জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আন্দোলনকারীদের মধ্যে হতাশা
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আন্দোলনকারীদের যে প্রত্যাশা ছিলো সেই প্রত্যাশা কতটা পূরণ হয়েছে? নতুন যে বাংর্লাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন তারা, সেই স্বপ্ন কী পূরণ হয়েছে? জানতে দেখুন এই ছবিঘরটি৷
উমামা ফাতেমা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র
‘‘জুলাই আন্দোলনের সময় একটা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিলাম, এ দেশটা স্বাধীন হবে, দেশটা এক ধরনের পরিবর্তন এর মধ্য দিয়ে যাবে৷ আমরা ওই সময় নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন রাজনৈতিক রূপান্তরের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সে রূপান্তরের স্বপ্নটা আমরা এখনো বাস্তবায়িত হতে দেখিনি, আমি আশাবাদী আমাদের যে জনগণ অভ্যুত্থান করেছে সে জনগণ অবশ্যই সংগঠিতভাবে সামনের দিনে পরিবর্তনগুলো আনবে৷’’
অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী
আন্দোলনে প্রত্যাশা ছিল স্বৈরাচারের অবসান, বাকস্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, কিন্তু বাস্তবে পাওয়া গেল স্বজনপ্রীতি, স্বচ্ছতার অভাব এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা৷ আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডও প্রত্যাশাকে ক্ষুণ্ণ করেছে৷ আরেকটা কথা যেটা না বললেই নয় সেটা হলো এখনো পরিস্থিতি উন্নয়নের সুযোগ আছে যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সচেষ্ট হয৷ সেটা করতে হলে সবার আগে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে৷
হাসান রোবায়েত,কবি
একটা ইনসাফভিত্তিক, ভয়ডরহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রত্যাশা ছিল৷ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং আচরণের মধ্যে দিয়েই এসব পূরণ হবে৷ তার কিছু নমুনাও শুরু হয়েছে৷
আদিবা সায়মা খান, শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
অভ্যুত্থানে নারীরা রাজপথে নেমেছিলাম নাগরিক হিসাবে৷ একটি বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্রের জন্য আন্দোলনে নেমেছিল, যেখানে প্রশাসনিক সংস্কার হবে, মেধাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে এবং নিরাপদ রাষ্ট্র হবে৷ কিন্তু আমরা প্রত্যাশার কোন কিছুই তেমন দেখতে পাচ্ছি না৷ জাতীয় নিরাপত্তা নেই৷ নারীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে৷ খুনিদের শাস্তি হয়নি৷ এমনকি ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলাকারীদেরও দৃষ্টান্তমূলক কোন শাস্তি হয়নি৷
ইসরাত জাহান ইমু, শিক্ষার্থী ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জুলাইয়ের ১৭ তারিখ পর্যন্ত কোটার সংস্কার ছাড়া আন্দোলনে অন্য কোনো প্রত্যাশা ছিলো না৷ পরে যখন আমরা আন্দোলন করি তখন আমাদের প্রত্যাশা ছিল আওয়ামী লীগ যে দমন-পীড়নমূলক কাঠামো তৈরি করে গিয়েছে সেটা ভেঙে নতুন ব্যবস্থা তৈরি হবে৷ কিন্তু পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের জায়গা দখল করেছে অন্য শক্তি৷ আমরা ভেবেছিলাম যে নতুন যে রাষ্ট্রীয় কাঠামো তৈরি হবে সেখানে নারীদের নিরাপত্তা বা নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হবে৷
সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি, শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকতের বোন
‘‘জুলাই আন্দোলনে প্রত্যাশা ছিল একটা নতুন বৈষম্যহীন বাংলাদেশ পাব৷ নতুন যে সরকার আসবে সে কোন অন্যায় মেনে নেবে না, একটা বিপ্লবী ভূমিকা পালন করবে কিন্তু দুঃখজনকভাবে সে প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না৷’’
সরদার নাদিম মাহমুদ শুভ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক
আমাদের আকাঙ্খা ছিলো ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পতন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত৷ চাওয়া ছিল রাজনৈতিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা৷ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের দলীয়করণ বন্ধসহ সব প্রতিষ্ঠানকে নিরপেক্ষকরণ ও শিক্ষাব্যবস্থাকে কর্মমুখী করা৷ কিন্তু সত্য যে গণঅভ্যুত্থানের পর এই সরকার জনগণের চাওয়া পূরণ করতে পারেনি৷ তারা আমাদের যে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখিয়েছিল তা প্রায় দিবাস্বপ্ন রয়ে গেছে৷
বেলাল হোসেন, আন্দোলনে আহত
‘‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলাম দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে৷ কিন্তু বাংলাদেশে এখনো ফ্যাসিবাদ রয়ে গেছে৷ আমরা যারা জুলাই আন্দোলনে আহত তাদের জুলাই সনদপত্র এখনো পর্যন্ত দেওয়া হয়নি৷ আগে গাড়ি চালাতাম৷ এখন আমার একটা চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেই কাজ করতে পারি না৷ আগস্টের পরে অনেকেই অনেক আশ্বাস দিয়েছিল তার একটাও বাস্তবায়ন হয় নাই৷’’
ফারহানা শারমিন শুচি, উদ্যোক্তা
‘‘জুলাই আন্দোলনে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিলো অন্যায় ও দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ, বৈষম্যহীন, এবং বিদেশি আধিপত্যবিহীন একটা সমাজ এবং রাষ্ট্র, যেখানে দেশের আপামর জনসাধারণ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে তাদের প্রাপ্য সব মৌলিক অধিকার সমানভাবে ভোগ করবে৷ রাষ্ট্র বিভিন্ন রকম সংস্কার এবং তার সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের সেই অধিকার নিশ্চিত করবে৷ সত্যিকার অর্থে সে প্রত্যাশার কিছুই পূরণ হয়নি৷’’