নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, আওয়ামী লীগ নেত্রী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সমর্থকদের প্রতিবাদ, বিক্ষোভের মাঝেই গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঢাকায় তখন চলছে আগের রাতে শুরু হওয়া আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি পূরণের আন্দোলন। তার আগের দিন চিকিৎসার জন্য বিদেশ চলে যান সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে শুক্রবার সকাল পৌঁনে ৬টার দিকে তার নারায়ণগঞ্জের দেওভোগের বাসা থেকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে মেয়র হলেও সর্বশেষ আওয়ামী লীগে মনোনীত প্রার্থী হিসেবে্ নির্বাচনে অংশ নিয়েই মেয়র হন। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তার বাসভবনের সামনে হাজির হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন সমর্থকরা৷ পুলিশকে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষায় রাখার পর শুক্রবার সকালে বাসস্থান থেকে বেরিয়ে আসেন আইভী৷ তারপর আদালতের মাধ্যমে তাকে কাশিমপুর কাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয় বলে ডয়চে ভেলেকে জানান নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী। তিনি বলেন, "বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে তাকে পুলিশ আটক করতে গেলেও স্থানীয়দের বাধার মুখে পুলিশ ধৈর্য্য ধরে।সব ধরনের সংঘাত এড়িয়ে সকাল পৌনে ৬টার দিকে তাকে তার বাসা থেকে আটক করা হয়।”
তিনি আরো বলেন, "স্থানীয়রা আইভির বাসার বিভিন্ন প্রবেশ পথে বাঁশ দিয়ে শুরুতেই ব্যারিকেড দেয়, কয়েক জায়গায় বালুর বস্তা ফেলে রাস্তা বন্ধ করে দেয়, যাতে আমরা যেতে না পরি। সাধারণ মানুষও সেখানে অবস্থান নেয়। আমরা তো আর তাদের ওপর কোনো বল প্রয়োগ করতে পারি না। এতগুলো মানুষ। এরপর তাদের বুঝিয়ে রাত সাড়ে তিনটার দিকে আমাদের একটি প্রতিনিধি দল তার বাসায় যাই।”
"আমরা বাসায় গেলে তিনি আমাদের সামনে এসে বলেন, এত রাতে আমি বের হবো না, আমি আমার নিরাপত্তার জন্য থ্রেট মনে করছি। তখন আমরা অপেক্ষা করি। এরপর সকালে তিনি নিজেই আমাদের সঙ্গে বের হয়ে আসেন।”
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী জানান, আইভী রহমানের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি মামলা আছে, যারমধ্যে তিনটি হত্যা মামলা। তিনি বলেন, "আমরা তার বাসা তল্লাশি করেছি। বাসায় তিনি ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। আমরা তার বাসায় বেআইনি কিছু পাইনি।”
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও আইভী এতদিন নারায়ণগঞ্জে নিজের বাড়িতেই ছিলেন।
শুক্রবার তাকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তরে নেয়া হয়। সকাল ১১টার দিকে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বাসা থেকে ডিবি অফিসে নেয়ার সময় কিছু মানুষ পুলিশের গাড়ি বহরে হামলা চালায়।
‘সৎ রাজনীতি, সততার কী মূল্যায়ন?'
শুক্রবার বাসা থেকে বের হওয়ার পর আইভী সাংবাদিকদের বলেন, "আমি জানি না আমাকে কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ আমার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে জানিয়েছে প্রশাসন, কিন্তু আমাকে দেখাতে পারেনি। আমি ২১ বছর সকল কিছুর ঊর্ধ্বে থেকে নারায়ণগঞ্জবাসীকে সেবা দিয়েছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলা যদি অপরাধ হয়, তাহলে আমি সেই অপরাধে অপরাধী হতে চাই।''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি কি কোনো জুলুমবাজ? আমি কি হত্যা করেছি? আমি কি চাঁদাবাজি করেছি? নারায়ণগঞ্জ শহরে আমি কোনো দিন কোনো বিরোধী দলকে আঘাত করেছি - এমন রেকর্ড আছে? তাহলে কিসের জন্য, কোন ষড়যন্ত্রের কারণে, কার স্বার্থে আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো? আমিও প্রশাসনের কাছে জানতে চাই। বর্তমান যারা সরকারে আছেন, তারা সাম্যের কথা বলেছেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আপনারা আন্দোলন করেছেন, সরকারকে হটিয়ে নতুন সরকারে এসেছেন-তাহলে কেন এই বৈষম্য? তাহলে সৎ রাজনীতি, সততার কী মূল্যায়ন? আমি তো বাড়িতেই ছিলাম, পালাইনি। তাহলে এভাবে আমাকে গ্রেপ্তার করতে হলো কেন? সেই জবাব জনগণের কাছে চাই, জনগণই দিবে। ইনশাল্লাহ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।''
শেখ হাসিনা সরকারের পতনে পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চলছে ঢালাও মামলা৷ পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা ও হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৪৯৯টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ৫৯৯টি হত্যা মামলা। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তিন মধ্যে অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী।
সরকার এরই মধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে৷ নিষিদ্ধ করার পর থেকে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে নিষিদ্ধ করা হলেও মাঝে মাঝেই বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল করে তারা। সেই মিছিল থেকেও প্রায়ই গ্রেপ্তার হয় তাদের৷