তিনটি গরুর বিনিময়ে জোরপূর্বক বিয়ে
২১ ডিসেম্বর ২০০৯দারিদ্র্যের শিকার দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবারগুলোতে প্রাচীন প্রথার নামে বেড়ে চলেছে শিশু নির্যাতন৷
নালিজি সিনামা, ১৪ বছর বয়সে তার পরিবার তাকে বিনিময় করে তিনটি গরুর সাথে এবং ঐ বয়সেই তাকে বিয়ে দেয়া হয় তার থেকে তিনগুণ বয়সে বড় এক লোকের সাথে৷
তরুণ বয়সে প্রতারণার শিকার সিনামা এখন একটি স্থানীয় আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে৷
অল্পবয়স্ক লাজুক প্রকৃতির মেয়েটি তার তিন বছর আগের দুর্বিষহ দিনগুলোতে যখন সে প্রতিদিনই ধর্ষণের শিকার হতো তা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে৷
সিনামার এই ঘটনাটি দরিদ্র ইস্ট কেপ অঙ্গরাজ্যের শত শত মেয়েদের অবস্থা তুলে ধরে, যেখানে ২০০,০০০ মানুষের বসবাস যাদের প্রতিদিনের উর্পাজন এক ডলারেরও কম৷
প্রাচীন এক বিবাহ প্রথা যা ইউকুথওয়ালা নামে পরিচিত এবং সেখানকার আঞ্চলিক কোজ ভাষায় এর অর্থ হচ্ছে বহন করা৷ এই প্রথানুযায়ী পুরুষেরা নারীদের জোর করে বিয়েতে বাধ্য করত৷ আগে এর শিকার হতো শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়সিরাই৷ কিন্তু বর্তমানে ৬০ বছরের বেশি বয়সের বৃদ্ধরাও বয়সন্ধিঃপ্রাপ্ত মেয়েদের অপহরণ করছে এবং তাদের ঐ প্রথানুযায়ী বিয়ে করতে বাধ্য করছে৷
সিনামা বলেন, ঘটনাগুলো এতটাই দ্রুত ঘটেছে যে তার মনে হয় এই তো সেদিন সে আর সব মেয়েদের মত স্কুলে যাচ্ছিল আর পরদিনই তাকে অন্য বাড়িতে অন্য একটি পরিবারের সাথে থাকতে হয়েছে৷
এখন সিনামার বয়স ১৭৷ সে যে আশ্রয় কেন্দ্রেটিতে থাকছে সেখানে তার সমবয়েসি আরো ১৮ জন মেয়ে রয়েছে যারা একই ঘটনার শিকার৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মেয়েদের কোন মতামত ছাড়াই তাদের পরিবার তাদের বিয়ের অয়োজন করেছে৷ এ ঘটনার শিকার মেয়েরা বিভিন্ন সমাজকর্মীদের মাধ্যমে উদ্ধার পেয়েছে৷স্থানীয় পুলিশ এই ধরণের আচরণ বন্ধের উদ্দেশে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে৷যদিও স্থানীয় অনেক সম্প্রদায় একে দোষের কিছু বলে মনে করছে না৷
মনসাসা পুলিশ স্টেশন প্রধান নোমানা এডনিস যিনি এই প্রচারণার দায়িত্বে আছেন তিনি বলেন এটি একটি বিষ্ময়কর ঘটনা৷ তার মতে এখনো আরও শতশত মেয়ে আছে যাদের কাছে তারা পৌঁছাতে পারেননি৷ তিনি আরো বলেন, এই ঘটনার ফলে এইচআইভি-এইডস রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷
রর্ডস বিশ্বিবিদ্যালের আফ্রিকানস ভাষা বিভাগের প্রধান পিটার মুৎসে বলেন, আধুনিক বিশ্বে এমন ঘটনা ভাবাই যায় না যে মেয়েরা এখনো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে৷
দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার এবং মানবাধিকার সংস্থা এই ধরণের আচরণকে সমাজ বহির্ভূত বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং এই প্রবণতা বন্ধ করে শিশুদের রক্ষা করতে তারা চেষ্টা করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷
প্রতিবেদক: আসফারা হক
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক