চীনা বিনিয়োগে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য বাংলাদেশি পণ্য হিসাবেই বিবেচিত হবে: ড. জাহিদ হোসেন
বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, ট্রাম্পের এই ‘শুল্কযুদ্ধের' মূল উদ্দেশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিশ্বের অন্যান্য দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো। আর তাই শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে সেই হিসাবটিকেই বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আগামী তিন মাসে সেটারই ফয়সালা করতে চাইবেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যেকটি দেশের সঙ্গে তাই আলাদাভাবে ‘ডিল' করতে চাইছে। এখন ইউএসটিআই সেটা কত দিনে পারবে এবং তিন মাসের মধ্যে সেটা ফয়সালা করার মতো জনবল আছে কিনা সেই প্রশ্ন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চিঠি এবং ফোনে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রকে এরইমধ্যে ‘ট্রেড গ্যাপ' কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর। ভিয়েতনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যে শূন্য শুল্কের প্রস্তাব করেছে। আর কম্বোডিয়া মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে। ট্রাম্পকে লেখা চিঠিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, উল্লেখযোগ্য কিছু মার্কিন রপ্তানি পণ্যের শুল্ক ৫০% পর্যন্ত কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে গ্যাস টারবাইন, সেমি-কন্ডাক্টর ও চিকিৎসা সরঞ্জাম। তিনি বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন অ-শুল্ক বাধাও দূর করছে বলে জানান। সেগুলো হলো, পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা, প্যাকেজিং ও লেবেলিংয়ের নিয়ম সরলীকরণ এবং কাস্টমস পদ্ধতি সহজীকরণ।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ ভাগই আসে তৈরি পোশাক থেকে। আর একক দেশ হিসবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। গত বছরে মোট রপ্তানি পোশাকের ১৮ শতাংশ ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই হিসাবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য-ঘাটতির পরিমাণ ৬১৫ কোটি ডলার।
চীনের সাথে আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য-যুদ্ধ শুরু করেছে। বাংলাদেশের যেখানে এখন ১৫ এবং ১০ মিলিয়ে ২৫ শতাংশ শুল্ক, সেখানে চীনের ১২৫ শতাংশ। ১০০ শতাংশ বেশি। আবার চীন মার্কিন পণ্যের ওপর ৮৪ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। চীন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকসহ বিপুল পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে। অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, "এই পরিস্থিতি কতদিন থাকে, তা বলা যায় না। কিন্তু এটা অতি লোভের জন্ম দিতে পারে। চীনে তৈরি পণ্য আমদানি করে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ' ট্যাগ লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির প্রবণতা বাড়তে পারে। এটা অন্য তৃতীয় দেশও করতে পারে। কিন্তু এটা হলে তা হবে ভয়াবহ। কারণ, সেটা ধরা পড়লে আমরা বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারি। তবে চীনের বিনিয়োগ এখানে আসলে সেই সমস্যা নেই। তখন চীনা বিনিয়োগে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য বাংলাদেশি পণ্য হিসাবেই বিবেচিত হবে। তবে সেটার জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে। পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটা দেখতে চাইবে সবাই।”
"তিন মাসে আসলে যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ৭৫টা দেশ যেন শুল্ক নীতির পরিবর্তন করে। তারা আবার প্রত্যেকটা দেশের সঙ্গে আলাদা আলাদা বসতে চায়। তিন মাসে একটা সিদ্ধান্তে তারা যাবে। কিন্তু কীভাবে যাবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। মেক্সিকো এবং ক্যানাডার সাথে বাণিজ্য চুক্তি করতে করতে কয়েক বছর লেগেছে অ্যামেরিকার,” বলে তিনি।
এখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ই বিকল্প খুঁজবে। এটাও আবার বিশ্ব বণিজ্যে নতুন পরিস্থিতি, সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।