চাকরিহারা শিক্ষকদের পরীক্ষার প্রস্তুতিও শুরু
২৭ মে ২০২৫ব্রাত্য বসুর অনুপস্থিতিতেই সোমবার শিক্ষাসচিব বিনোদ কুমারের সঙ্গে দেখা করেন পশ্চিমবঙ্গের চাকরিহারা শিক্ষক প্রতিনিধিদল।
শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে সোমবারের মধ্যে তাদের সমস্যার সদুত্তর না পেলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবেন বলে জানিয়েছিলেন চাকরিহারা শিক্ষকরা। সোমবারেও তাদের হতাশা কাটলো না। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর অনুপস্থিতিতেই এদিন কলকাতার বিকাশ ভবনে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাসচিব বিনোদ কুমারের সঙ্গে দেখা করেন চাকরিহারা শিক্ষকদের এক প্রতিনিধিদল। বৈঠকের পরে তারা জানান, এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তরই অধরা।
নতুন বিজ্ঞপ্তির দিকে তাকিয়ে
এই অবস্থায় রাজ্যের সব সাংসকে চিঠি পাঠিয়ে তাদের অবস্থা জানাবেন বলে স্থির করেছেন তারা। তাদের বিষয়টি সংসদে তোলা যায় কিনা তা নিয়ে সর্বদল বৈঠক করার অনুরোধ করেছেন তারা। এদিন শিক্ষাসচিবের সঙ্গে যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের প্রতিনিধিরা আড়াই ঘণ্টা বৈঠক হয়। চাকরিহারা শিক্ষকদের দাবি ছিল নতুন করে পরীক্ষায় বসবেন না তারা।
তবে আগামী ৩১ মের মধ্যে বাতিল প্যানেলের প্রেক্ষিতে নতুন করে এসএসসির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। চাকরিহারা এক শিক্ষক ইলিয়াস বিশ্বাস জানান, আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি তিনি আবার নতুন করে পড়াশুনা শুরু করে দিয়েছেন।
ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, "শোনা যাচ্ছে ৩১ মে আংশিক বিজ্ঞিপ্তি বেরোবে। রাজ্যের রিভিউ পিটিশানে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর সম্পূর্ণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে। সেক্ষেত্রে পরীক্ষায় না বসার একটা সম্ভবনা আছে। কিন্তু তা যদি না হয়। আমরা তো আদালত অবমাননা করতে পারব না। তাই পড়শোনা শুরু করেছি। সব আগের মতো হয় না। পাশ করতে পারব কি না জানি না। চেষ্টা করছি।"
একই সুর আরেক চাকরিহারা অর্পিতা হাজরার গলায়। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, "১০ বছর আগে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। তখন লড়াই করার মানসিকতা ছিল। এতদিন বাদে কী আর সেই মনের জোর থাকে? সংসার বাচ্চা সামলে, ৩৯ বছরে এসে আর পরীক্ষা দেওয়ার মানসিকটা থাকে না। বিশেষ করে আবার যদি একই পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু আদালতের নির্দেশ থাকলি কী করব? পড়াশুনা শুরু করেছি।"
তবে আন্দোলনকারীদের একটা বড় অংশ নতুনও করে পরীক্ষায় বসতে নারাজ। চাকরিহারা শিক্ষিকা বিদিশা মুখোপাধ্যায় বলেন, "নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষায় পাশ করে চাকরি পেলে ৬০ বছর অবধি নিশ্চিন্ত থাকার কথা। সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে আমাদের কেন শাস্তি পেতে হবে? ধরুন আজ যদি আবার পরীক্ষা দিই, সরকার আবার দুর্নীতি করবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাহলে কি আবার পরীক্ষা দেব? একই কাজের জন্য কতবার নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করব?"
তাদের দাবি, তারা সুপ্রিম কোর্টকে বলবেন তাদের প্রতি যেন অন্যায় না করা হয়। বিদিশা বলেন, "আমি তো টাকা দিয়ে চাকরি পাইনি। আমি তো দুর্নীতি করিনি। তাহলে আমিও কেন অযোগ্যদের সমতুল্য শাস্তি পাচ্ছি?"
হতাশ শিক্ষকরা
এর আগে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের করা রিভিউ পিটিশানের বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যকে চিঠি পাঠান চাকরিহারারা। আদালতে রিভিউ পিটিশান নাকচ করলে তাঁদের ভবিষ্যৎ কী হবে সেই নিয়েও আলোচনা করতে চান তারা। রোববার ব্রাত্য 'যোগ্য' চাকরিহারা শিক্ষকদের সমস্যা আলোচনার ব্যাপারে উৎসাহ দেখান। বৈঠকে সরকারের তরফ থেকে আধিকারিকদের থাকার আশ্বাস দেন তিনি। তিনি স্বয়ং বৈঠকে না থাকায় আশাহত অনেকেই।
চাকরিহারা এক শিক্ষক অমিতরঞ্জন ভুঁইয়া সংবাদ মাধ্যমকে জানান, "আমরা ভেবেছিলাম শিক্ষামন্ত্রী বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। আমাদের যা প্রশ্ন তার উত্তর একমাত্র তিনিই দিতে পারেন বলে আমরা মনে করি।"