চিকিৎসা যন্ত্রপাতির রপ্তানিকারক হতে চায় ভারত
২৫ আগস্ট ২০২৫এই লক্ষ্যে ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে ভারতের প্রথম মেডিকেল ডিভাইস পার্ক ‘অন্ধ্র প্রদেশ মেডটেক জোন' বা এএমটিজি৷
অন্ধ্র প্রদেশের বন্দর শহর বিশাখাপত্তনমে স্থাপিত এএমটিজির প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও জিতেন্দ্র শর্মা বলেন, ‘‘আপনি যদি ভারতের কোনো হাসপাতালে যান তাহলে দেখতে পাবেন, ১০০টির মধ্যে ৯৫টিরও বেশি ওষুধ ভারতে তৈরি৷ কখনও কখনও সেটা শতভাগও হতে পারে৷ কিন্তু চিকিৎসা যন্ত্রপাতির প্রায় ৯৫ শতাংশ আমদানি করা হয়৷''
ভারতের চিকিৎসা ডিভাইস বাজার ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে মনে করা হচ্ছে, যা ২০২২ সালে ছিল মাত্র ১১ বিলিয়ন ডলার৷
এছাড়া চিকিৎসা ডিভাইসের জন্য আমদানির উপর ভারতের নির্ভরতা প্রায় ৩৫ শতাংশ কমবে বলেও আশা করা হচ্ছে৷
যন্ত্রপাতি পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ‘ট্যুভ রাইনলান্ট' এএমটিজির যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করে থাকে৷ ‘‘যেমন মাইক্রো-সিটিতে এক্স-রে ব্যবহার করা হয়৷ তাই যন্ত্র থেকে এক্স-রে বিকিরণ বের হচ্ছে কিনা তা আমাদের পরীক্ষা করতে হয়৷ আমরা ডিভাইসটি তৈরি করেছি৷ কিন্তু এক্স-রে আমাদের পরিবেশ, শরীর এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর৷ তাই আমরা সাবধানে এই ধরণের জিনিস পরীক্ষা করি এবং তারপর সার্টিফিকেট দেই,'' বলে জানান ট্যুভ রাইনলান্টের টেস্ট ইঞ্জিনিয়ার মানস রঞ্জন দাস৷
যখন একটি ডিভাইস প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় তখন এটি আন্তর্জাতিক মানের বলে স্বীকৃতি পায়৷ যন্ত্রটি সার্টিফিকেশন পরীক্ষায় ব্যর্থ হলেও তার মান বাড়ানোর খরচ কম হয়, কারণ, পুরো প্রক্রিয়াটি এএমটিজি পার্কের মধ্যেই করা হয়৷
ট্যুভ রাইনলান্ট এর জেনারেল ম্যানেজার নগেন্দ্র হেব্বার বলেন, ‘‘প্রথমে আমাদের সাধারণ সুরক্ষা মান পরীক্ষা করতে হবে, এরপর যন্ত্র-নির্দিষ্ট মান সুরক্ষা পরীক্ষা, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক উপযোগিতা পরীক্ষা, অ্যাকুস্টিক পরীক্ষা এবং তারপর জৈব উপযোগিতা পরীক্ষা করতে হবে৷ যদি সবকিছু ঠিক থাকে তাহলে যন্ত্রটি ব্যবহারের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়৷''
এএমটিজি বলছে, ভারতে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এসব মেডিকেল যন্ত্র এবং পণ্য উৎপাদন করতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ খরচ কম হয়৷
ভবিষ্যতে ভারত চিকিৎসা প্রযুক্তির আমদানিকারক দেশ থেকে একটি অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারক হয়ে উঠতে চাইছে৷
মেডিকেল যন্ত্রপাতি উৎপাদনে দ্রুত প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও প্রধান নির্বাহী জিতেন্দ্র শর্মা মনে করছেন, মানবসম্পদের মান উন্নয়নের এখনও অনেক সুযোগ আছে৷
জিতেন্দ্র শর্মা বলেন, ‘‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় তত্ত্ব বেশি শেখানো হয়৷ খুব বেশি ব্যবহারিক বিষয় নেই, তাই লেখাপড়াটা আনন্দের হয় না৷ আমাদের, পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়া শেখানো হয়৷ তাই জার্মানির তুলনায় আমাদের বেশি ইঞ্জিনিয়ার থাকলেও মানের দিক থেকে আমরা তাদের থেকে পিছিয়ে আছি৷ কেন? কারণ, ব্যবহারিক পড়াশোনা নেই৷''
সমস্যা সমাধানের জন্য এএমটিজি চিকিৎসা প্রযুক্তির জন্য নিবেদিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে বলে জানান শর্মা৷ এর আওতায় কারখানা প্রাঙ্গণ এবং গবেষণা বিভাগে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে৷
অবিনাশ দ্বিবেদী/জেডএইচ