জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে ঐক্যমতের ডাক
২২ সেপ্টেম্বর ২০০৯একের পর এক নেতা সম্মেলনে তাঁদের বক্তব্যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন৷ সম্মেলন উদ্বোধন করে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেন, ‘‘যেসব কার্বনভিত্তিক গ্যাস জলবায়ু পরিবর্তন ঘটাচ্ছে, তার নির্গমন কমানোর ক্ষমতা প্রয়োগ করে এবং যারা এই বিপর্যয়ের ফলে ইতিমধ্যেই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের সাহায্য করতে আমাদের সব পদক্ষেপ নিতে হবে৷’’
আগামী ৭ থেকে ১৮ই ডিসেম্বর ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে নির্গমন কমানোর ক্ষেত্রে নতুন লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হবে, যে কাঠামো কিয়োটো প্রটোকলের উত্তরসুরি হিসেবে বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে৷ তার আগেই সুস্পষ্ট ঐক্যমত অর্জন করতে জাতিসংঘের এই সম্মেলন আয়োজিত হচ্ছে৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সার্কোজি তার আগে নভেম্বর মাসে আরও এক সম্মেলনের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে খুঁটিনাটি জটিল বিষয়গুলির আগেই নিষ্পত্তি হয়ে যায়৷ নিউ ইয়র্কের সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ‘‘আমরা যদি যথেষ্ট বাস্তববাদী অবস্থান নিয়ে প্রয়োজনীয় নমনীয়তা দেখাই, আমরা যদি অক্লান্ত পরিশ্রম করে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করি, তাহলে আমরা আমাদের সাধারণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবো৷ আমরা এমন এক বিশ্ব গড়ে তুলতে পারবো, যা অনেক বেশী নিরাপদ, অনেক বেশী পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর৷ আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য এমনটাই প্রয়োজন৷’’
কার্বন-ভিত্তিক গ্যাসের নির্গমন কমাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও শিল্পোন্নত বিশ্বকে যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে, সেবিষয়ে কোন সন্দেহ নেই৷ কিন্তু চীন ও ভারতের মত উদীয়মান শক্তিধর দেশগুলির দ্রুত উন্নতির ফলে সেখানেও নির্গমনের মাত্রা বেড়েই চলেছে৷ বাকি বিশ্বের চাপের পাশাপাশি এই দুই দেশকে তাদের নিজেদের স্বার্থেই নির্গমন কমানোর প্রতি মনোযোগ দিতে হবে – এমন সচেতনতা বেড়েই চলেছে৷ চীনের প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও তাঁর ভাষণে তাঁর দেশের পক্ষ থেকে নির্গমন কমানোর অঙ্গীকার করেন৷ এমনকি তিনি এক সুস্পষ্ট লক্ষ্যমাত্রারও উল্লেখ করেন, যার আওতায় চীন ২০২০ সালের মধ্যে নির্গমনের মাত্রা যথেষ্ট কমাতে চায়৷
উপস্থিত নেতাদের কণ্ঠে উৎসাহের সুর শোনা গেলেও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জোসে মানুয়েল বারোসো কিয়োটো চুক্তির উত্তরসূরি কাঠামোর ক্ষেত্রে বিশাল মতপার্থক্যের আশঙ্কা করছেন৷ তাঁর মতে, এমনটা হলে তা এক বিশাল বিপর্যয় বয়ে আনবে৷ শিল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের মধ্যে নির্গমন কমানোর মাত্রা নিয়ে প্রবল দর কষাকষির পর কোনো সুস্পষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা না গেলে সঙ্কটের আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল ফারূক