তাপপ্রবাহের কবলে জার্মানি
২১ জুলাই ২০২৫আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, জুলাই মাসের শুরুতে হামবুর্গ ও কোলন শহরে তাপমাত্রা হয়েছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ এমনকি, কোথাও কোথাও পারদ পৌঁছে গিয়েছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে৷ আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের কথায়, সারা ইউরোপেই প্রভাব পড়েছে তীব্র দাবদাহের৷ জুন মাস থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত রেকর্ড ভাঙা গরম অনুভূত হয়েছে পশ্চিম ইউরোপের বেশ কিছু জায়গায়৷
সচরাচর জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত জার্মানিতে গ্রীষ্মকাল চলে৷ আগের বছরগুলিতে এই ধরনের তীব্র গরম দেখা গিয়েছিল আগস্ট মাসের শুরুতে৷ আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এত দ্রুত তাপপ্রবাহের প্রকোপ৷
তাপপ্রবাহ: কী ভাবছেন জার্মানির মানুষ?
রাজধানী বার্লিনের রাস্তায় হাতের ছোট পাখাটি ডয়চে ভেলের সাংবাদিককে দেখান এক নারী৷ হাসিমুখে বলেন, ‘‘গরম আছে, কিন্তু মোকাবিলায় এই জিনিসটি রয়েছে আমার কাছে৷'' আর একজন নারী জানান, ‘‘প্রচুর পানি খাই, চেষ্টা করি সহনশীলতার মধ্যে রোদ্দুরকে উপভোগ করতে৷'' পাশাপাশি এক পুরুষ জানান, তিনি টুপি ব্যবহার করেন৷ প্রচুর পানি পান করেন এবং রাস্তার ছায়াঘেরা এলাকা দিয়ে হাঁটতে পছন্দ করেন৷
তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে প্রশাসন কী পদক্ষেপ নিয়েছে? ডয়চে ভেলের প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার মুখপাত্র সাবিন গ্রুয়েনব্যর্গ বলেন, ‘‘এই পদক্ষেপের দায়িত্ব প্রাদেশিক প্রশাসন ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের৷ আমরা মানুষকে কেবল সতর্ক করতে পারি৷'' তাপপ্রবাহের সূচনা থেকেই রেডিয়ো, টিভি ও সমাজমাধ্যমে বলা হয়েছিল প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে না বের হতে৷ বন্ধ ছিল অনেক স্কুল৷ তবে আশার কথা এটাই, এ বছর এখনও পর্যন্ত স্বল্পসময়ের জন্যই তাপপ্রবাহ দেখা গিয়েছে৷ পাশাপাশি গ্রুয়েনব্যর্গ ‘‘ hitzeservice.de'' বলে একটি বিশেষ ওয়েবসাইটের কথাও উল্লেখ করেন৷ যেখানে গরম থেকে সুরক্ষার নানা তথ্য রয়েছে৷ তার দাবি, বয়স্ক ও অসুস্থদের জন্য এই তথ্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়৷ ২০২৩ সালে এই ওয়েবসাইটটির সূচনা হয়৷
কেন এই তাপপ্রবাহ
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, মূলত ‘হিট ডোম'-এর জন্যই জুন ও জুলাই মাসে দুটো তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হয়েছে ইউরোপ৷ ‘হিট ডোম' হল বায়ুমণ্ডলের এমন এক ধরনের উচ্চচাপ অবস্থা যেটি একটি টুপির মতো একটি নির্দিষ্ট এলাকাকে ঘিরে থাকে৷ ফলে সেখানকার ভূপৃষ্ট ক্রমশ গরম হতে থাকে৷ এই অবস্থা মেঘ তৈরিতে বাধা দেয়, ফলে বৃষ্টির সম্ভাবনাও ক্রমশ কমতে থাকে৷
তাপপ্রবাহে পূর্ব জার্মানিতে দাবানল
তাপপ্রবাহের আর অন্যতম একটি ক্ষতিকারক দিক হল দাবানল৷ তবে জার্মানির কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়ের দাবি, স্যাক্সনি ও ব্রান্ডেনবুর্গের সাম্প্রতিক বিধ্বংসী দাবানলের মোকাবিলা জার্মান সেনা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করেছে৷ বিশেষ করে বলতে হয় ১ জুলাইয়ের ভয়াবহ দাবানলের কথা৷ দমকলকর্মী ও ‘ফেডারেল এজেন্সি ফর টেকনিকাল রিলিফ'-এর তৎপরতায় সাধারণ মানুষ এর থেকে রক্ষা পেয়েছেন৷ পাশাপাশি, সরকারি অ্যাপ ‘নিনা' গত দশ বছর ধরে এই ধরনের আগুনে সতর্ক করে মানুষকে৷ সম্প্রতি এটায় পুলিশের সতর্কবার্তাও যোগ করা হয়েছে৷
চিকিৎসকরা বলছেন গরমকে অবহেলা নয়
গরমের দিনে হাসপাতাল, বৃদ্ধাশ্রম ও আশ্রয়শিবিরগুলোতে তৎপরতা অত্যন্ত বেড়ে যায়৷ মানুষকে পর্যাপ্ত পানি দেওয়া হয়, পাশাপাশি রোদ থেকে সুরক্ষা হয়৷ কোথাও কোথাও চালানো হয় ফ্যান৷ বার্লিন মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পিটার রবার্ট জানান, ‘‘তাপপ্রবাহকে কখনও অবহেলা করা উচিত নয়৷ গরমে সুস্থ থাকতে রোদ এড়িয়ে চলুন, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খান৷ এবং অন্যের খেয়াল রাখুন৷''
তিনি আরও বলেন, উচ্চ তাপমাত্রা হৃদযন্ত্র ও রক্তপ্রবাহের সমস্যাও ডেকে আনতে পারে৷
জার্মান ‘কনসিউমার কম্পারিসন ওয়েবসাইট' ভেরিভক্সের মতে, ২০২৩ সালে ১৩ শতাংশ বাড়িতে এয়ারকন্ডিশনিং ছিল৷ গত বছর তা বেড়ে হয় ১৯ শতাংশ৷ বর্তমানে সেই চাহিদা কমেছে, তবে তা জার্মানির উচ্চ বিদ্যুতের মাসুলের জন্য৷ এসি নেই হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও স্কুলেও৷
গরমে রাস্তা সারাইয়ের কাজ করাও অত্যন্ত কষ্টসাধ্য৷ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার সারিক্লিয়া কাগিয়াগোলো জানিয়েছেন, ‘‘বার বার পানি খাই, যতটা সম্ভব সুরক্ষিত থাকার চেষ্টা করি গরম থেকে৷''
জার্মানির প্রধান স্বাস্থ্য সংস্থা রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের মতে, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে প্রবল গরমে এ দেশে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬ হাজার মানুষ৷
জেনস থুরাও/এসটি