ছয়দিন ধরে বন্ধ চক্ষু হাসপাতাল: বিপাকে রোগীরা
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের আহতদের সাথে চিকিৎসক, কর্মচারীদের সংঘর্ষের জেরে টানা ছয়দিন ধরে বন্ধ ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল৷ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সারা দেশের অনেক রোগী৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
কর্মবিরতিতে ডাক্তার-নার্সরা
গত বুধবার থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ডাক্তার ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা৷ টানা ছয়দিন স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন হাসপাতালে থাকা এবং নতুন করে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা৷
ফিরে যাচ্ছেন অনেক রোগী
১২ দিন আগে এই হাসপাতালে চোখের চিকিৎসা করিয়েছেন মোহর আলি৷ গত বৃহস্পতিবার তিনি হাপতাপালে এসেছিলেন চোখের সেলাই কাটাতে৷ সেবা বন্ধ থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি৷ সোমবারও মেহের আলিকে হাসপাতালে গেটের সামনে অপেক্ষা করতে দেখা যায়৷ শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যান তিনি৷
প্রতিদিনের অপেক্ষা
নতুন রোগীদের সেবা প্রদান তো হচ্ছেই না, স্বাস্থ্যকর্মীরা হাসপাতালে না আসায় বিপাকে পড়েছেন হাসপাতালে আগে ভর্তি হওয়া রোগীরাও৷ সোমবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আহতদের সাথে আর কিছু সাধারণ রোগী এখনো হাসপাতালে রয়েছেন৷ চিকিৎসা মাঝপথে থাকায় তারা কোথাও যেতে পারছেন না৷ তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ৷ গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসাব্যবস্থার দেখাশোনা করছে জুলাই ফাউন্ডেশন৷
বর্তমানে রোগীর সংখ্যা
ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ২৫০ শয্যার বিশেষায়িত এই হাসপাতালে বর্তমানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী আছেন৷ এছাড়া সাধারণ রোগীআছেন ২৫ থেকে ৩০ জনের মতো৷
ঘটনার সূত্রপাত
বেশ কিছুদিন ধরে উন্নত চিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছিলেন জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের আহতরা৷ গত রোববার আহত চারজন ‘বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা’ করে বলে জানায় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ মঙ্গলবার আবারো কয়েকজন পরিচালকের কক্ষে গিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে৷ আহতদের কয়েকজন গত মঙ্গলবার হাসপাতালের পরিচালককে অবরুদ্ধ করে উন্নত চিকিৎসার দাবি জানালে পরিচালক এক পর্যায়ে কক্ষ ছেড়ে চলে যান৷
হামলা, সংঘর্ষ
এরপর বুধবার সকালে হাসপাতালে আসা সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে এবং পরে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে কর্মচারীদের হাতাহাতি হয়৷ এরপর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) থেকেও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে অন্য আহতদের অনেকে এসে যোগ দিলে মারামারি আরো বড় আকার ধারণ করে৷
নিরাপত্তা বেষ্টনী
বুধবারের ঘটনার পর থেকে হাসপাতালের গেইটে পুলিশ প্রহরা বসানো হয়েছে৷ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন আনসার সদস্যরাও৷ তবে সবধরনের চিকিৎসাসেবা প্রদান বন্ধ রয়েছে৷
তদন্তের দাবি
ঘটনার বিস্তারিত জানতে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত রোগী মো. আব্দুল খালেক৷ তদন্তে যেসব ডাক্তার হামলায় জড়িত বলে জানা যাবে তাদের বাদ দিয়ে নতুন ডাক্তার নিয়ে এ হাসপাতালে কার্যক্রম শুরু করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি৷ চিকিৎসক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা হাসপাতালে না থাকায় এ সম্পর্কে তাদের তরফের বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷
এখনো অনিশ্চয়তা
দেশের বৃহত্তম চক্ষু হাপসপাতালটি কবে চালু হবে তা নিয়ে সংশয় এখনো কাটেনি৷ রোববার হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম দৈনিক সমকালকে বলেন, ‘‘গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, চক্ষুবিজ্ঞান ইনিস্টিউটের সেবা বন্ধ থাকবে৷ রোগীদের অন্য জায়গায় সেবা নিতে বলা হয়েছে৷ তবে হাসপাতাল কবে চালু হবে তা স্পষ্ট করে কিছুই বলা যাচ্ছে না৷’’