তুমুল বিতর্কে ব্যর্থ জার্মান অভিবাসন বিল
১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫জার্মান পার্লামেন্ট বুন্ডেসটাগে তীব্র বাদানুবাদ, রাজপথে ব্যাপক বিক্ষোভ, বিশ্বাসঘাতকতা এবং কট্টরপন্থিদের সঙ্গে ‘আঁতাতের' অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ভাঙা জার্মান রাজনীতিতে কয়েক দিন তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে৷
শুক্রবার পার্লামেন্টে আশ্রয়নীতি আরো কঠোর করার একটি বিল খুব অল্প ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে৷ বিলটির সমর্থনে রক্ষণশীল খ্রিস্টিয় গণতন্ত্রী এবং খ্রিস্টিয় সমাজতন্ত্রী (সিডিইউ/সিএসইউ) দল ছাড়াও অতি-কট্টরপন্থি অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি), নব্য-উদারনৈতিক ফ্রি ডেমোক্র্যাটস (এফডিপি) এবং পপুলিস্ট সাহরা ভাগেনক্নেখট অ্যালায়েন্স (বিএসডব্লিউ) ভোট দিয়েছে৷
প্রথমবারের মতো অতি-ডানপন্থি অল্টারনেটিভ ফর জার্মানির সমর্থনের উপর নির্ভর করে বুধবার সিডিইউ এর চ্যান্সেলর প্রার্থী ফ্রিড্রিশ ম্যার্ৎস আশ্রয়নীতির উপর একটি প্রস্তাব পাস করতে সক্ষম হন৷ কে সমর্থন দিচ্ছে, সেটা চিন্তা না করেই অভিবাসন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এখনই নেয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন ম্যার্ৎস৷
বিতর্কিত এই প্রস্তাবটিতে সমস্ত প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে স্থায়ী সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এবং আশ্রয়ের জন্য অনুরোধ করলেও সীমান্ত থেকেই অভিবাসীদের ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ বর্তমান আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন এমন প্রস্তাব৷
পাবলিক ব্রডকাস্টার এআরডি এর সাম্প্রতিক ডয়চলান্ডট্রেন্ড জরিপ অনুসারে, জার্মান জনগণের একটি বড় অংশ অভিবাসন নীতি কঠোর করার পক্ষে৷ তবে, এএফডি এর সঙ্গে মিলে কোনো জোটগত চুক্তি করার বিপক্ষেও বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমত রয়েছে৷
২৩ ফেব্রুয়ারি, অর্থাৎ মাত্র তিন সপ্তাহ পরই জার্মানির পরবর্তী ফেডারেল নির্বাচন৷ নির্বাচন পূর্ববর্তী সবশেষ জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে প্রায় ৩০ শতাংশ সমর্থন নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে সিডিইউ৷ দলটির নেতা ম্যার্ৎসের পরবর্তী চ্যান্সেলর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ প্রায় ২০ শতাংশ ভোট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কট্টরপন্থি এএফডি৷ ম্যার্ৎস অবশ্য পার্লামেন্টে অভিবাসননীতির প্রস্তাবে এএফডির সমর্থন পেলেও শুক্রবার আবার নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি এএফডি এর সঙ্গে কাজ করতে চান না৷
চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বর্তমানে গ্রিন পার্টির সঙ্গে একটি সংখ্যালঘু সরকারের অংশ হিসেবে দেশ পরিচালনা করছেন৷ শুক্রবার সাপ্তাহিক পত্রিকা ডি সাইটকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জার্মান জনগণকে ভবিষ্যত নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ জার্মানিও অস্ট্রিয়ার মতো একই পথ অনুসরণ করার কাছাকাছি অবস্থান করছে বলে মনে করেন তিনি৷ অস্ট্রিয়ায় সবশেষ নির্বাচনে অতি-ডানপন্থি ফ্রিডম পার্টি (এফপি) জয় লাভ করেছে এবং এখন রক্ষণশীল পিপলস পার্টির সঙ্গে জোট করে সরকার গঠনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে৷
শলৎস ডি সাইটকে বলেন, অস্ট্রিয়ার মধ্যপন্থি দলগুলোও শুরুতে পপুলিস্ট এফপিও্য এর সঙ্গে জোট গঠন না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু ‘‘...শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গেই একটি জোট গঠন করতে পারে, এমনকি এফপিও্য থেকেই একজন চ্যান্সেলরও হতে পারেন৷''
সমালোচনায় মুখর সাবেক চ্যান্সেলর ম্যার্কেল
শুক্রবার সকালে বুন্ডেসটাগে পার্লামেন্টারি দলের এক সভায় বক্তৃতায় অতি-ডানপন্থি এএফডির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন এমন দাবি নাকচ করেছেন ম্যার্ৎস৷ তবে, সাবেক চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এ বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন৷
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ম্যার্কেল বলেছেন যে ম্যার্ৎস কেবল গণতান্ত্রিক মধ্যপন্থি দলগুলোর সঙ্গে মিলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করার আশ্বাস সম্প্রতিই তাকে দিয়েছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি মনে করি যে এই আশ্বাসের ওপর আর বিশ্বাস না রেখে এবং এই প্রথমবারের মতো বুন্ডেসটাগের ভোটে এএফডির ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের সুযোগ দেওয়াটা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত৷''
ম্যার্ৎস শুক্রবার বুন্ডেসটাগে বলেন যে দেশটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি মৌলিকভাবে ভুল অভিবাসননীতি অনুসরণ করেছে৷
ম্যার্কেলের নাম উল্লেখ না করেই তিনি বলেন, ‘‘এবং আমার দলেরও এক্ষেত্রে অনেক ভূমিকা রয়েছে৷ যদি আমরা তখন আরও ভালো করতাম, তাহলে এএফডি ২০১৭ সালে বুন্ডেসটাগে প্রবেশ করতো না৷ ২০২১ সালে বুন্ডেসটাগে ফিরেও আসতো না৷''
ম্যার্ৎস এবং ম্যার্কেলের মধ্যে খুব জটিল সম্পর্ক রয়েছে৷ ২০০২ সালে ম্যার্কেল বুন্ডেসটাগে সিডিইউ/সিএসইউ পার্লামেন্টারি দলের নেতা হিসেবে ম্যার্ৎসের স্থলাভিষিক্ত হন এবং অতিরক্ষণশীল ম্যার্ৎসকে পেছনে ফেলে ২০০৫ সালে চ্যান্সেলর হন৷
ম্যার্কেলের নেতৃত্বে দলটি মধ্যপন্থার দিকে অগ্রসর হয় এবং মধ্য-বামপন্থি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস (এসপিডি) এর অনেক রাজনৈতিক সূচি বাস্তবায়ন করেন৷ হতাশ হয়ে এক পর্যায়ে ২০০৭ সালে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে প্রাইভেট ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন৷ তবে ২০২১ সালে ম্যার্কেল রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার পর তিনি আবার রাজনীতিতে ফিরে সিডিইউ/সিএসইউ এর পার্লামেন্টারি দলের নেতা৷ পরপর দুইবার দলের চেয়ারম্যান পদের নির্বাচনে পরাজিত হলেও তৃতীয়বারের চেষ্টায় ২০২১ সালে দলটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন৷
ইয়েন্স থুরাউ/এডিকে