ট্যাটু ও পিয়ার্সিং করাতে গেলে যা মনে রাখা উচিত
৪ অক্টোবর ২০২২অত্যন্ত চিকন সূঁচ রংয়ের পিগমেন্ট ত্বকের নীচে চালান করে দেয়৷ এভাবেই স্থায়ী ট্যাটু বা উলকি সৃষ্টি হয়৷ তাই আগেই ভালো করে ভাবনাচিন্তা করা প্রয়োজন৷ মার্কিন ট্যাটু শিল্পী জিম ক্লার্ক বলেন, ‘‘একেবারে নিশ্চিত হতে হবে৷ পছন্দ না হলে একজোড়া জুতার মতো ফেরত দেবার উপায় নেই৷ সত্যি নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন৷ তাছাড়া জানতে হবে, ট্যাটু আসলে কী৷''
পিয়ার্সিং-এর ক্ষেত্রে বিষয়টা তেমন কঠিন নয়৷ কারণ গয়না প্রয়োজনে খুলে নেওয়া যায়৷ ইটালির পিয়ার্সিং শিল্পী জিনো পেরোতো বলেন, ‘‘আমরা সুস্বাস্থ্যের পরামর্শ দেই৷ স্বাস্থ্যে ভরপুর ও হাসিখুশি থাকতে হবে৷ শরীর ভালো থাকলে যে কেউ পিয়ার্সিং করাতে পারে৷
কিন্তু ডাক্তাররা বিষয়টিকে মোটেই ভালো চোখে দেখেন না৷ শরীরের উপর এমন হস্তক্ষেপ সম্পর্কে ডা. ইলকার আয়দিন সতর্ক করে দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘পিয়ার্সিং ও ট্যাটুর ক্ষেত্রে আমাদের ত্বকের উপর ছুরি চালানো হয়৷ দুটি ক্ষেত্রেই সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে৷ অর্থাৎ ত্বকে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে অথবা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে৷''
এর ফলে এইচআইভি বা হেপাটাইটিস সি-র মতো রোগও শরীরে প্রবেশ করতে পারে৷ সে কারণে স্টুডিওয় কড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা আবশ্যক৷ অর্থাৎ পরিবেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কিনা, সে দিকে নজর দিতে হবে৷ এক দিন আগেই মদ্যপান বন্ধ করতে হবে এবং ক্ষুধার্ত অবস্থায় গেলে চলবে না৷ জিম ক্লার্ক মনে করেন, ‘‘খাদ্য ও পানীয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ পেট ভরা থাকলেই ভালো৷ দীর্ঘ সময় ধরে ট্যাটু করাতে হলে আগে ভালো করে খাওয়া জরুরি৷ কারণ তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে৷''
এক নারী ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল পিয়ার্সিং' করাচ্ছেন৷ সেই লক্ষ্যে দুইটি ছিদ্র করে রড দিয়ে সংযোগ করতে হয়৷ মনে রাখতে হবে, এমন পিয়ার্সিং-এর পর পুরোপুরি সেরে উঠতে একটা গোটা বছর সময় লাগতে পারে৷ জিনো পেরোতো বলেন, ‘‘খুব বেশি আড়ষ্ট না থাকলেই ভালো৷ কিছুটা সাবলীল থাকা উচিত৷ বিষয়টি নিয়ে বেশি মাথা না ঘামালেই ভালো৷ কাজ বেশ দ্রুতই ঘটে৷ এক সেকেন্ডেই সূঁচ ত্বক ভেদ করে ফেলে৷''
ট্যাটু করাতে হলে হাতে সময় নিয়ে যেতে হয়৷ নির্দিষ্ট আকারের ট্যাটু করাতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে৷ আরও বড় ট্যাটুর ক্ষেত্রে ধৈর্য্য ধরে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়৷ তাছাড়া এই প্রক্রিয়ায় যে ব্যথা লাগে, আগে থেকেই সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে৷ চিকিৎসক হিসেবে ডা. ইলকার আয়দিন বলেন, ‘‘অনেক মানুষ যে শরীরের বিভিন্ন অংশে ট্যাটু করান, সেই প্রবণতা আমাদের জানা আছে৷ এমনকি অক্ষিগোলকও বাদ যায় না৷ চিকিৎসাবিদ্যার দৃষ্টিভঙ্গিতে শরীরের কোনো অংশে পিয়ার্সিং বা ট্যাটু করার ক্ষেত্রে আপত্তি থাকার কথা নয়৷ শুধু ভালো করে ভেবে দেখতে হবে, সত্যি এমন ইচ্ছা আছে কিনা৷''
ট্যাটু বা পিয়ার্সিং করানোর ঠিক পরে ত্বকে ক্ষত থাকে৷ পুরোপুরি সেরে ওঠা পর্যন্ত ভালো করে চিকিৎসা করানো উচিত৷ এ বিষয়ে পরামর্শ দিতে গিয়ে জিম ক্লার্ক বলেন, ‘‘ভালো করে ট্যাটুর দেখাশোনা করা উচিত৷ শিশুর পরিচর্যার মতো সাবান দিয়ে পরিষ্কার, ট্যাটু ক্রিম লাগাতে হবে৷ তখন শিশুও সর্বদা খুশি থাকবে৷''
পিয়ার্সিং-এর পর কী করা উচিত? ইটালির পিয়ার্সিং শিল্পী জিনো পেরোতো মনে করেন, ‘‘প্রতিদিন জায়গাটি জীবাণুমুক্ত করা উচিত৷ ক্ষতে যথেষ্ট পরিমাণ অ্যান্টিসেপ্টিক স্প্রে করতে হবে৷ সম্ভব হলে আঙুল দিয়ে স্পর্শ না করলেই ভালো৷''
যতদিন না পিয়ার্সিং বা ট্যাটুর ক্ষত সেরে ওঠে, ততদিন স্নান ও খেলাধুলা উচিত নয়৷ তাছাড়া রোদও এড়িয়ে চললে ভালো হয়৷
কিয়র্স্টিন শুমান/এসবি