ট্রাম্পের নয়া শুল্ক নীতিতে কোথায় অসুবিধায় পড়বে ভারত?
৩ এপ্রিল ২০২৫বাণিজ্য মাসুল নিয়ে ভারত ও অ্যামেরিকার মধ্যে এখনো আলোচনা চলছে। তার মধ্যেই ২৭ শতাংশ হারে ভারতের পণ্যের উপর মাসুল বসানোর ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প।
'চা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে'
ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশানের সাবেক এবং প্রথম নারী চেয়ারপার্সেন নয়নতারা পাল চৌধুরীর দাবি, ভারত সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ করা উচিত। কেবলমাত্র চা রপ্তানি নয়, এই শুল্কের প্রভাব সারা দেশের বাণিজ্য মহলে পরবে বলে মনে করেন তিনি। নয়নতারা ডিডাব্লিউকে বলেন, "ভারতের বাণিজ্যের বিভিন্ন শাখায় এই নতুন শুল্কের প্রভাব পড়বে। এই মুহুর্তে ভারত এবং অ্যামেরিকার সরকারের মধ্যে আলোচনা প্রয়োজন।"
অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়বে?
অর্থনীতিবিদ ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক গৌতম গুপ্তর মতে, এর ফলে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতের অর্থনীতি। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, " খুব খারাপ হলো। অনেক বছর আগে শুল্কে ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য ইন্টারন্যাশানাল মনিটরি ফান্ড তৈরি হয়েছিল। সেটাকে এড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন এই শুল্ক আরোপ সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির ক্ষতি করবে। অন্যদেশে আমাদের থেকে চড়া হারে শুল্ক চাপানো হলে যে তাতে ভারতের লাভ হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।"
একই মত সাংবাদিক এবং ফিকির প্রাক্তন অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অঞ্জন রায়ের। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, "এ যেন অষ্টাদশ-উনবিংশ শতাব্দীর বাণিজ্যনীতি। সেই সময় আমদানিকে খারাপ এবং রপ্তানিকে ভালো বলে মনে করার নীতি ছিল। সেই সময়ও যেহেতু স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রায় বাণিজ্য হতো, রপ্তানিতে সেই মুদ্রা দেশে আসত। ফলে সবাই রপ্তানি চাইত। পৃথিবী আর সেই যুগে আটকে নেই। এগিয়েছে। সারা পৃথিবীর বাণিজ্য এগিয়েছে। প্রয়োজনে ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশানের মতো সংস্থা তৈরি হয়েছে যেন বানিজ্য ক্ষেত্রে শুল্ক বণ্টনে সমতা থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি এক লহমায় সেই সমতাকে নষ্ট করে দিচ্ছে।"
প্রতিযোগিতায় এগোবে ভারত?
তবে অঞ্জন রায়ের মতে, ভারত তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। তিনি বলেন, "আমাদের অর্থনীতি রপ্তানি নির্ভর নয়। অভ্যন্তরীণ চাহিদার উপর অর্থনীতির অনেকাংশ দাঁড়িয়ে আছে। তুলনায় বিপদ বেশি চীনের মতো দেশের। সেখানে শুল্কের হার যেমন বেশি, ঠিক তেমনই সেই দেশের অর্থনীতি অনেকাংশে রপ্তানি নির্ভর। ভারতের তুলনায় তাদের অনেক বেশি কষ্ট সহ্য করতে হবে।"
বিশ্ব বাজারে ভারত থেকে পোশাক রপ্তানি ক্রমেই বেড়েছে। পৃথিবীর চার শতাংশ পোশাক এবং কাপড় রপ্তানি হয় ভারত থেকে। যদিও পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রথম এবং দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন ও বাংলাদেশ। নতুন শুল্ক ব্যবস্থায় চীন ও বাংলাদেশের উপর বেশি চাপের কারণে ভারত কি বেশি সুবিধা পেতে পারে? অঞ্জনের মতে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে এর প্রভাব পরবে বিস্তর। বাংলাদেশের রপ্তানি থেকে আয়ের সিংহভাগ অর্থাৎ প্রায় ৮০ শতাংশ আসে পোশাক শিল্প থেকে। অঞ্জন বলেন, "কেবলমাত্র বাংলাদেশ নয়, ভিয়েতনাম এবং শ্রীলঙ্কাকেও সাংঘাতিক সমস্যায় পড়তে হতে পারে।"
চর্মজাত দ্রব্যও রপ্তানিতে বিপদ বাড়বে
অন্যদিকে, চর্মজাত দ্রব্য রপ্তানিতে বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত। ২০২৩-এ এই রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৪৭৫ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছর সেটা কমে দাঁড়ায় ৪২৮ কোটি মার্কিন ডলার। নতুন শুল্ক নীতিতেচর্মশিল্প মার খাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত তিন দশক ধরে চর্মজাত দ্রব্য বিদেশে রপ্তানি করছেন ইমরান জাকি। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, "ভারত চিরকালই চর্মজাত শিল্পে এগিয়ে ছিল। এর কারণ মূলত এখানে সহজলভ্য শ্রমিক এবং কাঁচামাল। এমনিতেই চর্মজাত দ্রব্যের বাজার খারাপ থেকে আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। চামড়ার বিকল্প তৈরি হয়ে গেছে। প্রতিযোগিতা বেড়েছে। অন্যদিকে, শ্রমিকও এখন আর সুলভ নয়। শ্রমের মূল্য বেড়েছে। এই নতুন শুল্কও আমাদের সাংঘাতিক চাপের মুখে ঠেলে দেবে। ইউরোপে রপ্তানি করে আমরা মূলত ভালো দাম পাই। অ্যামেরিকায় আমরা অনেক বেশি পরিমাণে রপ্তানি করার সুযোগ পাই। এর ফলে আমাদের লোকসান হবেই।"