চাকরি দুর্নীতি : যোগ্যদের পাশাপাশি অযোগ্যদেরও পাশে থাকতে চেয়ে তোপের মুখে মমতা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, যোগ্যদের চাকরির বিষয়টির ফয়সালা করে অযোগ্যদের বিষয়টিও দেখবেন। কিন্তু ‘স্বেচ্ছাশ্রম’ মানতে নারাজ যোগ্যরা৷ অযোগ্যদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েও তোপের মুখে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী...
সময় চাইলো এসএসসি
সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছিল, যেহেতু যোগ্য ও অযোগ্যর মধ্যে পার্থক্য করা যাচ্ছে না, তাই প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল হবে। এসএসসি সুপ্রিম কোর্টে করা আবেদনে বলেছে, চলতি শিক্ষাবর্ষের শেষপর্যন্ত যোগ্যদের চাকরি করতে দেয়া হোক। এর জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিক।
মমতা যা বললেন
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে চাকরিহারাদের একাংশকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ''কারো চাকরি যাবে না। আগে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের ব্যাখ্য়া চাইবে। সুপ্রিম কোর্টের নেতিবাচক উত্তর হলে সরকার যোগ্যদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিকল্প ব্যবস্থা করে দেবে। দুই মাসের মধ্যে বিকল্প ব্যবস্থা করে দেবো।''
স্বেচ্ছাশ্রমের প্রস্তাব
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আপনারা কি এখনো বরখাস্তের নোটিস পেয়েছেন? (না পেয়ে থাকলে) চাকরি করুন না! স্বেচ্ছায় তো সকলেই কাজ করতে পারেন।’’ তিনি আরো বলেন, ''আপনাদের সরকার বরখাস্ত করেনি। আপনারা স্কুলে যান। কাজ করুন।'' কিন্তু স্বেচ্ছায় কাজ করলে বেতন পাওয়া যাবে কিনা, স্বেচ্ছায় কাজ করলে চুক্তিবদ্ধ শিক্ষকদের মতো অল্প বেতন দেয়া হবে কিনা, সে বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী কিছু বলেননি।
প্রতিবাদ
মুখ্যমন্ত্রীর স্বেচ্ছাশ্রমের বিষয়টি উপস্থিত চাকরিহারা শিক্ষকরা মেনে নিতে পারেননি। তাদের অনেকেই বলতে থাকেন, এভাবে হয় না, স্বেচ্ছাশ্রম বিষয়টির ব্যাখ্যা চাই। তবে তারা স্কুলে ফিরতে চান। তারা বলেন, বেতনসহ চাকরি রাখা হলে তারা স্কুলে ফিরবেন। তবে তারা চুক্তিভিত্তিক চাকরি করতে চান না।
অযোগ্যদের চাকরির প্রসঙ্গে মমতা
এ বিষয়ে মমতা বলেন, ''অযোগ্যদের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ পরীক্ষা করবো। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে আমার কিছু বলার থাকবে না। কিন্তু অযোগ্য কাকে বলেছে, কেন বলেছে, কোন এজেন্সি বলেছে- সে সব দেখবো। নিশ্চিন্তে থাকুন। যোগ্য এবং অযোগ্যদের মধ্যে গন্ডগোল বাঁধাবেন না। মানুষকে শিক্ষা দিন। শিক্ষিত করুন। কারা যোগ্য, কারা অযোগ্য তা আদালত বলেনি। ২০২২ থেকে খেলা শুরু করেছে। আমি জেনে-শুনে কারো চাকরি খাইনি।''
অযোগ্যদের নিয়ে বক্তব্যের প্রতিবাদ
অযোগ্যদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এই কথার প্রতিবাদ করেন সভায় উপস্থিত চাকরি হারানো শিক্ষকরা। তারা বলেন, অযোগ্যদের চাকরি দেয়া যাবে না। তাদের প্রশ্ন- যোগ্যদের তালিকা তিনি কি সুপ্রিম কোর্টে দেবেন? সুপ্রিম কোর্ট তো তালিকা দেবে না। দেবে এসএসসি। সিবিআই রিপোর্ট মানলে যোগ্য ও অযোগ্যদের তো আগেই আলাদা করা যেতো।
চাকরিহারাদের দাবি
চাকরিহারা শিক্ষকদের অনেকেই বলেছেন, রাজ্য সরকার ও এসএসসির জন্য এখন তাদের এই অবস্থা। তারা যোগ্য ও অযোগ্য আলাদা করেনি। চাকরি হারানো যোগ্য শিক্ষকরা মনে করেন, মুখ্যমন্ত্রী সব গোলমাল পাকিয়েছেন।
বিকাশ ভট্টাচার্য বনাম মমতা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ''সিপিএমের কাছে প্রশ্ন করছি, কেন বিকাশ ভট্টাচার্য সব চাকরি বাতিল করালেন? তাকে আইসোলেট করুন।'' এর জবাবে বিকাশ ভট্টাচার্য বলেছেন, ''তিনি দুর্নীতি করেছেন। সকলে পেটাবে। মারের হাত থেকে বাঁচতে এসব বলছেন। তিনি বারবার যোগ্য অযোগ্য বলছেন। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে তো বললেন না। রায়ের পর লম্ফঝম্প করছেন।''
বিরোধী নেতার বক্তব্য
রাজ্যের বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ''সরকারের কাছে সুযোগ আছে চাকরি দেয়ার। সরকার রিভিশন পিটিশন করেছে। সরকার যোগ্যদের তালিকাটা ফেলে দিন। তাহলে দুধ ও জল আলাদা হবে। কোনো বিতর্ক থাকবে না। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, সরকার ও এসএসসির অসহযোগিতার জন্য যোগ্য ও অযোগ্য বাছতে পারলাম না। তিনি (মমতা) যদি বলেন, সবাইকে চাকরি দিলাম ১০ হাজার টাকা করে দেবো. সেটা মানবো না।''
নবান্নর কাছে বিক্ষোভ
চাকরি না পাওয়া শিক্ষকদের একাংশ নবান্নর কাছে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। তাদের দাবি, যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তারা কেন চাকরি পাবেন না তাদের বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ৷
সারা রাত চাকরিহারা শিক্ষকদের অপেক্ষা
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যাবেন বলে কলকাতার বাইরে থেকে আসা শিক্ষকরা সারা রাত শহিদ মিনারের পাশে মাঠে ছিলেন। ‘যোগ্য’ লেখা কার্ড সংগ্রহ করে সকালে নেতাজি ইন্ডোরে যান তারা।
ঢোকার সময় ঝামেলা
‘যোগ্য’ কার্ড না পাওয়ায় অনেক শিক্ষকই ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ঢুকতে পারেননি। জোর করে ঢুকতে চাওয়ায় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও হয় তাদের।