্স)